ডেস্কনিউজঃ দেশে ‘একতরফা’ নির্বাচন করতে বর্তমান নির্বাচন কমিশন ‘সরকারের পাপেট’ হিসেবে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন রুহুল কবির রিজভী।
রোববার বিকেলে ৪৮ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিনের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিপজ্জনক অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবি আদায়ে বাঁধভাঙ্গা আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। অনিবার্য গণঅভ্যূত্থানের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে বাংলাদেশিরা। স্বৈরাচারী নিপীড়কের পতনের কাউন্ট ডাউনের মধ্যে আরেকটি একতরফা পাতানো ভুয়া নির্বাচনের অপচেষ্টা চলছে।’
রিজভী বলেন, ‘মেরুদণ্ডহীন পাপেট নির্বাচন কমিশন আওয়ামী নির্বাচনী তপশিল বাস্তবায়ন করতে মুখ লুকিয়ে জোরেশোরে মাঠে নেমেছে। আর নিশিরাতের সরকারের অবৈধ মন্ত্রী-এমপি, নেতাকর্মী, আওয়ামী লীগ সমর্থক পুলিশ-র্যাব গোয়েন্দারা গোটা দেশে ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলনরতদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে হায়েনার মতো। ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজার, জনপদ, লোকালয়, শহর-বন্দরে থাকা গণতন্ত্রকামীদের।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী নিপীড়নে বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন মৃত্যু থেকে কয়েক মিনিট দূরে অবস্থান করছেন। বাড়ি-ঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা করা হচ্ছে। যশোরে প্রখ্যাত জননেতা মরহুম তরিকুল ইসলাম সাহেবের বাসভবনে বর্বরোচিত ভয়াবহ বোমা হামলার মতো সারা দেশে নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে সরকার। দিশাহীন, উন্মাদ হয়ে পাইকারী গ্রেপ্তার, খুনের হুমকি দিয়ে ভীতিকর ভয়ানক পরিবেশ তৈরি করেছে।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে, গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন দিয়ে বাসযাত্রী পুড়িয়ে মারার বিভৎস কাজ করেছে আগুন সন্ত্রাসের দল আওয়ামী লীগ। আর দেশের বাইরে বিএনপির বিরুদ্ধে নাশকতার অপবাদ দিয়ে প্রচার চালিয়েছে। পূনরায় সন্ত্রাসের অপবাদ দিয়ে ’১৪-’১৫ সালের ন্যায় আর বিদেশে মার্কেটিং করতে পারছেনা। কারণ, সারা দুনিয়া টের পেয়েছে- বিএনপির নামে সন্ত্রাসের অপবাদ মূলত একতরফা নির্বাচনের কৌশল।’
গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৫১০ জনের অধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার ও বিভিন্ন মামলায় দুই হাজার ৮৫ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
হরতালের প্রথম দিনে সারাদেশে সর্বাত্মক হরতাল পালনের জন্য দেশবাসীসহ দল ও সমমনা জোটের নেতাকর্মীদের প্রতি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অভিনন্দনের কথা জানান রিজভী।
‘জয়ের বক্তব্য দাম্ভিকতার বর্হিপ্রকাশ’
রিজভী বলেন, ‘শনিবার সাভারে এক অনুষ্ঠানে তার (সজীব ওয়াজেদ জয়) দাম্ভিকতাপূর্ণ কণ্ঠ শুনে দেশের মানুষ স্তম্ভিত ও হতবাক হয়েছে। একসঙ্গে জনগণ অট্টহাসিও দিয়েছে।’ তিনি বলেছেন, আগামী ১০/১৫ বছরে বিএনপি বলে কোনো দল বাংলাদেশে আর থাকবে না। তার মানে এই সময়ে তারা বিএনপিকে ধবংস ও নিঃশেষ করে দেবে। দেশে শুধুমাত্র একটাই রাজনৈতিক দল থাকবে, সেখানে ভিন্ন মতাদর্শের কেউ থাকতে পারবে না। কেউ স্বৈরাচারী সরকারের সমালোচনা করতে পারবে না, বাকশাল দুই স্থাপিত হবে। এই উপদেষ্টা সাহেবের মা (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও তার অনুগতরা দশকের পর দশক ধরে বিএনপিকে ধবংসের জন্য উঠে পড়ে লেগে আছে। ১/১১-এর বেআইনি সরকারের সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলো তারা কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমি শুধু সজীব ওয়াজেদ জয় সাহেবকে বলব, ইতিহাস পড়ুন…স্বৈরাচারের যখন ক্ষমতার মসনদে বসে থাকে, তখন অন্ধের মতো দাম্ভিকতা দেখায়। ফেরাউন পানিতে ডুবে যাওয়ার আগে দিনেও জানতো না, আগামীকাল তার শেষ দিন। এই ধরনের কথা আপনি পূর্বেও অনেকদিন বলেছেন… আপনার কথাগুলো এখন বাসি হয়ে গেছে… জনগণের দাবি মেনে এখন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দেন, দেখুন, আওয়ামী লীগের অবস্থান কি হয়।’
রিজভী বলেন, ‘যত মিথ্যাচার করুন.. বিএনপি এখন বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে তৃণমূল শক্তি… যতবার আঘাত এসেছে, ততবার আরও শক্তিশালী হয়েছে। বিএনপি প্রতিবারই চক্রান্তের চোরাবালির থেকে জেগে উঠে চতুর্দিকে আবার বিস্তার লাভ করেছে। বিএনপির রাজনীতি তো হচ্ছে- এদেশের মৃত্তিকা থেকে উৎসারিত এবং এদেশের মানুষের বুকের ভেতরে প্রথিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপদেষ্টা সাহেবের সরকার বিএনপি ও জিয়াউর রহমান সরকারকে ধবংসের জন্য বহুমুখী চক্রান্ত করে ব্যর্থ। দেশের কোটি কোটি মানুষের আশা-ভরসার স্থল দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটির পর একটি মিথ্যা বানোয়াট ও সাজানো মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীদের নামে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের ঘরছাড়া করা হয়… যা বিশ্ব ইতিহাসে নজিরবিহীন রেকর্ড। গ্রেপ্তার, নির্যাতন, গুম, আয়না ঘরে বন্দি ও ক্রসফায়ার করেও বিএনপির নেতাকর্মীদের দমানো যায়নি।’
রিজভী বলেন, ‘বিএনপিকে ভাঙা সরকারের কোনো অপচেষ্টাই সফল হয়নি। শত শত কোটি টাকা খরচ করে বিভিন্ন সংস্থা ও মাধ্যমে দিয়ে শেখ হাসিনার সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কুৎসিত অপপ্রচার করেও লাভ হয়নি। বেগম খালেদা জিয়ার প্রেরণা এবং মুক্তিকামী মানুষের আশা ভরসারস্থল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গোটা বাংলাদেশ আজ ঐক্যবদ্ধ। সুতরাং আগামী ১০-১৫ বছর কেনো বিশ্বের মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকা যতদিন থাকবে, ততদিন বিএনপি থাকবে এই দেশে, ইনশাল্লাহ।’
বিপুল/১৯.১১.২০২৩/ রাত ৯.৪৫