
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হিন্দু বিধবা বললেই হয়তো সাদা কাপড় পরা গয়নাগাঁটিহীন, কিছুটা রুগ্ন চেহারার নারীদের কথা মনে পড়ে। কিন্তু তার বদল ঘটতে চলেছে ভারতের মহারাষ্ট্রের কোলাপুর জেলার একটি গ্রামে। জেলার হেরওয়ার গ্রামে স্থানীয় বিধবাদের এখন থেকে প্রচলিত কঠোর রীতি-নীতি মানতে হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হিন্দু বিধবারা দ্বিতীয় বিয়ে যেমন করতে পারবেন, তেমনই রঙিন পোশাক পরা বা সাজগোজ করায় আর কোনো বাধা থাকবে না।
হেরওয়ার গ্রাম পঞ্চায়েত ঠিক করেছে যে, এখন থেকে গ্রামের কোনো বিধবা নারীর দ্বিতীয়বার বিয়েতে কোনো বাধা থাকবে না। বিধবারা গলায় হার বা কপালে টিপ বা হাতে চুড়ি যেমন পরতে পারবেন, তেমনই রঙিন পোশাক পরবেন, আর তাদেরকে কোনো শুভ অনুষ্ঠান থেকে দূরে রাখা হবে না।গ্রামের বাসিন্দা এক নারী বৈশালী পাটিল ৯ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। তিনি বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পরে বিশেষ করে যখন কোনো কাজে বাইরে বের হতে হয়, সেটাই সবথেকে কষ্টের সময়। পোশাক পরিচ্ছদ বেছে নেওয়া থেকে শুরু করে পুরুষ মানুষদের কটু চোখের দৃষ্টি এড়ানো- সবই সহ্য করতে হয় আমার মতো নারীদের।
তিনি আরো বলেন, কোনো শুভ কাজে হয়তো আমাকে ডাকা হয়েছে, সেখানে গিয়ে কথা শুনতে হয় যে বিধবারা ওরকম অনুষ্ঠানে গেলে ওই পরিবারটির কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে অনেকবার পড়তে হয়েছে আমাকে। তার কথায়, গ্রাম পঞ্চায়েত যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে তার মতো বিধবারা ওই সব পরিস্থিতি থেকে এবার মুক্তি পাবে। এইসব নিয়ম আর আচার দীর্ঘকাল ধরে হিন্দু সমাজের সিংহভাগ পরিবারে কঠোরভাবে মানা হয়ে আসছে।হেরওয়ার গ্রামের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মানিক কালাপ্পা নাগাভেও বিধবা হয়েছেন বছর ১৫ আগে। কিন্তু তার স্বামী মৃত্যুর আগেই বলে গিয়েছিলেন যে, নাগাভেও যেন কোনো মতেই বিধবার বেশ না নেন।
তার কথায়, কপালে টিপ পরা, সাজগোজ করা, গলায় হার পরা, ভালো ভালো শাড়ি পরা – এসবই তো নিষিদ্ধ ছিল সমাজে। তবে আমি নিজে এগুলো সবই করতাম, কারণ আমার স্বামী মৃত্যুর আগেই এরকম বলে গিয়েছিলেন। তিনি আরো বলেন, আরো কেউ কেউ হয়তো নিজেরা এরকম ভেবেছেন, কিন্তু একটা গোটা গ্রামের মানুষ এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে – এটা খুবই ভালো হয়েছে। গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান সুরগোন্ডা পাটিল জানান, করোনার প্রথম আর দ্বিতীয় ঢেউতে অনেক তরুণ-যুবক মারা গেছেন গ্রামে। তাদের বিধবাদের বয়স সবে ২৫ থেকে ৪০ এর মধ্যে। প্রায় সবারই ছোট বাচ্চা আছে।
তিনি আরো জানান, সমাজে বিধবাদের যেসব সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়,তা আমাকে এসে জানাতো ওরা। তখনই মাথায় একটা চিন্তা আসে যে এদের কীভাবে এইসব আচার, রীতিনীতি থেকে মুক্তি দেওয়া যায়। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্য গ্রামের মানুষদের সঙ্গে, বিশেষত নারীদের সঙ্গে নানা ভাবে আলোচনা চালিয়েছেন তারা। মতামত নেওয়া হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেও। পাটিলের কথায়, তার পরে পয়লা মে গ্রামের সব মানুষকে ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেউই তো বিরোধিতা করেনি সিদ্ধান্তের। সিদ্ধান্তটা গ্রামের মানুষ নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়েছিল একটি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
ওই সংস্থার প্রধান প্রমোদ ঝিঞ্ঝাডের মাথাতেও বিধবাদের এই রীতি-নীতি থেকে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা আসে এক সহকর্মীর মৃত্যুর পরে তার বিধবা স্ত্রীর অবস্থা দেখে। তিনি বলছিলেন, সহকর্মীর করোনায় মৃত্যুর পরে তার পরিবারের পাশে খুব বেশি মানুষ গিয়ে দাঁড়াতে পারেননি। তবে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। তখন তার সদ্য বিধবা স্ত্রীর গা থেকে এক এক করে গয়না খুলে নেওয়া হচ্ছে, মঙ্গলসূত্র খুলে নেওয়া হলো, সিঁদুর মুছিয়ে দেওয়া হলো আর সেসব আগুনে ফেলে দেওয়া হলো। এসবই আবার করাচ্ছিলেন কয়েকজন বিধবা নারী।
সূত্র: বিবিসি।
কিউটিভি/আয়শা/১৩ই মে, ২০২২/৩০ বৈশাখ, ১৪২৯/বিকাল ৩:৩৩