ব্রেকিং নিউজ
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপিকে নিয়ে পাহাড়সম অভিযোগঃ ১০ মাসেও হয়নি কাউন্সিল সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : শিক্ষক,লেখক-সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতিম্যান একজনের বিদায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে উপকৃত হবেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক- ভিসি ড.আমানুল্লাহ ফেরদৌস বাজে ব্যাটিংয়ে ফাইনাল মিস বাংলাদেশের জনস হপকিন্সের সাথে কাজ করবে বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  মজিদা কলেজে ৪০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ, তোলপাড় কুড়িগ্রাম খারুয়ার পাড়ে ভাঙ্গনের শব্দ থেমে যাক — বদরুদ্দীন উমর : শিরদাঁড়া বাঁকা করে বাঁকা হয়নি যার কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহবায়ক ভারতীয় নাগরিক, এনআইডি বাতিলে হাইকোর্টের রুল আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে সন্ত্রাসী হামলা : এইচআর হেডসহ আহত ১৫

মদিনার সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহ

Ayesha Siddika | আপডেট: ২৮ মে ২০২৪ - ০১:২৫:০৬ পিএম

ডেস্ক নিউজ : মুসলমানদের কাছে এটি দ্বিতীয় পবিত্রতম শহর। মক্কার পরেই পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র জায়গা হিসেবে মদিনা শহরকে সম্মানিত করা হয়েছে। মদিনা শহরের প্রাতিষ্ঠানিক নাম ‘আল মদিনা আল মুনাওয়ারাহ’ যার বাংলা অর্থ আলোর শহর। নবীর নামেও চিনে মানুষ। ইসলামের প্রথম রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু হয় এ শহর থেকেই। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের পূর্বে এ শহরের নাম ছিল ইয়াসরিব। মদিনা শহরের মোট আয়তন ৪৪৫.৫ কিলোমিটার বা ২২৭ বর্গমাইল।  প্রাণের নবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর রওজা মোবারক মদিনা শহরে অবস্থিত। প্রতিদিন হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলিম মদিনা শহরে আসে নবীজির রওজা মোবারক পরিদর্শন করতে।

মসজিদে নববি
 

পৃথিবীতে মসজিদুল হারাম এর পরেই মসজিদে নববীর স্থান। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মসজিদটি নির্মাণ করেছেন। নিজেও এর নির্মাণ কাজে অংশগ্রহণ করেছেন। নবীজির মদিনায় হিজরতের পর এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

রসুল সা. এর কবর জিয়ারত করার উদ্দেশ্যেই সকল হাজিরা মসজিদে নববিতে এসে উপস্থিত হোন। মসজিদের সবুজ গম্বুজ বিশিষ্ট কক্ষে মহানবি হযরত মুহাম্মদ সা. হযরত ওমর (রা.) ও হযরত আবু বকর (রা.) এর রওজা মোবারক অবস্থিত। সবুজ গম্বুজ বিশিষ্ট এই কক্ষটি হযরত আয়িশা (রা.)-এর ঘর ছিল। মুসল্লিরা সাধারনত হজ্জের শুরুতে বা শেষে মসজিদে নববী-তে এসে অবস্থান করেন।
 

জান্নাতুল বাকি

মদিনা শহরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক কবর স্থান জান্নাতুল বাকি। এই কবরস্থান এর আরবি নাম মাকবারাতুল বাকি বা বাকিউল গারকাদ। এখানে মহানবি হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী, কন্যা আত্মীয় স্বজনসহ অনেক সাহাবির কবর রয়েছে। হাজিগণ মসজিদে নববি অবস্থানকালে জান্নাতুল বাকি তে গিয়ে ইসলামের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কবর জিয়ারত করে আসেন। আগে জান্নাতুল বাকির প্রতিটি কবরের ওপর বিশেষ স্থাপনা ছিল। কিন্তু সৌদ বংশ ক্ষমতাতে আসার পরে এই স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলা হয়।
 

আল গামামাহ মসজিদ
 

আল গামামাহ মসজিদ মহানবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্মৃতি বিজড়িত মদিনার প্রাচীন ঐতিহ্য সম্বলিত মসজিদ। খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজের রাজত্বকালে ৮৬ থেকে ৯৩ হিজরি মধ্যে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৬৩১ সালে এই মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেছিলেন৷ পূর্বে এই মসজিদে নামাজ আদায় বন্ধ ছিল, তবে এখন মসজিদটিকে পুনরায় সকল মুসুল্লিদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। মদিনার প্রাচীন নিদর্শনসমূহের মধ্যে আল গামামাহ মসজিদ বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
 

