
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়া-ইউক্রেন, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ ছাড়াও বেশ কিছু দেশের মধ্যে সংঘাতের মাঝে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক ড্রোন প্রযুক্তি। এতে যুদ্ধে খরচ কমে আসার পাশাপাশি পাল্টে যাচ্ছে যুদ্ধের গতিপথ। তাই ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে শুরু করে বিশ্বের অধিকাংশ যুদ্ধক্ষেত্রে বাড়ছে ড্রোনের ব্যবহার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে যুদ্ধে মোট হতাহতের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই হচ্ছে ড্রোন হামলায়। এরই মধ্যে ইউরোপের বহু দেশে ড্রোন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় নতুন করে নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে দেশগুলোকে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
মানব ইতিহাসের এক নির্মম বাস্তবতা যুদ্ধ। আর ২০২৫ সালে এসে যুদ্ধের এক নতুন রূপের সাক্ষী হচ্ছে বিশ্ব। যুদ্ধ মানে এখন শুধু ট্যাংক, কামান বা বন্দুক হাতে সেনা অভিযান নয়। ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত দেখিয়ে দিচ্ছে, যুদ্ধক্ষেত্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী অস্ত্র এখন ড্রোন।
ড্রোন বিশেষজ্ঞ বেঞ্জামিন ওলগ বলেন, ‘এটি যুদ্ধকে আমূল বদলে দিয়েছে। এখন প্রায় ৫ থেকে ২০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে তৈরি হচ্ছে “ড্রোন কিলিং জোন”। এর ভেতর কোনো সামরিক যান বা শত্রুপক্ষের কোনো ড্রোন প্রবেশ করা মাত্রই তা শনাক্ত করে ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব।’
ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইনে এখন সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ছোট, সস্তা কিন্তু ভয়ংকর এফপিভি ড্রোন। বর্তমান যুদ্ধে মোট হতাহতের একটি বিশাল অংশই প্রাণ হারাচ্ছে এই ড্রোনের আঘাতে।
বেঞ্জামিন ওলগ আরও বলেন, ‘এসব ড্রোনের কারণে যুদ্ধের খরচ অনেক কমে গেছে। মাত্র কয়েকশ ডলার দামের ড্রোন দিয়েই এখন ধ্বংস করা হচ্ছে মূল্যবান জীবন, মিলিয়ন ডলার মূল্যের ট্যাংক এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা ও অবকাঠামো।’
ড্রোন যুদ্ধের প্রভাব শুধু সামরিক ক্ষেত্রেই নয়, সাধারণ জনগণও এর অন্যতম ভুক্তভোগী। রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের শহরগুলোতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। বহু মানুষ আহত হয়ে মানবেতর জীবন পার করছে।
এদিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ড্রোন অনুপ্রবেশের কারণে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হয়েছে জার্মানি, বেলজিয়াম ও ডেনমার্কসহ একাধিক দেশের বিমানবন্দর। ড্রোন হুমকি ঠেকানোর জন্য অনেক দেশ এরই মধ্যে ‘ড্রোন প্রাচীর’ তৈরির কথাও ভাবছে।
সেই সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নে বাড়তি নজর দিচ্ছে যুদ্ধপ্রবণ দেশগুলো। রেডিও সিগন্যাল জ্যামিং এড়াতে শুরু হয়েছে ফাইবার অপটিক্যাল ড্রোনের ব্যবহার। ইউক্রেনে সরবরাহ পথ ধ্বংসে এই প্রযুক্তি ইতিমধ্যে বড় প্রভাব ফেলেছে।
শুধু আকাশে নয়, পানির নিচেও বাড়ছে ড্রোনের ব্যবহার। সাবমেরিন নজরদারি, মাইন শনাক্তকরণ এবং গুরুত্বপূর্ণ সাবমেরিন কেবল ও পাইপলাইন রক্ষায় ব্যবহার হচ্ছে এসব ড্রোন।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, আগামীতে ড্রোন পরিচালনায় ব্যাপক পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই চালিত ড্রোন তখন পাইলট ছাড়াই নিজে নিজে লক্ষ্য শনাক্ত করতে পারবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দিনে এআই ড্রোনই হতে পারে যুদ্ধক্ষেত্রের প্রধান শক্তি।
অনিমা/২৩ ডিসেম্বর ২০২৫,/সকাল ৮:৪৫






