
সিলভিয়া প্যাটারসন : যার ভাবনায় বাংলাদেশ
———————————————–
রাতের ডিনার শেষ করে সিলভিয়া কফির মগটা হাতে নিয়ে ঘন্টা খানেক কাটায় রিডিং রুমে। সিলভিয়াদের বাসার গ্রাউন্ড ফ্লোরে বিশাল রিডিং রুম। হাজার হাজার বই আছে এখানে। বসে, শুয়ে অথবা অর্ধশোয়া অবস্থায় এখানে বই পড়ার ব্যবস্থা আছে। সিলভিয়ার বাবা এডরুক প্যাটারসন একজন বই পাগল মানুষ ছিলেন।
একজন মানুষ কিভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে আরেকজন মানুষের জীবনে, সেটা সিলভিয়ার রিডিং রুমে ঢুকলে যে কেউ বুঝতে পারবে। রামান বাংলাদেশী। বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি, সংগীত সম্পর্কে বিস্তর কালেকশন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সিলভিয়ার রিডিং রুমে। একটা সেলফ শুধু বাংলাদেশ নিয়ে। এই সেলফের উপরে একজন ঋষির মত পুরুষের ছবি। ইনি নাকি বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখক। ইংরেজিতে অনূদিত এই লেখকের অনেক বই এই সেলফে সাজানো আছে। একটা বই নিয়ে সিলভিয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বায়োগ্রাফি পড়তে লাগল।
রিডিং রুমে মিউজিক সিস্টেম আছে। রিমোট কন্ট্রোল হাতে নিয়ে সিলভিয়া একটা গান চালু করে দিল। এই গানটি বড় ব্যাথার গান , বড় কষ্টের গান। সিলভিয়া রাগ করে ফুকেট থেকে এয়ারে ফেরার পর ট্যাক্সিতে এই গানটি শুনেছিল। গানটি হিন্দি। যার অনুবাদও রোমান করে দিয়েছিল। এই গানটি ও করে সিলভিয়া সোফায় শুয়ে পড়ল। কারাওকে মিউজিক সিস্টেমে গান বাজছে তখন।
সাজনা এক পাল চাইনা আয়ে
সাজনা তেরে বিনা
দিল জানে কিউ ঘাবড়ায়ে
সাজনা তেরে বিনা
সিলভিয়া এই গানের কথাগুলোর অর্থ এভাবে বের করে ফেলল।
I don’t get peace for even a moment,
without you, O beloved.
I don’t know why my heart feels perplexed
without you, O beloved.
তার পরের কথাগুলোর অর্থ ও এরকম।
these days lovely, O my dear beloved,
that we have lived together.
don’t leave me alone now,
leaving water in my eyes.
this water lights a fire (in me),
without you, O beloved.
সিলভিয়ার হাতে কফির মগ। সোফায় পড়ে আছে রবীন্দ্রনাথের বায়োগ্রাফি। সিলভিয়ার চোখে অঝোর ধারায় নোনা জল ঝরছে। ৩০ বছর আগে ব্যাংককের রামা-৪ রোড দিয়ে যাওয়ার সময় শিখ ট্যাক্সি ড্রাইভারের গাড়িতে শোনা এই গানটি গেথে আছে আজও সিলভিয়ার হৃদয়ে। রামানের লোমশ বুকে শুধু মাথা ঠুকে গেছে সে। সেদিনের কথা মনে করে কাঁদছে সিলভিয়া।
হোয়াটস্যাপে সিলভিয়া কল দিল রামানকে। এক রিংগেই কল রিসিভ করল ঢাকা থেকে রামান। সিলভিয়া কাঁদছে। বুঝতে পারল রামান। কিন্তু কোন শান্তনার কথা বলতে পারলোনা সে। অবশেষে সিলভিয়া মুখ খুললো। সেপ্টেম্বরে তোমাদের দেশে কি ওয়েদার ঠিক থাকবে ?আমি উইন্টারের আগেই বাংলাদেশে আসতে চাই। তুমি কি বলো ?
রামান সিলভিয়াকে বলল, ওয়েদার ভালোই থাকবে, কিন্তু পলিটিক্যাল ওয়েদার ভাল নাও থাকতে পারে। বাংলাদেশে এখন তুমুল আন্দোলন শুরু হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। এই ডামাডোলের মাঝে তোমার কি আসা ঠিক হবে ? সিলভিয়া অনুযোগ করে বলল, তুমি কি অজুহাত সৃষ্টি করার চেষ্টা করছ ? আমাকে নিতে চাচ্ছ না বাংলাদেশে ? রামান হেসে জবাব দিয়ে বলল, মোটেই না। আমি তোমাকে আজকের কিছু নিউজ লিংক পাঠাচ্ছি। পড়লেই বুঝতে পারবে। একটু পরেই রামান কয়েকটি নিউজ লিংক পাঠালো।
বাংলাদেশের সমকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে রামানের পাঠানো নিউজ লিংকগুলো ওপেন করে পড়তে লাগলো সিলভিয়া।
পর্ব-২
লেখকঃ লুৎফর রহমান একজন রাজনীতিবিদ ও লেখক। তিনি নিয়মিত লেখালেখির পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক নিউজ মিডিয়ার সম্পাদক ও প্রকাশক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র লুৎফর রহমান ৮০ এর দশকের স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরতে দুটি রাজনৈতিক উপন্যাস লিখেছেন, যা দেশ বিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় জীবনের খন্ডচিত্র এঁকে তিনি এখন ব্যাপক পরিচিত।
বিপুল/২৯.১০.২০২৩/ রাত ৯.০৭