মসজিদে কুবা

 

মাসজিদে কুবা ইসলামের সর্বপ্রথম মসজিদ। মদিনার কুবা নামক গ্রামে এই মসজিদটি অবস্থিত। সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে মসজিদে কুবার অবস্থান চতুর্থ। মক্কার মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদে নববী এবং জেরুজালেমের মসজিদে আকসার পরেই মসজিদে কুবার অবস্থান।
মহানবি হযরত মুহাম্মদ সা. এর মদিনা হিজরতের পর এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদটির ভীত প্রস্তুত হয়েছিল মহানবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত ধরেই। মহানবি হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশ কিছুদিন এখানে অবস্থান করেছিলেন। মহানবি হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্মৃতি বিজড়িত এই মসজিদ দেখতে অনেক মুসুল্লি কুবা গ্রামে চলে যান।
 

মসজিদ আল কিবলাতাইন
 

ইসলামের ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মসজিদ হলো মসজিদ আল কিবলাতাইন৷ মদিনায় অবস্থিত এই মসজিদটির সাথে জড়িয়ে আছে কুরআনের বিশেষ কিছু আয়াত নাজিলের ইতিহাস। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মসজিদে যখন জামাআতের সাথে নামাজ আদায় করতে থাকেন তখন কিবলা পরিবর্তন করার জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আয়াত নাজিল হয়।
 

উহুদ পাহাড়
 

ইসলামের ইতিহাসের তাৎপর্যময় উহুদের যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল যে পাহাড়ের ওপর সেই পাহাড়ই মূলত উহুদ পাহাড় নামে পরিচিত। মক্কার কুরাইশ বংশের এবং মদিনাবাসীর মধ্যে এই যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল।

এই যুদ্ধে প্রায় ৭০ জন সাহাবায়ে কেরাম শহিদ হয়েছিলেন। তাদের সকলের কবর এই উহুদের ময়দানেই অবস্থিত। হাজিগণ উহুদের যুদ্ধে শহিদ হওয়া সাহাবায়ে কেরামদের কবর জিয়ারত করতে উহুদ পাহাড়ে আসেন। 

উহুদ পাহাড়ের উচ্চতা উচ্চতা ১,০৭৭ মিটার বা ৩,৫৩৩ ফুট। উহুদ পাহাড়ের পেছনের দিকে আরেকটি ছোট পাহাড় আছে যার নাম লোকমুখে রুমার পাহাড় বলেই পরিচিত এর আসল নাম জাবালে রুমাত। উহুদ পাহাড় পরিদর্শন করতে আসলে রুমার পাহাড়ে ঘুরে আসতেও কেউ ভোলে না।
 

বাদশা ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
 

পৃথিবীর সবথেকে জনপ্রিয় কোনআন প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান বাদশা ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স যা সৌদি আরবের মদিনা শহরে অবস্থিত। এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর কমপক্ষে প্রায় ১ মিলিয়ন কপি কুরআন প্রিন্ট করে। আরবি ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় কুরআন মুদ্রণ করা হয় এই প্রিন্টিং কমপ্লেক্সে।
 

কাহফে খুজায়া
 

কাহফে খুজায়া একটি বিশেষ গুহা, এ গুহাটি নবী সা.-এর একটি দুঃসময়ের ঘটনার সাক্ষী। কাহফে খুজায়া গুহাটি মদিনা শহরে অবস্থিত।

খন্দকের যুদ্ধের সময় মহানবী সা. এই গুহার ভেতরে আহত অবস্থায় এসে বিশ্রাম করেছিলেন। নবী প্রেমী মুসল্লিগন মদিনায় আসলে কাহফে খুজায়া গুহাটি নিজ চোখে দেখতে যান। 

মসজিদে জুমা
 

মদিনা শহরের মসজিদে কুবা থেকে ৯০০ মিটার উত্তরে আর মসজিদে নববীর ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে মসজিদে জুমা অবস্থিত। মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা শহরে এসে প্রথম এখানে জুমুআর নামাজ আদায় করেছিলেন পরবর্তীতে এখানে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। হাজিদের মূল আকর্ষণের একটি বিশেষ মসজিদ হলো মসজিদে জুমা।

ওয়াদিয়ে জ্বিন
 

ওয়াদি জ্বিন বিশেষ এক অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন উপত্যকা। মদিনা শহর থেকে ৩০/৪০ কিলোমিটার উত্তরে এই উপত্যকাটি অবস্থিত। এই উপত্যকার এক বিশেষ অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে। সাধারণত কোনো ঢালু জায়গায় পানি ঢাললে তা স্বভাবতই ঢালের দিকেই নামবে।

