বগুড়ার শেরপুরে শ্লীলতাহানির মূল্য ৮০ হাজার ॥ দালালদের পকেটে ৩৫ হাজার!

Ayesha Siddika | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ - ০৪:৪৬:১০ পিএম

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : শ্লীলতাহানির ঘটনায় আকবর আলী নামে এক জনকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই জরিমানার সম্পূর্ণ অর্থ ভুক্তভোগীকে না দিয়ে অর্ধেক টাকা বিএনপি নেতারা নিজেরাই পকেটেস্থ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আলোচিত ঘটনাটি বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড এর উত্তরশাহাপাড়া এলাকায়। গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে বিচার শালিসের বৈঠক অর্থ জরিমানার মাধ্যমে মিমাংসা হয়। এ নিয়ে এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, শেরপুর পৌরসভার ০৪নং ওয়ার্ডের উত্তর সাহাপাড়া এলাকার রাশেদা (ছদ্দনাম) স্বামী পরিত্যাক্তা একজন অসহায় মহিলা। মায়ের সাথে তার বাড়িতে সন্তান সহ থাকে। আকবর দীর্ঘদিন থেকে তাকে বিভিন্ন ভাবে উত্ত্যাক্ত ও কু প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। কিছুদিন পূর্বে পপির বাড়িতে ঢুকে জোরপূর্বক শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। এরপর বিভিন্ন প্রকার লোভ দেখিয়ে অনৈতিক সুযোগ নেওয়া সহ কু-মতলব চরিতার্থ করার চেষ্টা করে।

এতে রাজি না হওয়ায় তার সম্পর্কে বিভিন্ন খারাপ কথা তাহার বন্ধু বান্ধব সহ এলাকার লোকজন কে বলে বেড়ায়। এক পর্যায়ে গত ৩১ আগষ্ট রাশেদা (ছদ্দনাম) খাতুন নানীর বাড়ি যাওয়ার পথে একা পেয়ে রাস্তার মধ্যে জড়িয়ে ধরে ওড়না কেড়ে নেয় এবং শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়। রাশেদার (ছদ্দনাম) চিৎকারে এলাকার লোকজন এগিয়ে আসলে সে চলে যায়। পরে ভুক্তভোগী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।

পরবর্তীতে গত ৭ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রব্বানী, সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুল লতিফ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার জহির, সহ সম্পাদক কালু ও কাউন্সিলর সোহাগ সহ অনেকে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসার জন্য শালীশী বৈঠকের মাধ্যমে আকবরকে কে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ৯ সেপ্টেম্বর রাতে সেই অর্থ লেনদেন করা হয় বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আকবর বলেন, আমি একজন শ্রমিক। এলকায় আমার কোন আত্মীয়স্বজন না থাকায় মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রভাব খাটিয়ে আমার থেকে অন্যায়ভাবে ৮০ হাজার টাকা দাবি করে। আমি মান সম্মানের ভয়ে টাকা দিতে বাধ্য হই। ভুক্তভোগী রাশেদা (ছদ্দনাম) খাতুন বলেন, ‘আমরা গরীব, তাই শ্লীলতাহানী চেষ্টার সত্যতা পাওয়ার পরেও দোষী আকবর আলী কে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এমনকি সেই টাকা সম্পূর্ণ আমাদেরকে দেওয়া হয়নি। আমাকে ৪৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে এবং জরিমানার বাকি ৩৫ হাজার টাকা রব্বানী, লতিফ, কালু, সোহাগ সহ অনেকেই ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রব্বানী জানান, আপনি সাংবাদিক তো কি? আপনার কাছে কি দুজনের কেউ অভিযোগ করেছে যে আপনি জানতে চাইছেন? এক পর্যায়ে তিনি জানান ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ দিয়েছিলে পরে এস আই শাহ আলম ও কাউন্সির সোহাগ বিষয়টি মিমাংসা করে দিয়েছে বলে জানতে পারি। এ বিষয়ে ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার জহির জানান, কাউন্সিলর সোহাগ এর মাধ্যমে মিমাংসা বৈটক হয়েছে তবে অর্থ-লেনদেনের বিষয়টি তার জানা নেই।

এ বিষয়ে পৌর বিএনপির ৪নং ওয়ার্ডের সিনিয়র সহ-সভাপতি লতিফ জানান, শ্লীনতাহানীর ঘটনা আপস মিমাংসার জন্য কাউন্সিলর সোহাগ এর কার্যালয়ে বসলে সেখানে টাকা লেনদেন এর বিষয় নিয়ে মতের পার্থক্য থাকায় তিনি সেখান থেকে চলে যান। পরবর্তীতে জানতে পারেন ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রব্বানীর বাসায় অর্থ লেনদেন করা হয়। এ বিষয়ে ওয়ার্ড বিএনপির জয়েন সেক্রেটারী কালুর সাথে যোগাগের চেষ্টা করা হলেও তাকে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

কাউন্সির সোহাগ জানান, ভুক্তভোগীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২জন ডেকে ভূল বোঝাবুঝি মিমাংসা করে দেয়া হয়। এ ঘটনায় কোন অর্থনৈতিক লেনদেন হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে শেরপুর থানার এস আই শাহআলম জানান, ভুক্তভোগী অভিযোগ দিয়েছিল পরবর্তীতে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রব্বানী সহ এলকার অনেকে অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে মিমাংসার কথা বল্লে আমি আইনের মাধ্যমে মিমাংসার কথা বলি। পরবর্তীতে তারা আমাকে না জানিয়ে এলাকায় স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করেছে বলে জানতে পারি।

এ ব্যাপারে ব্যাপারে পৌর বিএনপির সভাপতি স্বাধীন কুমার কুন্ডুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিএনপি জনগনের সেবা করার জন্য নেতাকর্মীদের দ্বায়িত্ব দেয় সেবা নেয়ার জন্য নয়। তবে এ ধরনের ঘটনা সত্যি প্রমানিত হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল বিএনপির দলীয় সিন্ধান্ত মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

 

কিউটিভি/আয়শা/১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪,/বিকাল ৪:৪৪

▎সর্বশেষ

ad