ব্রেকিং নিউজ
চিলমারীতে বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ : অব্যহতি দুই বিক্ষোভকারীকে কুড়িগ্রামে সেনাবাহিনী’র মাদক বিরোধী অভিযানে ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজাসহ আটক ১ ঢাবি’র জহুরুল হক হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন পুনর্গঠন : সদস্য সচিব নিয়ে বিতর্ক রাস্তায় অভিনেতা সিদ্দিককে মারধরের ভিডিও ভাইরাল ইন্টারপোলের মাধ্যমে হাসিনার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারির সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঢাবি দর্শন বিভাগের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত ঢাবি দর্শন বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ১৪তম পুনর্মিলনী ও কমিটি গঠিত হয়েছে সাইদ সোহরাব ও শেখ মো. নাসিম এর নেতৃত্বে ঢাবি মুহসীন হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন গঠন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিসপ্লে-তে ভেসে উঠেলো ‘ছাত্রলীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে’ কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, যুবদল নেতার মৃত্যু

সবাই বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি কমেরে…

superadmin | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২২ - ০২:০২:২১ পিএম

সবাই বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি কমেরে…
—————————————————-

বয়স বাড়ে নাকি কমে ? আমি কিছুই বলিনা। শুধু জানি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। সিঁড়ি দিয়ে চার তলায় উঠলে হাঁপিয়ে যাই। বিয়ে বাড়িতে জোড়ে গান বাজলে খুউব বিরক্ত হয়ে যাই। অনুষ্ঠানে কে কি শাড়ি পরলো, কে কি গহনা পরলো ফিরেও তাকাই না। দাওয়াত পেলে নির্দিষ্ট দিনে রেডি হতে ভীষণ ভয় পাই। বাইরে যাওয়ার কাপড় পরতে একদমই ভাল লাগেনা। কিছু কিনতে গেলে আগের মত দশটা দোকানে গিয়ে যাচাই বাছাই করতে মোটেই ভাল লাগেনা। খুব বেশি দামাদামি না করে সামান্য কমিয়ে জিনিসটা কিনে বাসায় ফিরতে পারলেই বাঁচি।

একসময় পছন্দমত একটা শাড়ি, ম্যাচিং ব্লাউজের কাপড় কিংবা সেন্ডেল কিনতে কত মার্কেট ঘুরেছি। চাঁদনি চক থেকে গাউসিয়া। গাউসিয়া থেকে নিউ মার্কেট। ঢাকা শহরের এমন কোন মার্কেট নেই যে ঘুরিনি। এত এনার্জি কোথায় পেতাম ? আর এখন মনে হয় আমার সেন্ডেলটাও যদি কেউ দয়া করে কিনে দিত বেঁচে যেতাম । ম্যাচিং তো দূরে থাক। কালো সেন্ডেল আর কালো ব্যাগ দিয়েই চালিয়ে দিচ্ছি বহুদিন।

মানুষ ৫০, ৬০, ৭০, ৮০, ৯০ বছরও বাঁচে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আমার যেদিন ষাট বছর পূর্ণ হল সেদিন থেকেই আমার মনের মধ্যে নানারকম ভাবনা শুরু হল। সবারই কি এমন হয় ? নতুন কোন কিছু করার, নতুন কিছু কেনার, বড় রকমের কোন পরিকল্পনা করার উদ্যমটাই যেন হারিয়ে ফেললাম। আমি যে খুব হতাশ এমনটাও নয়। আমার কোন অসুখ বিসুখও নেই। কেন জানি এই বয়সে এসে জীবনের হিসেব মিলাতেই বেশি ব্যস্ত হয়ে গেলাম। ষাট বছর বয়স পর্যন্ত কী করলাম ? কেন করলাম? কী করা উচিৎ ছিল ? কী করলে আরো ভাল হত ? সবচাইতে বেশি মনে হয় পরকালের কথা। আরো আগে কেন হেদায়েত পেলাম না। অনেক সময় নষ্ট করে ফেলেছি । কিছু ভাল কাজ করার সময় পাবো তো ?

আমার বয়োজ্যেষ্ঠ যারা আছেন তাঁদের সাথে কথা বলে জানতে ইচ্ছে করে তাঁদেরও কি আমার মত এমন হয়েছিল ?

আমার থেকে মাত্র সোয়া দুই বছরের বড় বোন রত্নার মুখ থেকে শুনলাম একই কথা। বুড়ো হয়ে যাচ্ছি রে ।শরীর ভাল লাগেনা, মন ভাল লাগে না। রত্নার সমবয়সী আমার অত্যন্ত প্রিয় সেনা পরিবারের নজরুল ভাবী তারও একই কথা, ভাবী বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। ৬৪ বছর বয়সী চাচাত ভাই কবিরের মুখেও একই কথা। বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। ষাট বছর বয়সের পরে সবাই কি এমনটাই ভাবে ? নাকি রকমফের আছে ?

