
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চলতি বছর সাহিত্যে নোবেল জয়ী দক্ষিণ কোরীয় নাগরিক হান ক্যাং বলেছেন, প্রেসিডেন্টের সংক্ষিপ্ত সামরিক শাসন জারির পর তার দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে তিনি গভীরভাবে ‘বিস্মিত।’
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) স্টকহোমে চলতি বছরের পুরস্কার বিতরণের জমকালো অনুষ্ঠান আয়োজনস্থল থেকে এই কথা বলেছেন হান। তিনি নিজেও এই অনুষ্ঠান থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
তিনি বলেছেন, ‘অনেক কোরীয় নাগরিকের মতো, আমিও গভীরভাবে মর্মাহত। তিনি বলেন,আমি আমার দৃষ্টি সার্বক্ষণিকভাবে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের দিকে নিবন্ধ করে রেখেছি।’
গত মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণকালে অনেকটা আকস্মিকভাবে দেশে সামরিক শাসন জারির ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তখনও সেনাবাহিনী ও হেলিকপ্টার প্রস্তুত ছিল না।
ইউন সুক ইওল বেসামরিক শাসন স্থগিত করে সংসদ সদস্যদের তার জারি করা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ভোটাভুটি থেকে বিরত থাকার ফরমান জারি করেন। কিন্তু তার সামরিক শাসন জারির মুহূর্তের মধ্যে পার্লামেন্ট সদস্যরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। দেশের আপামর জনসাধারণও এসে পার্লামেন্ট ভবন ঘিরে রাখে। ঠিক সেই মুহূর্তে সেনাবাহিনীর ২৮০ জন সদস্য এসে পার্লামেন্ট ভবনের প্রবেশ মুখে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। সংসদ সদস্যরা ব্যারিকেড ভেঙে পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করে স্পিকারের নেতৃত্বে ভোটাভুটির আয়োজন করে। পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সংখ্যাগরিষ্টতা থাকায় সামরিক শাসনের বিপক্ষে বেশি ভোট পড়ায় স্পিকার সামরিক শাসন রহিত করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিক শাসন বাতিল ঘোষণা করা হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে ৩০০ আসনের মথ্যে উত্তর কোরীয় পন্থী ডেমোক্র্যাটি পাটির জোটগত সদস্য সংখ্যা ১৯০ জন। দলটির সদস্য সংখ্যা ১৭০ জন। সরকারি পপুলার পার্টির সদস্য সংখ্যা মাত্র ১০৮ জন।
হান বলেছেন, ১৯৭৯-‘৮০ সালে অভ্যুত্থানের মাধমে সামরিক শাসন জারির পর তিনি সেই সময়কার সামরিক শাসনের পরিস্থিতি নিয়ে পর্যাপ্ত পড়ালেখা করেছেন। এমনকি সেই সময়ের মানব সৃষ্ট কর্মকাণ্ডের ওপরও প্রচুর সময় ব্যয় করেছেন।
হান বলেছেন, এখন আমার পরম সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে নিজ চোখে ২০২৪ সালের সামরিক শাসন প্রত্যক্ষ করার।
নোবেল জয়ী হান ১৯৮০ সালে দুই দফা সফল অভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় গোয়াংঝু শহরে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন , সামরিক শাসন জারির পর সেনা সদস্যদের অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীডন ও গণতন্ত্র বিঘ্নিত হওয়ার প্রতিবাদে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলনে ও ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ।
তিনি দেখেছেন কীভাবে ছত্রী সেনারা প্যারাসুটের মাধ্যমে আকাশ থেকে নেমে বিক্ষোভকারীদের ওপর ছুরিকাঘাত, নির্বিচারে বিক্ষুদ্ধ জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে হাজার হাজার লোককে হত্যা করেছিল।
ছোট গল্পকার ও নোবেল জয়ী হান তার ‘দ্য ভেজিটারিয়ান’ বইটির জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এই বইটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘ম্যান বুকার-২০১৬’ সালে পুরস্কার জয়ের মাধ্যমে তাকে সফলতা এনে দিয়েছে।
সূত্র : রয়টার্স।
কিউটিভি/অনিমা/০৭ ডিসেম্বর ২০২৪,/দুপুর ১২:০২