১. দিনের বেলায় পানাহার, স্বামী-স্ত্রী সহবাস ও সাওম ভঙ্গ হয় এমন সব বিষয় হতে বেঁচে থাকা। কোরআনুল কারিমের ভাষায়: “এবং তোমরা পানাহার কর, যতক্ষণ না রাতের কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে। অতঃপর সাওম-কে রাতের আগমন পর্যন্ত পূর্ণ কর” (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৮৭)।
২. আগাম রোজা রাখা: রমাদান মাস আগমনের ১/২দিন পূর্বে রোজা রাখা উচিত নয়। হাদিসে এসেছে ‘তোমাদের কেউ রমজান মাস আগমনের ১/২দিন পূর্বে যেন রোজা না রাখে। অবশ্য যার ওপর কাযা রয়েছে সে ওই দিনের রোজা রাখতে পারে’। (সহিহুল বুখারি: ১৯১৪)।
৩. মিথ্যা কথা ও অশ্লীল কাজ করা : মিথ্যা কথা ও কাজ অশ্লীল করা থেকে বেঁচে থাকতে রাসুল সা. এর নির্দেশনা হলো: ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও অশ্লীল কাজ পরিহার করল না, তার পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই’ (সহিহুল বুখারি: ১৯০৩)।
৪. শোরগোল, গালি-গালাজ ও ঝগড়া-বিবাদ করা: রোজা অবস্থায় অশ্লীল কথাবার্তা, শোরগোল ও ঝগড়া-ফ্যাসাদ থেকে বিরত থাকা জরুরি। হাদিস শরিফে এসেছে- ‘তোমাদের কেউ যখন রোজা অবস্থায় থাকে তখন যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং শোরগোল না করে। আর কেউ যদি তার সঙ্গে ঝগড়া করে, গালি দেয়, তা হলে সে যেন শুধু বলে দেয়, আমি তো রোজাদার’ (সহিহুল বুখারি : ৬০৫৭)।
৫. ইফতার গ্রহণে বিলম্ব করা: রোজাদার ব্যক্তি ইফতারের সময় হওয়ার পর কোনো বিলম্ব না করে সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করবে। রাসুল -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর হাদিস দ্বারা তা প্রমাণিত। নবী – সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- বলেন: “দ্বীন বিজয়ী থাকবে যত দিন লোকেরা অবিলম্বে ইফতার করবে। কেননা ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা বিলম্বে ইফতার করে”( আবু দাউদ: ২৩৫৩)।
৬. গান-বাজনা, নাটক, সিনেমা এবং ভিডিও দেখা/শ্রবণ করা : কোন কোন রোজাদার সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে গান-বাজনা, নাটক, সিনেমা এবং ভিডিও দেখা/শ্রবণ করে থাকেন। আর পবিত্রতম মাসে এ জাতীয় গর্হিত কাজের মাধ্যমে সময় নষ্ট করা কোন বিবেকবান মুমিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।
৭. ফেসবুকে বেহুদা সময় নষ্ট করা: ফেসবুকের কিছু উপকারিতা থাকলেও সময় অপচয়সহ এর নানাবিধ অপকারিতা রয়েছে। তাই একজন রোজাদার-কে মর্যাদাপূর্ণ ও বরকতময় এ মাসে ফেসবুকের মাধ্যমে অনর্থক সময় নষ্ট ও নানাবিধ অশ্লীল বিষয় হতে বেঁচে থাকা জরুরি।
৮. অধিক পরিমাণে হাসি ও খেল-তামাশা করা : একজন মুমিন মহান আল্লাহর ভয়ে সর্বদা কম হাসবেন। ইসলামী অনুশাসন মেনে পরিমিত ও নির্দোষ কৌতুক/তামাশা করা যাবে। তবে রমাদানে এ বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
৯. অনর্থক কথা বা কাজ করা: অনর্থক কথা বা কাজ করা হতে বেঁচে থাকা পবিত্র এ মাসের অন্যতম দাবি। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুল -সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইরশাদ করেন: ‘রোজা শুধু পানাহার বর্জন করার নাম নয়; বরং রোজা হলো অনর্থক কথা ও কাজ এবং অশ্লীল কথা বর্জন করা (মুসতাদরাকে হাকেম : ১/৫৩৯: ১৬০২)।
১০. গিবত করা: গিবত করা হারাম। “এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে ? বস্তুত তোমরা তো ইহাকে ঘৃণ্যই মনে কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু” (সূরা আল-হুজুরাত: ১২)।আর রমাদানের কল্যাণ লাভের ক্ষেত্রে গিবত করা হতে বেঁচে থাকা একান্তভাবে জরুরি। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে-নবী কারিম -সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর দরবারে দু-জন মহিলা উপস্থিত হয়ে (দরজার বাইরে থেকে) অভিযোগ করল, রোজার কারণে তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। পিপাসার কারণে প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়। এ অবস্থা শুনে তিনি তাদের বমি করার আদেশ দিলেন। দেখা গেল, গোশতের টুকরো ও তাজা রক্ত বের হচ্ছে। সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) অবাক হলেন। তখন নবী -সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- বললেন, এরা হালাল খাদ্য দ্বারা সাহরি করে রোজা রেখেছে; কিন্তু রোজা অবস্থায় হারাম খেয়েছে। অর্থাৎ মানুষের গিবত করেছে। আর গিবত করার অর্থ হলো মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া’ (মুসনাদে আহমাদ: ২৩৬৫৩)। এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, গিবত ও অন্যান্য গুনাহ দ্বারা রোজাদারের কষ্ট অনেক বেড়ে যায়। এ কারণেই দেখা যায় আল্লাহর নেক বান্দারা রোজায় তেমন কোনো কষ্ট অনুভব করেন না; বরং তাঁরা অনেক আত্মিক ও দৈহিক প্রশান্তি লাভ করে থাকেন। পক্ষান্তরে যারা গিবত করে এবং বিভিন্ন গোনাহে লিপ্ত থাকে তারা রোজার কারণে বেশ কাহিল হয়ে পড়ে। ফলে বিভিন্ন বাহানা করে রোজা থেকে রেহাই পেতে চায়। এ ছাড়া গালি দেওয়া, অপ্রয়োজনীয় কথা বলা, ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা, অশ্লীল ও মন্দ কথা বলা, নিন্দা করা, অপবাদ দেওয়া, চোগলখুরী করা, বিনা প্রয়োজনে অন্যের গোপনীয় তথ্য প্রকাশ করা, মোনাফেকী করা, ঝগড়া করা, হিংসা করা, অভিশাপ দেওয়া, হারাম খাদ্য ও পানীয় পান করা, হারাম জিনিস দিয়ে ইফতার করা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, ধূমপান করাসহ গর্হিত সকল কাজ থেকে বিরত থাকা একজন মুমিনের জন্য অবশ্যই পালনীয়।
পরিশেষে পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিকট প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের-কে রমাদান মাসের পবিত্রতা রক্ষা করে এ মাসের করণীয় ও বর্জনীয় কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পাদন করে চলার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফিক দান করেন, এ মাসের রহমত, বরকত ও মাগফিরাতসহ যাবতীয় কল্যাণ নসিব করেন। আমিন ইয়া রাব্বুল আলামিন!