
ডেস্ক নিউজ : জাতির সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি এবং সকল যুদ্ধের অবসান কামনা করে যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সারা দেশে পালিত হয়েছে খিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। ধর্মীয় আচার, প্রার্থনা ও আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে এই দিন পালিত করেছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। করোনা মহামারি না থাকায় এবার বর্ণাঢ্য আয়োজন ও আনন্দের কমতি ছিল না। এ ছাড়াও রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোয় বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে ছিল নানা আয়োজন।
রবিবার বড়দিন উদযাপনে দিনের শুরতেই প্রার্থনায় যোগ দিতে গির্জায় খিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ঢল নামে। সৃষ্টিকর্তার মহিমা ও মানবজাতির সুখ-শান্তি ও সত্য-ন্যায়ের পথে আহ্বানের বাণীতে শুরু হয় প্রার্থনা। সকাল ৭টায় শুরু হয় বড়দিনের প্রথম প্রার্থনা। এরপর সকাল ৯টায় শুরু হয় খ্রিস্টযোগ (বিশেষ প্রার্থনা)। প্রার্থনায় অংশ নিতে ভোরে থেকেই চার্চে সমবেত হন যিশুভক্তরা। যা চলে সকাল ৯টায় পর্যন্ত।
রাজধানীর কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথিড্রাল গির্জা, তেজগাঁওয়ের হলি রোজারিও চার্চে সাকল গান, মহাখালীর লুর্দের রানীর গির্জা, লক্ষ্মীবাজারের ক্রুশ ধর্মপল্লী, মোহাম্মদপুরের সেন্ট ক্রিস্টিনা গির্জা, মিরপুর-২-এর মিরপুর ক্যাথলিক গির্জা, কাফরুলের সেন্ট লরেন্স চার্চগুলোতে সকালে প্রার্থনা শুরু হয়। এতে যোগ দেয় খিস্টান ধর্মাবলম্বী নানা বয়সী মানুষ।
প্রার্থনা শেষে তারা জানায়, যিশুর মহিমাকীর্তন এবং শান্তি ও ন্যায়ের কথা বলা হয়। দেশে এখন অর্থনেতিকভাবে কঠিন সময় পার করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব টালমাটাল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া যুদ্ধের অবসান ও দেশের সুখ-শান্তির জন্য যিশুর কাছে প্রার্থনা করেছি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গির্জার ভেতরে-বাইরে সব জায়গায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা প্রার্থনায় মগ্ন। যিশুখ্রিস্টের আদর্শ ও শিক্ষা অনুসরণের আহ্বান জানানো হয় প্রার্থনায়। একই সঙ্গে সবার জন্য শান্তি ও আনন্দের বার্তা দেন তারা।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের হলি রোজারিও চার্চে গান এবং প্রার্থনার মাধ্যমে বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বিশেষ এই দিনটি উপলক্ষে হলি রোজারিও গির্জার ভেতরে ও বাইরে সাজানো হয়েছে বাহারি রঙের বেলুন, ফুল ছাড়াও আলোকসজ্জায় বর্ণিল একাধিক ক্রিসমাস ট্রি। গোয়ালঘরে রাখা হয়েছে শিশু যিশুখ্রিস্ট, মা মেরির প্রতিকৃতি। গির্জার প্রবেশমুখে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নিরাপত্তা তল্লাশি থেকে গির্জায় প্রবেশ করতে হচ্ছে সবাইকে।
বেলা ১১টার দিকে খ্রিস্টযোগ শেষ হয়। এরপর উৎসবের আমেজে গির্জায় ছবি তোলা ও কুশলাদি বিনিময়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সবাই। খ্রিস্টানদের বাড়ি বাড়ি চলছে উৎসব। অভিজাত হোটেলগুলোতেও রয়েছে বিশেষ আয়োজন।
যিশুভক্ত ক্রেইজা বলেন, ‘ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে এই দিনটা উদযাপন করছি। যিশুখ্রিস্ট সমাজে শান্তি ও ক্ষমা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই জিনিসটা যেন আমরা নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে পারি। একজনের আরেকজনের প্রতি ক্ষমাশীল হতে পারি। ’
তিনি আরো বলেন, ‘করোনা মহামারি কাটিয়ে সবাই যে একত্র হতে পেরেছি এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। ত্রাণকর্তা যেন আমাদের পাপ থেকে মুক্তি দেন―এটাই আজকে আমাদের চাওয়া।
বাংলাদেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান আর্চবিশপ বিজয় ডি’ক্রুজ বলেন, ‘সকাল ৯টায় দিনের প্রার্থনা করেছি। আমরা বেদি মঞ্চে গিয়েছি, নবজাতক শিশু যিশুখ্রিস্টের প্রতিকৃতিতে ধূপ-আরতি দিয়েছি। তারপর প্রার্থনা করি। ঈশ্বরের বাণী শুনেছি ও উপদেশ বাণী রাখা হয়েছে। ’
কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথিড্রালের প্রার্থনা সভায় ফাদার প্যাট্রিক গোমেজ বলেন, ‘আমরা এমন এক দিন বড়দিন উদযাপন করছি, যখন ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে। বিশ্বের অনেক জায়গায় হানাহানি চলছে। এ সমস্ত দেশে যেন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়, করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে মানুষ যেন সম্পূর্ণ মুক্ত হয়; এই উদ্দেশ্যে আসুন আমরা প্রভুর কাছে প্রার্থনা করি। ’ প্রার্থনায় তিনি বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রীর নিখাদ ভালোবাসাই হলো বড়দিন, সবার প্রতি সবার ভালোবাসাই হলো বড়দিন। দুস্থ মানুষের পাশে থাকাই হলো বড়দিন। বিশ্বব্যাপী সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি হোক। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর মানুষের শান্তি বজায় থাকুক। ’
কিউটিভি/আয়শা/২৫ ডিসেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/রাত ১১:০৮






