
প্রশ্নবিদ্ধ প্রজন্ম
———————-
আমরা বর্তমান বিশ্ব কিংবা রাষ্ট্রের দিকে যদি তাকাই তাহলে মোটামুটি পুরো দৃশ্য পরিক্রম কে একটি নিউমার্কেটের সাথে তুলনা করতে পারি। যেখানে আছে বেচা-কেনা, হারা-জেতা, কেউ পন্য কিনে জিততেসে, কেউ আবার বিক্রি করে। কিছু আছে স্বচ্ছ গ্লাস দিয়ে ঘেরা শোরুম, সেখানে বিক্রি করছে রকমারি ইউনিফর্ম। বাইরে কিছু গরিব বিক্রেতা হকারি করছে। ধনী বিক্রতা এসির হাওয়া খাচ্ছে। আমরা প্রত্যেক বিক্রেতার কাছেই যাচ্ছি। প্রয়োজন মেটাচ্ছি, বাড়ী ফিরে আসছি।
এভাবেই রুপক অর্থে চলে যাচ্ছে আমাদের দেশ, আমাদের বিশ্ব। আমি অল্প কয়েকটা সহজ প্রশ্ন রেখে এবার মূল কথায় আসি। রিসেন্টলি আপনার মাথার উপর দিয়ে চলে গেছে পদ্মাসেতু, এর নির্মানশৈলীর কারিগর কে? আপনি ঘরে বসে জুম প্লাটফর্মে মিটিং করছেন, এই প্লাটফর্ম আপনাকে কে তৈরী করে দিয়েছে?
আপনি অসুস্থ হলে কার কাছে দৌড়ান? অতঃপর ডাক্তার যে ঔষধ গুলো লিখে দেয়, সেই ঔষধ গুলো কারা বানায়? একটা বাচ্চা জন্মগ্রহনের পর থেকে যত ডোজ টীকা সে গ্রহন করে, এই টীকা গুলো কাদের আবিস্কার? সর্বকালের সমস্ত রেকর্ড ভংগকারী মহামারী করনা ভাইরাসের ভ্যক্সিন কই থেকে আসলো? আপনার হাতের মুঠোয় এখন প্রযুক্তি,সারা ঘরে প্রযুক্তির ছড়াছড়ি।
কিভাবে আসলো এগুলো?এই যে ইতিহাস, সাহিত্য, মনস্তত্ব, পদ্য, উপন্যাস নিয়ে চর্চা করছেন…. প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যা ধারন করছেন? সোর্সগুলো কারা? এমন প্রশ্নহাজার..কিন্তু উত্তর মাত্র চার! শিক্ষাবিদ, গবেষক,প্রকৌশলী ও চিকিৎসক। আপনি মানেন বা না মানেন, বিশ্বের মানব কল্যানের সর্বোচ্চ ভূমিকা পালনকারী এরাই সেই একমাত্র কর্মদক্ষ প্রধান নিয়ামক “Fantastic Four”।
কিন্তু তবুও যুগে যুগে কালে কালে সারা বিশ্বে ফুলে ফেপে সকল দিক থেকে এদের বাদ দিয়ে আগে সম্মানিত ও অভিবাদিত করা হয় তথাকথিত নিউমার্কেটকে।এই পৃথিবীটা ধীরে ধীরে শুধুমাত্র রাজনীতি, ব্যবসা আর প্রতিরক্ষার ঘোর টোপে আবৃত্ত হচ্ছে। চারদিকে শুধু ভক্ষক, প্রতিরক্ষক আর প্রশাসক। আমার নিজস্ব মনস্তত্ব থেকেই দুইটা নাম আবিস্কার করেছি, একটা হচ্ছে ‘ফ্যন্টাসিক ফোর’ আর আরেকটা হচ্ছে নিউমার্কেট।
নিউমার্কেট বলতে যে রুপক সংযুক্তি বোঝালাম, যে বোঝার সে বুঝে ফেলেছে।অবশ্যই এই পৃথিবীতে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, প্রতিরক্ষক, ঠিকাদার, খেলোয়াড়, শিল্পী, প্রশাসক, ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট.. সবার ই প্রয়োজন আছে।
একটা দেশকে যদি তুলনা করা হয় একটা দেহের সাথে। তাহলে তার প্রত্যেক প্রত্যঙ্গই হচ্ছে একেকটি সেক্টর। তবে অবশ্যই মূল অঙ্গ আমার উল্লেখিত উক্ত চার।কারো যদি কোনো সন্দেহ থাকে এই চার কে বাদ দিয়ে একটা রাষ্ট্র চালিয়ে দেখান। চোখ বন্ধ করে এক সেকেন্ড চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন। বিশ্বের যে কোনো একটা অনিরাপদ দেশের নাগরিক হয়ে প্রানের মায়া ছেড়ে মরে যেতে পারেন আপনি।
প্রশাসনিক বলয় ছাড়া ক্ষমতার প্রতিপালন ছাড়া বিশৃংখলায় পরবেন আপনি। নাচ,গান, নাটক সিনেমা, খেলাধুলা না দেখলে জীবনের বিনোদন মিস হবে আপনার। কিন্তু দুনিয়া যতদিন ধ্বংস না হবে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত…..গবেষক ছাড়া আপনি পংগু। শিক্ষাবিদ ছাড়া আপনি মস্তিষ্কহীন।
চিকিৎসক ছাড়া আপনি অন্ধ। প্রকৌশলী ছাড়া আপনি আদীম। এই চার সেক্টর থেকে পূ্র্বেও কোনোদিন কেউ কন্ঠ খোলেনি। সামনেও খুলবে না। কারন বৃক্ষ যতো সমৃদ্ধ হয় তত বেশী নুয়ে পরে। এখনো সময় আছে তাঁদের যোগ্য সম্মানটুকু দেবার।
বড় বড় সেমিনারে,গ্যালারীতে গবেষক খুজে খুজে ধরে আনুন, রাজনীতিবিদ নয়। রাজনীতিবিদ আপনাকে জবরদস্তি করছে না তাকে আনার জন্য সেও রাষ্ট্রীয় হাজারটা কাজে ব্যস্ত। কোনো প্রতিষ্ঠানে গবেষক ডেকে আনলে, আমার ধারনা সে নিষেধ করবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবে শিক্ষাবিদ ধরে আনুন, ইউটিউবার কিংবা সংগীতশিল্পী নয়।
প্রযুক্তিতে প্রকৌশলী নিয়ে আসুন, বিজ্ঞানমঞ্চে চিকিৎসক আনুন। প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনি যদি শুধুই ফেইসভ্যলু চান উপরন্তু জ্ঞানবিহীন মূর্খ জাতি চান, সেই দায় শুধু আপনার একার হবে না। সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। মনে রাখবেন, প্রাপ্য সম্মান, অভিবাদন কিংবা মর্যাদা না পেলে সত্যিসত্যি এই দেশ একদিন শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও গবেষক বিহীন দেশ হবে।।
লেখিকাঃ ফায়াজুন্নেসা চৌধুরী, শিক্ষক, ডিপার্টমেন্টে অফ সিএসই, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।
কিউটিভি /নাহিদা/২৬.০৭.২০২৩/ রাত ১১.৩০