
ডেস্ক নিউজ : নটিংহ্যামের শেরউড জঙ্গলে বাস করতেন দুর্ধর্ষ রবিনহুড। ইংল্যান্ডের লোককাহিনীর এই নায়ক ধনীদের সম্পদ লুট করে তা গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। প্রিমিয়ার লিগে নটিংহ্যাম ফরেস্টও বড় ক্লাবগুলোর পয়েন্ট ছিনিয়ে নিচ্ছে প্রতিদিন। তবে পার্থক্য হচ্ছে, সেই পয়েন্টগুলো ছোট ক্লাবকে আবার বিলিয়ে দিচ্ছে না। ফলে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে শিরোপার দৌড়ে অবতীর্ণ হয়েছে ক্লাবটি।
মারিনাকিস যুগ: ২০১৭ সালে নটিংহ্যাম ফরেস্টকে কুয়েতি মালিক আল হাসাউয়ির কাছ থেকে কিনে নেন গ্রিক ধনকুবের এভাঞ্জেলোস মারিনাকিস। লাবের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান নিকোলাস রান্ডাল। মারিনাকিস আর রান্ডাল ক্লাবটির সমর্থকদের উদ্দেশ্যে জানিয়েছিলেন, তারা পাঁচ বছরের মধ্যে নটিংহ্যাম ফরেস্টকে ইউরোপিয়ান ফুটবলে ফিরিয়ে আনতে চান।
তবে সে সময় ইংলিশ ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপে খেলা ক্লাবটিকে ঘিরে তারা যে পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন তা ব্যর্থ হওয়ায় লক্ষ্য পূরণে পিছিয়ে পড়ে তারা। মারিনাকিস আমলের প্রথম চার বছরে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতা তো দূরের কথা ইংলিশ ফুটবলের শীর্ষ স্তর প্রিমিয়ার লিগেই জায়গা করে নিতে পারেনি নটিংহ্যাম ফরেস্ট।
অবশেষে ২০২১-২২ চ্যাম্পিয়নশিপ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের প্লে-অফে জায়গা করে নিতে পারে ফরেস্ট। প্লে-অফের ফাইনাল জিতে পরের মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে খেলার টিকিট পায় তারা, ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমের পর ফের প্রিমিয়ার লিগে জায়গা করে নেয় নটিংহ্যাম ফরেস্ট।

নুনো এসপিরিতো সান্তো যুগ: প্রিমিয়ার লিগে জায়গা করে নিয়ে একের পর এক খেলোয়াড় কিনে রীতিমতো হাস্যরসের কারণ হয়েছিল ক্লাবটি। মোট ২১ জন খেলোয়াড়কে কেনে তারা। কিন্তু প্রথম মৌসুমে প্রত্যাশামতো ফল না আসায় চাকরি হারান কোচ স্টিভেন কুপার। নতুন কোচ হন সদ্যই সৌদি ক্লাব আল ইত্তিহাদের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া পর্তুগিজ কোচ নুনো এসপিরিতো সান্তো।প্রথম দুই মৌসুমেই কোনোমতে প্রিমিয়ার লিগে টিকে থাকে নটিংহ্যাম। ২০২২-২৩ মৌসমে ১৬তম এবং পরের মৌসুমে ১৭তম হয় তারা।
প্রিমিয়ার লিগে এর আগে উলভারহ্যাম্পটন এবং টটেনহ্যামের মতো ক্লাবকে কোচিং করিয়েছেন সান্তো। উলভারহ্যাম্পটনে তো রীতিমতো পর্তুগিজ কলোনিও খুলে বসেছিলেন। কিছু সাফল্যও পেয়েছিলেন তিনি। তবে চলতি মৌসুমে নটিংহ্যাম তার অধীনে যা করে দেখাচ্ছে তা রূপকথাই বলতে হয়।
তারকা: মর্গান গিবস-হোয়াইট, মুরিলো, নিকোলা মিলেনকোভিচ, এলিয়ট অ্যান্ডারসন, অ্যান্তনি এলেঙ্গা, ক্রিস উডরা সান্তোর কৌশলে দারুণ পারফরম্যান্স উপহার দিচ্ছেন।

ক্রিস উড: নিউজিল্যান্ডের স্ট্রাইকার ক্রিস উড এই মৌসুমে ফরেস্টের উত্থানের অন্যতম নায়ক। লিগে ১২ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে আছেন ৩৩ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার। ২০২৩ সালে ক্লাবটিতে যোগ দেয়া উড এই মৌসুমে ফক্স ইন দ্য বক্সের ভূমিকায় দারুণ করছেন। সুযোগ সন্ধানী এই স্ট্রাইকার সতীর্থদের বানিয়ে দেয়া সুযোগ খুব একটা নষ্ট করেননি।

সঙ্গী মিলেনকোভিচও এই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা সেন্টারব্যাক। এছাড়া দলের অধিনায়ক মর্গান গিবস-হোয়াইট, তরুণ এলিয়ট অ্যান্ডারসন, অ্যান্তনি এলেঙ্গারাও ফরেস্টের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। চলতি মৌসুমের বাকি অংশে চলমান ফর্ম ধরে রাখতে পারলে আগামী মৌসুমে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নেয়াটা ১৯৭৮-৭৯ এবং ১৯৭৯-৮০ মৌসুমে ইউরোপিয়ান কাপ (চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) জেতা ফরেস্টের জন্য সময়ের ব্যাপার।
কিউটিভি/আয়শা/০৭ জানুয়ারী ২০২৫,/রাত ৯:০০