
ডেস্ক নিউজ : হযরত উম্মে সালমা রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সা. রমজান মাস ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা পালন করতেন শাবান মাসে, অতঃপর রজব মাসে। হযরত আয়েশা রা. বলেন, যখন রজব মাস আসত, রসুলুল্লাহ সা. এর আমলের আধিক্য দেখেই আমরা তা বুঝতে পারতাম। কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, রসুলুল্লাহ সা. রজব মাসে ১০টি রোজা রাখতেন, শাবান মাসে ২০টি রোজা রাখতেন, রমজান মাসে ৩০টি রোজা রাখতেন। (দারিমি)।
রজব মাসের আমলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বেশি বেশি নফল রোজা পালন করা। মাসজুড়ে প্রিয় নবী সা. এর নিয়মিত আমল- সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা পালন করা। তাছাড়া মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ রোজা পালন করা। মাসজুড়ে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত-দোহা, জাওয়াল, আউয়াবিন, তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলুল মাসজিদ ইত্যাদি নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া খুবই জরুরি।
হযরত সালমান ফারসি রা. থেকে বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়, রজব মাসের প্রথম তারিখে ১০ রাকাত নফল নামাজ পড়তে হয়। হযরত ওমর রা. বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সা. বলেন, অতি মহান (মর্যাদার) ৪টি রাত হলো- রজব মাসের প্রথম রাত, শাবান মাসের মধ্য দিবসের রাত (শবেবরাত), শাওয়াল মাসের প্রথম রাত (ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদের রাত), জিলহজ মাসের দশম রাত (ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদের রাত)।
হযরত উসমান ইবনে হাকিম রহ. বলেন, আমি হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর রহ. কে রজব মাসের রোজা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি উত্তরে বললেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কে বলতে শুনেছি, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রোজা রাখতেন তখন এত পরিমাণ রোজা রাখতেন, আমরা ভাবতাম, তিনি আর রোজা পরিত্যাগ করবেন না। আবার যখন তিনি রোজা না রাখা শুরু করতেন তখন আমাদের মনে হতো, তিনি আর রোজা রাখবেন না। (মুসলিম ২৭৮২)
হাদিসটির ব্যাখ্যায় ইমাম নববি রহ. বলেন, সাঈদ ইবনে জুবাইর রহ. এ হাদিস উপস্থাপন করে এ কথা প্রমাণ করতে চান, রজব মাসের রোযা সম্বন্ধে বিশেষ কোনো নিষেধাজ্ঞা বা বিধি-আজ্ঞা নেই। বরং এ মাসের রোজার বিধান স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য মাসের নফল রোজার মতো। তবে সুনানে আবু দাউদের একটি বর্ণনামতে সম্মানিত মাসগুলোতে রোযা রাখা বাঞ্ছনীয় বলে প্রমাণিত। সেখানে বলা হয়েছে, জনৈক সাহাবি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অধিক রোজা রাখার অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি তিনবার বলেন, সম্মানিত মাসগুলোতে রোজা রাখো এবং মাঝে মধ্যে পরিত্যাগ করো। (সুনানে আবু দাউদ ২৪২৮, শরহু সহিহ মুসলিম, ইমাম নববি ১৭/৩৮)
হযরত আসমা বিনতে আবু বকর রা. তার গোলাম হযরত আব্দুল্লাহকে ইবনে উমর রা.-এর কাছে এ কথা জিজ্ঞেস করে পাঠালেন, আমি শুনতে পেলাম, আপনি তিনটি বিষয়কে নিষিদ্ধ করেছেন। (তন্মধ্যে হতে একটি হল) রজব মাসের রোজা। তখন তিনি বললেন, যে ব্যক্তি সারা বছর রোজা রাখে সে রজবের রোজাকে কী করে নিষিদ্ধ মনে করতে পারে? (সহিহ মুসলিম ৫৫৩০)
তবে এ মাসের মর্যাদাকে পুঁজি করে ইবাদতের স্বাভাবিক গতিধারাকে ব্যাহত করার কোনো সুযোগ নেই। হযরত উমর রা. কিছু লোককে রজব মাসের রোজার ব্যাপারে অতিরঞ্জন করতে দেখে তাদেরকে আহার গ্রহণে বাধ্য করেন এবং বলেন, এ মাসকে তো জাহেলি যুগের লোকেরা সীমাতিরিক্ত সম্মান করত। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ১৬/২৯৪)
কিউটিভি/আয়শা/২১ জানুয়ারী ২০২৪,/রাত ১০:২৮