দশ বছর আগেও সবকিছুতেই কত উছ্বাস, কত আবেগ ছিল।কতকিছু পরিকল্পনা করতাম । আত্মীয়স্বজন বন্ধু বান্ধবীদের সাথে হাসি আনন্দে মেতে থাকতাম । কোন অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে কত ভাবনা।কোন শাড়ি পরবো, সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি, ব্যাগ, জুতা পরতেই হবে। বিশেষকরে ভাইয়ের ছেলেমেয়ে, বোনের ছেলেমেয়েদের বিয়ে ঠিক হলে তো কথাই নেই। নিজের জন্য, বাচ্চাদের জন্য শপিং করার ধুম লেগে যেত।হলুদের অনুষ্ঠান এ একরকম ড্রেস পরতে হবে। এমনকি কোন কোন প্রোগ্রামে বান্ধবীরাও এক রকম শাড়ি পরেছি। সেসব দিনের কথা ভাবলে এখন অবাকই হই।

এখন কোন কিছুতেই আর আগের মত উৎসাহ পাইনা। নতুন শাড়ি কিনিনা প্রায় দশ বছর। আমেরিকার মত জায়গায় থেকেও মল এ গিয়েছি হাতে গোণা কয়েকদিন। এখন শুধু ভাল লাগে পুরোন মানুষদের কাছে যেতে, ভাল লাগে তাদের সান্নিধ্য পেতে।ইচ্ছে করে মন খুলে কথা বলতে। আর স্মৃতিচারণ করতে।ফিরে যেতে ইচ্ছে করে শৈশবের দিনগুলোতে।

বাবা মায়ের কথা খুউব বেশি মনে পড়ে। মনে পড়ে নিজের গ্রামের কথা, প্রাণের শহর নারায়ণগঞ্জের কথা। মর্গ্যান স্কুল, লালমাটিয়া কলেজ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোর কথা। নতুন সংসারের কথা। সন্তানদের জন্মের কথা। ওদের বেড়ে ওঠার কথা।ওদের নিয়ে সোনালি দিনগুলোর কথা।

আমি বিয়ের পর থেকে খুব সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলাম। চাকচিক্য কিংবা বিলাসী জীবনযাপন করার সাধ কিংবা সাধ্য কোনটাই আমাদের ছিলনা। আর এখনতো আরো বেশি সাধারণ জীবন বেছে নিয়েছি। বাহান্ন বছর বয়সে হজ্জ্ব করার পর মনে হল সময় এসেছে সবকিছু গুছিয়ে ফেলার। জীবনে অতিরিক্ত কোন কিছুরই প্রয়োজন নেই। কাপড়চোপড়, তৈজসপত্র, ঘরের অন্যান্য বাড়তি জিনিস বিলিয়ে দিতে শুরু করলাম। গত দশ বছরে বাড়তি জিনিস একেবারেই কেনা হয়নি। ২০১৩ সালে চলে গেলাম আমেরিকায়।

জীবনের মূল্যবান সাড়ে আট বছর কাটিয়েছি আমেরিকায়।সেখানেও কাটিয়েছি খুব সাধারণ জীবন। যেটুকু না হলেই নয়। আমি এতেই সন্তুষ্ট।তার বড় একটা কারণ আমাদের ধন সম্পদ খুবই কম এবং যেটুকু আছে গোছানো। ছেলেদের লেখাপড়া শিখিয়েছি, বিয়ে দিয়েছি। ওরা যে যার মত ভাল আছে। আলহামদুলিল্লাহ !

আমার মত বা কাছাকাছি যাদের বয়স তাদেরকেও একই কথা বলি, জীবনটাকে গুছিয়ে ফেলো। সংসারটাকে গুছিয়ে ফেলো। গোছানো মানে গুটিয়ে ফেলা নয়। জমি নিয়ে মামলা, কাগজপত্র এলোমেলো, মাথায় ঋণের বোঝা, ভাইবোন বন্ধু বান্ধবদের সাথে মনোমালিন্য এসব মিটিয়ে ঝামেলামুক্ত থাকার সৎ পরামর্শ দেই।

আমি নিজেও চেষ্টা করছি। প্রিয়জনদেরকেও বলছি। যতদিন বাঁচি যেন শরীর সুস্থ রাখা যায়, মন প্রফুল্ল থাকে, ঝামেলাবিহীন থাকতে পারি। সংসারের কঠিণ দায়িত্ব এখন আর নেই।মহান আল্লাহপাক ডাল ভাত খাওয়ার ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। এখন দ্বীনের কাজ করে, মানুষের জন্য কল্যাণের কাজ করে , সবার সাথে সৎভাব রেখে বাকি দিনগুলো পার করতে চাই।

আরো কিছুদিন সুস্থভাবে বাঁচতে চাই। নাতি আলী আর নাতনি মারইয়ামকে নিয়ে অনেক সময় কাটাতে মন চায়। ছেলেদেরকে যখন বড় করেছি তখন বয়স কম থাকলেও মাথায় প্রচন্ড চাপ ছিল। আর্থিক টানাটানিও ছিল।এখন স্বচ্ছলতা এসেছে। খরচও অনেক কমে গেছে। নাতি নাতনিকে নিয়ে সময় কাটাবো। ছোট্ট নাতনির মুখে যখন দাদাজান আর দাদীজান শব্দটা শুনি তখন মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়। এমন অপার্থিব ভালবাসা আর কোথায় পাবো ? এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে মন যেতে নাহি চায়, নাহি চায়।

 

লেখিকাঃ সালমা আনজুম লতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেছেন। তিনি নিয়মিত লেখালেখি করেন। প্রকাশ মাধ্যম নিয়ে তাঁর ভাবনা নেই। তিনি লেখালেখি করেন নিজের আনন্দ ভুবন সৃষ্টির লক্ষ্যে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত তাঁর লেখা বিশেষ আবেদন সৃষ্টি করে। সাবেক ক্রিকেটার নাফিস শাহরিয়ারের গর্বিতা মাতা সালমা আনজুম লতা’র ফেসবুক টাইমলাইন থেকে পোস্টটি সংগৃহিত।

 

বিপুল ১০/০৮/২০২২/ দুপুর ১.৩৯

▎সর্বশেষ

ad