আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফ্রান্সের ব্যঙ্গবিদ্রুপ সাময়িকী শার্লি হেবদোর বিরুদ্ধে মুসলিমরা একদিন প্রতিশোধ নেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। ইরানের ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ব্যঙ্গ চিত্র প্রকাশ করায় এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের প্রভাবশালী বিপ্লবী গার্ডের প্রধান মেজর জেনারেল হোসেন সালেমি।
কিছুদিন আগে ইরানে চলমান বিক্ষোভে সাধারণ বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে আয়াতুল্লাহ খামেনির ব্যঙ্গ চিত্র প্রকাশ করে শার্লি হেবদো। যা তেহরানের জন্য ‘অপমানজনক’ হিসেবে অভিহিত করেছে দেশটি।
এছাড়া গত আগস্টে ঔপন্যাসিক সালমান রুশদির ওপর ছুরি হামলার কথাও উল্লেখ করেছেন বিপ্লবী গার্ডের প্রধান। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, শার্লি হেবদোর পরিচালকরা এমন হামলা শিকার হতে পারেন।
হুমকির সুরে মেজর জেনারেল হোসেন সালেমি বলেছেন, ‘আমরা ফ্রান্স এবং শার্লি হেবদোর পরিচালকদের সালমান রুশদির পরিণতির দিকে তাকাতে বলব।’
২০২২ সালের ১২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ছুরি হামলার শিকার হন সালমান। ওই সময় একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে মঞ্চে ওঠেছিলেন তিনি। মঞ্চেই তার ওপর ছুরি নিয়ে হামলা করেন হামলাকারী।
সাটানিক ভার্সেস নামে একটি ‘ধর্মবিদ্বেষী’ উপন্যাস লেখার অভিযোগ রয়েছে সালমানের বিরুদ্ধে। এ বই লেখার পর ১৯৮৯ সালে রুশদিকে হত্যার ফতোয়া জারি করেন ইরানের তৎকালীন শীর্ষ নেতা রুহুল্লাহ খোমেনি।
গত ডিসেম্বরে একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রতিযোগিতায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা তথা শিয়া ধর্মগুরু আয়াতুল্লা আলি খামেনির ব্যঙ্গচিত্র ছাপে ফরাসি ব্যঙ্গপত্রিকা শার্লি হেবদো। ফরাসি সাপ্তাহিকটি খামেনিকে নিয়ে কয়েক ডজন কার্টুন ছেপেছে। শার্লি হেবদোর ভাষ্য, ইরানে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সমর্থনের অংশ হিসেবে তারা গত মাসে ওই কার্টুন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে তারা এসব কার্টুন ছেপেছে।
ইরানে নীতি পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় গত সেপ্টেম্বর মাসে এক তরুণীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। নেই আন্দোলন এখনো চলছে। শার্লি হেবদো বলছে, স্বাধীনতার জন্য লড়াইরত ইরানিদের আন্দোলন-সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানাতেই তারা এই কার্টুন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল।
শার্লি হেবদো প্রথম সাড়া ফেলেছিল ২০০৬ সালে। ডেনমার্কের এক সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি ধর্মীয় ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে তোলপাড় চলছিল তখন। শার্লি হেবদো সেই ছবিটাই ফের ছাপে। তবে তখন তাদের দফতরে হামলা হয়নি। আক্রমণের মুখে তারা পড়েছিল আরও পাঁচ বছর পরে। ২০০৯ সালে। ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর লাগাতার হুমকির মাঝেও গুটিয়ে যায়নি তারা। ২০১১ সালে আবার একবার ব্যঙ্গাত্মক প্রচ্ছদ কাহিনি ছাপা হয়। জবাবে কট্টরপন্থী কয়েক জন মুসলমান যুবক বোমা মেরে আগুন লাগিয়েছিলেন শার্লি হেবদোর দফতরে।
এরপর পত্রিকাটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কার্টুনও ছেপেছিল। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়। দেশে দেশে হয় বিক্ষোভ। যার জেরে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি শার্লি হেবদোর প্যারিসের কার্যালয়ে জঙ্গি হামলা হয়। জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ১২ জনকে হত্যা করে। প্রাণঘাতী ওই হামলার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিশেষ প্রকাশনায় এবার খামেনির কার্টুন ছাপানো হয়।
কিউটিভি/আয়শা/১১ জানুয়ারী ২০২৩/রাত ৮:৩৪