
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তার বিরুদ্ধে আনা হয় একের পর এক যৌন হয়রানির অভিযোগ। কিন্তু ট্রাম্পের ওপর বাইডেনের এই ‘ওভার ট্রাম্প’ কোনো কাজেই আসেনি। যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় গ্রেফতারের পর রিপাবলিকান দলে বেড়ে গেছে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ট্রাম্পের ওপর ‘ওভার ট্রাম্প’ করেছেন। রিপাবলিকানদের জন্য যা ছিল একটি বড় ধাক্কা। কিন্তু যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় ট্রাম্পের গ্রেফতারের বিষয়টি যেন সাপে বর হয়েছে। সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, এতে নিজ দল রিপাবলিকানে বেড়ে গেছে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা! কিন্তু কেন?
যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম বৃহত্তম ব্যাংক সিলিকন ভ্যালি। গত ১০ মার্চ মূলধন সংকট ও আমানত নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে ব্যাংকটি বন্ধ করে দেয়া হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় প্রতিষ্ঠানটির সব সম্পদ। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই চূড়া থেকে সিলিকন ভ্যালির পতন দেশটির আর্থিক ও প্রযুক্তি খাতে চরম বিস্ময়ের জন্ম দেয়। যা আরও জটিল আকার ধারণ করে তিনদিনের মধ্যে নিউইয়র্ক ভিত্তিক সিগনেচার ব্যাংক বন্ধের ঘটনায়। অন্যতম ঋণদাতা ব্যাংক দুটির ধসে পড়াকে দেশটির ইতিহাসে আর্থিক খাতে বৃহত্তম ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো। যা নিয়ে দেশজুড়েই শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা।
ব্যাংক খাতের অস্থিরতা নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে ঠিক তখনই ট্রাম্পকে বিতর্কের মধ্যে টেনে আনা হয়। অনেকের মতে, একটা ঘটনা ধামা চাপা দিতেই আরেকটি ঘটনা সামনে নিয়ে আসা হয়। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি স্টর্মি ড্যানিয়েলস নামে এক পর্ণ তারকার সঙ্গে তার সম্পর্ক গোপন রাখার বিনিময়ে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন। বলা হয়, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে এই ঘটনা ঘটে। পর্ণ তারকার মুখ বন্ধ রাখতে ঘুষ দেয়ার ঘটনায় ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়। তিনিই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি দেশটির ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হলেন।
এমন অভিযোগ সরাসরি নাকচ করেন ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্ত করা হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেন তিনি। তার দল রিপাবলিকানের সমর্থকরাও একই দাবি করেন। তাদের অভিযোগ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে ডেমোক্রেট বাইডেন প্রশাসন।
রিপাবলিকানদের তীব্র সমালোচনার মধ্যেই গেল ৫ এপ্রিল স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার দিকে ম্যানহাটনের আদালত কক্ষে একজন অভিযুক্ত হিসাবে প্রবেশ করেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রক্রিয়ামাফিক তার আঙ্গুলের ছাপ ও ছবি নেয়ার মধ্য দিয়ে ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার দেখানো হয়। যা মার্কিন ইতিহাসে বিরল ঘটনা হয়েই থাকবে। যদিও এরপরই আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে যান ট্রাম্প।
শুনানিতে বলা হয়, ট্রাম্পের আইনজীবীরা এ মামলাকে চ্যালেঞ্জ করে যেকোনো ধরনের আবেদন জানানোর আগামী ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময় পাবেন। আর পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৪ ডিসেম্বর। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩৪টি অভিযোগ আছে। অভিযুক্ত ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা। মার্কিন গণমাধ্যমগুলো বলছে, সামনের বছর জানুয়ারি মাস নাগাদ ট্রাম্পের বিচার কার্যক্রম শুরু হতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে, সামনের বছর যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য লড়বেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, ঠিক তখন আবারও তাকে আদালতে হাজিরা দিতে হবে। এর মাধ্যমে কার্যত ট্রাম্পের ওপর ‘ওভার ট্রাম্প’ খেলেছেন জো বাইডেন।
প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্প কি আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারবেন? যুক্তরাষ্ট্রে এমন কোনো আইন নেই যে, কেউ দণ্ডিত হলে নির্বাচন করতে পারবে না। অর্থাৎ কোনো অভিযোগ বা ফৌজদারি অপরাধের পক্ষে রায় হলেও, ট্রাম্প চাইলে তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণা চালানো অব্যাহত রাখতে পারবেন। আর তিনি এরই মধ্যে আভাস দিয়েছেন যে, যাই হোক না কেন তিনি নির্বাচন করবেনই।
মামলা ও গ্রেফতারের পর ট্রাম্পের ভাবমূর্তি অনেকটা কমে গেছে বলে দাবি করছেন ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটরা। তবে সাম্প্রতিক একটি জরিপের ফল বলছে, ট্রাম্প জনপ্রিয়তায় আরও এগিয়ে গেছেন। রয়টার্স ও আইপিএসওএসের এক জরিপ বলছে, এমন পরিস্থিতিতেও আগামী বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে ট্রাম্পের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। ট্রাম্প গ্রেফতারের পরের দুদিন এই জরিপ চালানো হয়।
জরিপের ফলে বলা হয়েছে, ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের ৮৪ শতাংশই মনে করে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা ঠিক হয়েছে। অন্যদিকে ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের সমর্থকদের মাত্র ১৬ শতাংশ মনে করেন মামলা ঠিক আছে। রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যে ৪০ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের নেতা ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার পর তাকে ভোট দেয়ার ইচ্ছা তাদের আরও বেড়ে গেছে।
আর ৩৮ শতাংশ জানিয়েছেন, এ ঘটনার পরও ট্রাম্পের পক্ষেই থাকবেন তারা। মাত্র ১২ শতাংশ অবশ্য গ্রেফতারের পর ট্রাম্পকে পুনরায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান না। বিশ্লেষণ বলছে,আগামী বছরের নির্বাচনে রিপাবলিকানদের মধ্যে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো ট্রাম্পই এগিয়ে আছেন। রিপাবলিকান দলের কর্মীদের মধ্যে ৫৮ শতাংশ তাকে প্রার্থী হিসেবে চান। অথচ গ্রেফতারের আগে এই সংখ্যা ছিল ৪৮ শতাংশ।
কিউটিভি/আয়শা/২৯ এপ্রিল ২০২৩,/রাত ৯:৩৩