ডেস্ক নিউজ : অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেট অধ্যুষিত স্টেটসমূহের বাসিন্দাদের গড় আয়ু রিপাবলিকান অধ্যুষিত স্টেটসমূহের বাসিন্দাদের চেয়ে দু’বছর বেশি। বিশ্বের জনসংখ্যার গতি-প্রকৃতির আলোকে সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য পর্যালোচনার পর ‘নিউজউইক’ এমন তথ্য পেয়েছে। ২০২০ সালের নির্বাচনে যেসব স্টেটে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হয়েছিলেন, সেসব স্টেটের অধিবাসীদের গড় আয়ু হচ্ছে (চলতি বছর) ৭৫.৫ বছর করে। একই নির্বাচনে যে সব স্টেটে জো বাইডেন বিজয়ী হয়েছেন, সেগুলোর অধিবাসীদের গড় আয়ু ৭৭.৭ বছর করে।
উল্লেখ্য যে, করোনা মহামারি এবং রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ এবং ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের গড় আয়ু আগের বছরের তুলনায় কমেছে। বিশ্বের জনসংখ্যা সম্পর্কিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অধিকাংশ দেশেই ২০২২ এবং চলতি বছর গড় আয়ু কিছুটা বাড়লেও কিউবা এবং লেবাননের মতো গরিব দেশের মানুষের চেয়েও পেছনে রয়েছে আমেরিকানরা। সে অনুযায়ী চলতি বছর আমেরিকানদের গড় আয়ু হচ্ছে ৭৬.৬ বছর। হাওয়াই’র মানুষের গড় আয়ু চলতি বছর ৮০.৭ করে হলেও মিসিসিপিতে তা ৭১.৯ বছর।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনকে বিজয় দেওয়া ১০ স্টেটের নাগরিকগদের গড় আয়ু রিপাবলিকান ট্রাম্পকে বিজয় দেওয়া ১০ স্টেটের তুলনায় বেশি হলে উপরোক্ত তথ্য-বিশ্লেষণে উদঘাটিত হয়েছে। শুধুমাত্র ইউটাহ স্টেট ব্যতিক্রম অর্থাৎ ট্রাম্পকে বিজয় দেওয়া এই স্টেটের মানুষের গড় আয়ু কিছুটা বেশি। গড় আয়ু বেশি অপর ৯ স্টেট হচ্ছে হাওয়াই, ওয়াশিংটন, মিনেসোটা, ক্যালিফোর্নিয়া, ম্যাসেচুসেট্স, নিউ হ্যামশায়ার, ওরেগণ, ভারমন্ট এবং কানেকটিকাট। এসবে জয়ী হন বাইডেন।
অপরদিকে ট্রাম্পকে বিজয় দেওয়া স্টেটসমূহ হচ্ছে মিসিসিপি, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াম লুইজিয়ানা, আলাবামা, কেন্টাকি, টেনেসী, আরকানসাস, ওকলাহোমা এবং সাউথ ক্যারলিনা। এগুলোর মানুষের গড় আয়ু অন্য ১০টির চেয়ে কম। বাইডেনকে বিজয় দেওয়া নিউ মেক্সিকো স্টেটের মানুষের গড় আয়ু কম। এটাই শুধু ব্যতিক্রম। এদিকে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ‘সিডিসি’ (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালের তুলনায় ২০২২ সালে আমেরিকানদের গড় আয়ু কমেছে। তবে এ বছর চায়নিজ আমেরিকানদের গড় আয়ু সবচেয়ে বেশি বলে জনসংখ্যা পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে বলা হয়েছে। এ তথ্য অনুযায়ী আমেরিকায় এশিয়ান মহিলাদের গড় আয়ু চলতি বছর দাঁড়িয়েছে ৮৫.৬। অপরদিকে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের গড় আয়ু হচ্ছে ৬৬.৭ বছর করে। অর্থাৎ অঞ্চল ও বর্ণগতভাবেও আমেরিকায় মানুষের গড় আয়ুতে বড় ধরনের বৈষম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে বহু বছর ধরে।
২০২২ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল প্রকাশিত বিশ্বে জনসংখ্যার গতি-প্রকৃতির তথ্যের ওপর নিউজউইকের এই গবেষণা-পর্যালোচনা পরিচালিত হয় সহকারী অধ্যাপক হায়দার জে ওয়ারিচের নেতৃত্বে। সে অনুযায়ী ২০০০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যেসব কাউন্টিতে (উপজেলার সমপর্যায়ের সিটি অথবা উপশহর) ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন, সেগুলোতে রিপাবলিকান সমর্থকদের মৃত্যুর হার বেশি।
অধ্যাপক হায়দার উল্লেখ করেন, আমরা দেখেছি যে, ডেমোক্রেটরা জয়ী হওয়া কাউন্টিসমূহের অধিবাসীদের মৃত্যুর হার অনেকটা কম রিপাবলিকান অধ্যুষিত কাউন্টির তুলনায়। আর এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে ওইসব স্টেট পরিচালনায় ডেমোক্রেট প্রশাসন উদারনীতি অবলম্বন করায়। চিকিৎসা ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজানো হয়েছে ডেমোক্রেটদের ঐকান্তিক আগ্রহে। যা করোনার সময় (ট্রাম্প আমলে) দৃশ্যমান হয় অর্থাৎ করোনার ভয়ংকর ছোবলকে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং রিপাবলিকান স্টেট গভর্নররা আমলেই নিতে চাননি। আর এমন মনোভাবের অসহায় ভিকটিম হয়েছেন ওইসব স্টেটের অধিবাসীরা।
গত বছরের অক্টোবরে আরেকটি হেলথ জার্নাল প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৯ এবং ২০১৯ সাল অর্থাৎ ২০ বছরের ব্যবধানে আমেরিকানদের গড় আয়ু থমকে দাঁড়িয়েছে। কারণ ২৫ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যেকার আমেরিকানদের মৃত্যুর হার বেড়েছে এ সময়ে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মাদকের ব্যাপারে রক্ষণশীল মনোভাব বাড়লে এবং পরিবেশ, বন্দুক নিয়ন্ত্রণ, শ্রম, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় উদারনীতি অবলম্বনের মাধ্যমে আমেরিকানদের গড় আয়ু বাড়ানো সম্ভব। এক্ষেত্রে সামগ্রিক নীতি-নির্ধারণীতেও পরিবর্তন আনতে হবে।
কিউটিভি/আয়শা/০৯ জুলাই ২০২৩,/বিকাল ৫:১৪