
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এই আইন অনুযায়ী রাজ্যের আদিবাসী বা জনজাতি ছাড়া হিন্দু, মুসলিম, শিখ ও খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। বিয়ে, বিবাহ বিচ্ছেদ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার ও দত্তক নেয়া সংক্রান্ত বিষয়ে এই আইন মেনে চলতে হবে। অভিন্ন দেওয়ানি আইনে বলা হয়েছে, কেউ একাধিক বিয়ে করতে পারবে না। বহুবিবাহ আইনত অপরাধ বলে গণ্য হবে। বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে সকলের জন্য একটাই আইনি পদ্ধতি থাকবে। তালাক, হালালা ও ইদ্দতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আইনে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ের লিভ ইনকে (বিয়ে ছাড়া ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে থাকা) স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তবে লিভ ইন সম্পর্কে থাকলে তা সরকারের কাছে নথিভুক্ত হতে হবে। শুধু উত্তরাখণ্ডের ক্ষেত্রেই নয়, রাজ্যের কেউ যদি অন্য রাজ্যে গিয়ে লিভ ইন করতে চান, তাহলেও তাকে সম্পর্ক নথিভুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে নির্দেশিকা মেনে সম্পর্ক স্বীকৃতি দেয়া হবে।
লিভ ইনের ফলে যে সন্তান জন্ম নেবে, তাকেও বৈধ সন্তান হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হবে। সেই সন্তান পরিবারের সম্পত্তির উত্তরাধিকার পাবে। আরও বলা হয়েছে, যে কোনো ধর্মীয় বিধি মেনে বিয়ে হতে পারে। কিন্তু প্রতিটি বিয়ে ৬০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রি করতে হবে। বিয়ের সময় ছেলের বয়স ২১ বছর ও মেয়ের বয়স ১৮ বছর হতেই হবে। বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের আবেদন পাওয়ার পর সাব-রেজিস্টার ১৫ দিনের মধ্যে মতামত জানাবেন। তিনি কিছু না জানালে আবেদনটি সরাসরি রেজিস্টারের কাছে চলে যাবে।
উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি থেকে জনজাতিদের বাদ দেয়ার কারণ আংশিকভাবে তাদের প্রতিবাদের কারণে এবং আংশিকভাবে জনজাতিদের আইনগত অবস্থানের কারণে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জনজাতি অধিকার রক্ষাকর্মী কমলেশ ভাট সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘জনজাতিদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মধ্যে বিভিন্নতা আছে। জনজাতিদের এই ঐতিহ্য রক্ষা করাটা জরুরি এবং সংবিধানেও তা স্বীকৃত। আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ মূলধারার সঙ্গে মিশে যেতে চান। আবার আমার মতো অনেক মানুষ আছেন, যারা আলাদা অস্তিত্ব বজায় রাখতে চান। তাই সরকার আমাদের দাবি মেনে নিয়েছে।’
উত্তরাখণ্ডের সাবেক মুখ্যসচিব এন এস নাপাইচায়াল বলেছেন, ‘জনজাতিদের ঐতিহ্য রক্ষা করতে না পারলে তা বিলুপ্ত হবে। তাই সেটা করা দরকার। কিন্তু অন্যরা জনজাতিদের মতো এই সুবিধা দাবি করতে পারে না।’উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামি বলছেন, ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর ফলে বৈষম্য দূর হবে। লিঙ্গ, জাতি, ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য করা হবে না।’ কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা এই আইনের সমালোচনা করেছেন।
সমাজবাদী পার্টির মুসলিম রাজনীতিক এবং উত্তরপ্রদেশের রামপুরের সাংসদ মহিবুল্লাহ নদভি বলেছেন, ‘স্বাধীনতার পর ঠিক হয়, আমরা সংবিধান মেনে চলব। কিন্তু কিছু মানুষ জনতাকে বিপথগামী করছে। তারা এটাই দেখানোর চেষ্টা করছে যে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি হলে মানুষের ভালো হবে। ওরা পুলিশ রাষ্টের দিকে যেতে চাইছে। ওরা পিছিয়ে থাকা মানুষ, দলিত, সংখ্যালঘুদের অধিকার শেষ করতে চাইছে। উত্তরপ্রদেশেও এটাই চলছে। কিছু মানুষ দেশের লোকের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে চাইছে।’
কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক সিংভি বলেছেন, ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কোনো রাজ্য-ভিত্তিক হতে পারে না। এটাকে বলা যেতে পারে পাইলট প্রজেক্ট। ওরা সারা দেশে এই বিধি চালু করতে চায়। কিন্তু এই বিষয়ে মতৌক্য নেই। তাই একটা রাজ্যে একটা পাইলট প্রজেক্ট করা হল।
কংগ্রেস নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও আইনজীবী সালমান খুরশিদ বলেছেন, ‘দরকার হলে আমরা ওই আইনকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করব। তার আগে আমরা বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করব। সোমবারই এই আইন উত্তরাখণ্ডে চালু হল। আমরা দেখতে চাই, কেমনভাবে তা রূপায়িত হয়। আমার উত্তরাখণ্ডে একটা বাড়ি আছেো তাহলে কি আমাকে উত্তরাখণ্ডের মানুষ বলে ধরা হবে?’এআইএমআইএম-এর মুখপাত্র ওয়ারিস পাঠান বলেছেন, ‘এটা কী ধরনের অভিন্ন দেওয়ানি বিধি? ওরা হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, হিন্দু বিবাহ আইনকে রূপায়ণ করছে, কিন্তু তার থেকে জনজাতিদের বাদ দিচ্ছে। তাহলে এটা কী করে অভিন্ন হতে পারে?’
আরজেডি নেতা মনোজ ঝা বলেছেন, ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে বিজেপি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। এর মধ্যে অভিন্নতা, দেওয়ানি বা বিধি কিছুই নেই। দেশের বিবিধতার কথা মাথায় রেখে স্বাধীনতার পর ঠিক হয়, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্য বজায় রাখাটাই হবে প্রথম কাজ। আমি বারবার বলেছি, এই বিষয়ে যাওয়ার আগে সরকার আগে মানুষের মধ্যে আয়ের অসঙ্গতির দিকে নজর দিক। অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মতো নীতি নিয়ে কিছু হাততালি হবে, কিছু ভোট বাড়বে, কিন্তু একদিন তা সরকারের উপর বোঝা হয়ে যাবে।’
তথ্যসূত্র: ডয়েচে ভেলে
কিউটিভি/আয়শা/২৭ জানুয়ারী ২০২৫,/রাত ৮:০০