
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ড ভ্লাদিমির পুতিন খেলাটা শুরু করেছিলেন। এবার সেই খেলার ময়দানে নেমে পড়লেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। স্নায়ুযুদ্ধের মতো এ যেন এক অঘোষিত যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। শক্তি প্রদর্শনের লড়াই পৌঁছে গেছে পারমাণবি অস্ত্র পর্যন্ত। ডুমসডে বা মহাপ্রলয় দিবস আনতে সক্ষম এমন সীমাহীন পাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর ঘোষণা কয়েকদিন আগেই দিয়েছিলেন পুতিন।
সেখানেই শেষ নয়, গতকাল বুধবার এক সুপার টর্পেডোর পরীক্ষা চালানোর ঘোষণাও দেন পুতিন। এই টর্পেডোও পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম। কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই একে আটকাতে পারবে না বলে দাবি করেন পুতিন।
অন্যদিকে উত্তর কোরিয়াও একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাচ্ছে। নিজেদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক শক্তিশালী দেশ হিসেবে প্রমাণ করতে কোনো কসুর করছেন না কিম জং উন।
ফলে ট্রাম্পও আর বসে থাকতে চাইছেন না। তিনিও তার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মাঠে নেমে পড়েছেন। দিয়েছেন এক নজিরবিহীন নির্দেশনা। বলেছেন, তার হাতে আর কোনো বিকল্প নেই। প্রতিপক্ষরাই তাকে বাধ্য করছে মহা ঝুঁকিপূর্ণ এই খেলার ময়দানে নামতে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, পরমাণু যুদ্ধের দিকেই কি আগাচ্ছে বিশ্ব?
চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অবিলম্বে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৯৯২ সালের পর এই প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্র ফের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার পথে হাঁটতে চলেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠকের ঠিক আগে, বুধবার রাতে (স্থানীয় সময়) নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এই নির্দেশ দেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প জানান, অন্যান্য দেশের পরীক্ষা কর্মসূচির কারণে তিনি যুদ্ধ বিভাগকে সমতার ভিত্তিতে নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, এই প্রক্রিয়া অবিলম্বে শুরু হবে।
ট্রাম্পের মতে, বর্তমানে বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এরপর রয়েছে রাশিয়া, এবং অনেক পেছনে তৃতীয় স্থানে আছে চীন। তবে তিনি হুঁশিয়ারি দেন যে পাঁচ বছরের মধ্যে চীনের পারমাণবিক কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রের সমপর্যায়ে পৌঁছে যাবে।
মাত্র কয়েক দিন আগেই ট্রাম্প সীমাহীন পাল্লার পারমাণবিক শক্তিচালিত ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার জন্য রাশিয়ার সমালোচনা করেছিলেন। পারমাণবিক অস্ত্রের প্রচণ্ড ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা স্বীকার করে ট্রাম্প লেখেন, তার হাতে অস্ত্রাগারকে হালনাগাদ ও সংস্কার করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল নেই।
১৯৯২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর শেষবার যুক্তরাষ্ট্র ভূগর্ভে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল। তৎকালীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ.ডব্লিউ. বুশ স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তির পর একটি স্থগিতাদেশ জারি করেছিলেন। নেভাডার যে পরীক্ষাস্থলে শেষ পরীক্ষা হয়েছিল, সেই নেভাডা টেস্ট সাইটটি এখনও মার্কিন সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রয়োজন হলে আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার জন্য অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে বলে জানাচ্ছে ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ নিউক্লিয়ার সায়েন্স অ্যান্ড হিস্ট্রি।
তবে ট্রাম্প তাঁর পোস্টে এই পরীক্ষাগুলো কীভাবে পরিচালিত হবে সে বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি। তাঁর এই আচমকা নির্দেশ বিশ্বজুড়ে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ কাঠামো এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: বিবিসি
অনিমা/৩০ অক্টোবর ২০২৫,/দুপুর ১২:০৩






