
ভালো থাকা
—————
কয়েক দিন আগে আমার চেম্বারে একজন নারী আসলেন। কুশলাদি জিগ্যেস করার পর জিগ্যেস করলাম কি সমস্যা? বললেন বুকের মধ্যে ধুকধুক করে, বুকে প্রচন্ড ব্যথা, মাথা ঘোরায়, সব কিছুতেই ভয় লাগে, যেকোন কাজ এ শুধু নেগেটিভ চিন্তা আসে, মাঝে মাঝে মনে হয় দম আটকে মরে যাবো? পাশের বাসায় কাউকে কাঁদতে দেখলেও চোখের পানি অনবরত ঝরতে থাকে, কারো কষ্ট দেখলে সহ্য করতে পারেন না ইত্যাদি ইত্যাদি।
তার সব কথা শুনলাম। তার প্রতিদিনের দৈনন্দিন কাজের রুটিন গুলো তার মুখ থেকেই জেনে নিলাম। আসলে তার তেমন কোন অসুখ হয়নি। এই নারীর অসুখটা তার মনের। উনি অতিরিক্ত দুঃশ্চিতা করেন, যেকোন বিষয় মাথায় ঢুকলেই সেটা নিয়ে ভাবতে বসে যান, সময়মতো খাবার খান না। সময় মত ঘুমান না। রাতের অর্ধেক নানান দুঃশ্চিতা করে পার করেন। নিজের যত্ন নিয়মিত করেন না। নিজের কোন কাজ ভালো লাগে তা জিগ্যেস করলে বলতে পারলেন না। সবশেষে জিগ্যেস করলাম নিজেকে ভালোবাসেন? অনেক সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে উওর দিলেন। নিজে কে তিনি ভালোবাসেন না। নিজেকে ভালো রাখার চিন্তা তার মাথায় কখনও আসে না। সারাক্ষণ সবার কথা ভাবেন তিনি। সবাই কে ভালো রাখতে চান। কিন্ত নিজেকে ভালো রাখার চিন্তা তার মাথায় কখনও আসে না! নিজেকে কিভাবে ভালো রাখতে হয় তা তার জানা নেই।
আমরা বেশির ভাগ মানুষেরাই বোধহয় এই বৈশিষ্ট্যের সবসময় চারপাশের সব মানুষ কে ভালো রাখতে চাই। এটা দোষের কিছু না। তবে সবাইকে ভালো রাখতে হলে সবার আগে আমাকে ভালো থাকতে হবে, নিজেকে ভালো রাখতে হবে। আমি যদি সুস্থ না থাকি! বা আমার মন যদি ভালো না থাকে! তবে আমি আমার চারপাশের মানুষ কে ভালো রাখতে পারবো না। নিজেকে ভালো রাখতে হলে নিজের যত্ন নিতে হবে সেটা সারা দিনে দশ মিনিট হলেও সমস্যা নেই। সারা দিনে দশ মিনিট হলেও নিজের ভালো লাগা এমন কোন কাজ করতে হবে যা আপনার মনকে শান্তি দিবে আপনার মনকে আনন্দে রাখবে। এই মানসিক ও শারীরিক শান্তির জন্য সময়মত সুষম খাবার খাওয়া, ঘুম,ধর্মীয় চর্চা, শারীরিক পরিশ্রম, ভালো চিন্তা করা,ভালো কাজ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা পরিবারের সান্নিধ্য, আমাদের চারপাশের মানুষের আচার আচরণ সব কিছু জড়িত। সবচেয়ে বেশি জরুরী আমার ভালো থাকার চেষ্টা থাকতে হবে, নিজেকে ভালোবাসতে হবে। এটা মাথায় থাকতে হবে আমি সুস্থ থাকলে আমি আমার চারপাশের সবাই কে ভালো রাখতে পারবো। এজন্যই আমার সুস্থ থাকাটা সবচেয়ে বেশি দরকার।
আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষই নিজেকে নিয়ে ভাববার সময় থাকে না। আমরা সবসময় আমাদের আপনজন আর চারপাশের কথা ভাবি। কিভাবে সবাই কে ভালো রাখা যায়! কিভাবে তারা আরও ভালো থাকতে পারবে? কিন্ত এতো বেশি ভাবতে গিয়ে নিজের যত্ন নিজের ভালো লাগা গুলো, নিজের আনন্দ গুলো, শখ গুলো ভুলে যাই। এই ভালো লাগা গুলো, আনন্দ গুলো, শখ গুলো, নিজের যত্ন গুলো ও যে অনেক জরুরী সেটা আমরা অনেকেই জানি না। এগুলো আমাদের জীবনের বেঁচে থাকার শক্তি। এই জীবনী শক্তি গুলো আমাদের ভালো থাকতে, ভালো রাখতে সাহায্য করে।
পরিশেষে এটাই বলবো আমরা আমাদের চারপাশের সবাই কে নিয়ে ভাববো। সবার যত্ন নিবো সবাই কে ভালোবাসবো। তবে সবার আগে নিজেকে ভালোবাসবো। নিজের যত্ন নিবো। আমি ভালো থাকবো। কেননা আমি ভালো না থাকলে সুস্থ না থাকলে কখনও অন্যদের ভালো রাখতে পারবো না। আবার ও বলি জীবন সুন্দর। বেঁচে থাকা আনন্দের।
লেখিকাঃ ইফ্ফাত আরা একজন মনোবিজ্ঞানী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজিতে পড়াশোনা করেন। এখন নিজ প্রতিষ্ঠান Family And Community Empowerment Support থেকে মানসিক রোগীদের চিকিৎসা করেন। ব্যস্ততার মাঝেও সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি করেন। আজকের এই পোস্টটি তাঁর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে সংগৃহিত।
কিউএনবি/বিপুল/০১.০৯.২০২২/ রাত ১১.৩৫