কিন্তু ওয়াদি জ্বিন উপত্যকায় পানি ঢেলে দিলে তা ঢালের দিকে না গড়িয়ে উঁচু দিকে গড়িয়ে পড়ে। এই অসম্ভব বিষয়টিকে নিজ চোখে দেখার জন্য অসংখ্য দর্শনার্থী ওয়াদি জ্বিন উপত্যকায় ভীড় জমায়। 

আল শাজারাহ মসজিদ
 

মদিনা থেকে মক্কা যাওয়ার পথে, ১২ কি.মি. দূরত্বে। যুল হুলাইফাতে অবস্থিত মীকাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা যাওয়ার পথে এ মসজিদে সালাত আদায় করতেন। এখানেই মাদিনাবাসীদের ইহরাম বাধতে হয়।

মসজিদে শাজারাহ মানে হলো গাছের মসজিদ। মক্কায় উমরাহ বা হজ্জ করার জন্য মুসলমানদের একাধিক মিকাতের (যেখানে ইহরাম স্থাপন করা হয়) একটি। আবের আলী হচ্ছে একটি স্থানের নাম যেখানে মসজিদে শাজারাহ রয়েছে। যুল হুলাইফা মদিনা থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। 

খন্দক

৫ হিজরি মুতাবেক ৬২৭ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত হয় খন্দক যুদ্ধ। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। জোট বাহিনীর সেনাসংখ্যা ছিল প্রায় ১০,০০০। সেসাথে তাদের ৬০০ ঘোড়া ও কিছু উট ছিল। অন্যদিকে মদিনার বাহিনীতে সেনাসংখ্যা ছিল ৩,০০০।

পারস্য থেকে আগত সাহাবি হযরত সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ সা. মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনায় যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণকারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে।
 

মসজিদে বিলাল
 

মুসলিম উম্মাহর মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় সাহাবি হযরত বেলাল (রা.)-এর নামে পবিত্র ভূমি মদিনা মুনওয়ারায় একটি মসজিদ রয়েছে। যা মসজিদে বেলাল (রা.) বা বেলাল মসজিদ নামে পরিচিত।


বেলাল মসজিদ সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত ঐতিহাসিক ও ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি মসজিদ। রসুলের হাতে গড়া মসজিদে নববীর দক্ষিণ পাশেই এর অবস্থান। মসজিদে নববী থেকে মাত্র ৫ মিনিটেই ’জান্নাতুল বাকি’র সীমানা দিয়ে পায়ে হেঁটে ’বেলাল মসজিদে’ সহজেই যাওয়া যায়।
 

সালমান ফারসি রা.-এর বাগান
 

সালমান ফারসি রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সা. আমাকে বললেন, ‘হে সালমান, তুমি (তোমার মালিকের সঙ্গে দাসত্ব মুক্তির ব্যাপারে) চুক্তি করো।’ আমি তার সঙ্গে ৩০০ খেজুরগাছের চারা ফলদায়ক হওয়া পর্যন্ত গর্তে পানি দেওয়া এবং চল্লিশ উকিয়া আদায় করার বিনিময়ে চুক্তি করলাম। এরপর রসুলুল্লাহ সা. সাহাবিদের বললেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইকে সাহায্য করো।’

সাহাবিরা আমাকে খেজুরগাছ (চারা) দিয়ে সাহায্য করলেন। এক ব্যক্তি ৩০টি চারা দিলেন, আরেকজন ২০টি। অন্যজন ১৫টি, আরেকজন ১০টি চারা দিলেন। অর্থাৎ, প্রত্যেকেই সামর্থ্য অনুযায়ী আমাকে সাহায্য করলেন। একপর্যায়ে আমার ৩০০ চারা হয়ে গেল। এরপর রসুলুল্লাহ সা. আমাকে বললেন, ‘হে সালমান, তুমি যাও এবং এগুলো রোপণ করার জন্য গর্ত খনন করো। যখন শেষ করবে, তখন আমার কাছে আসবে। আমি নিজ হাতে তা রোপণ করব।’ যে বাগানের কথা হাদিসে এসেছে, সে খেজুর বাগানটি এখনো রয়েছে। সে বাগানটিই দেখতে যান হাজিরা।

এছাড়াও আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে মদিনায়। মদিনার কেন্দ্রীয় খেজুর মার্কেট, ইজাবা মসজিদ আবু বকর মসজিদ সাত মসজিদ নিয়ে গঠিত কমপ্লেক্স ইত্যাদি।

 

 

কিউটিভি/আয়শা/২৮ মে ২০২৪,/দুপুর ১:২১

▎সর্বশেষ

ad