সে সময় সুদের লেনদেনও চালু ছিল। সুরা নিসার আয়াত থেকে জানা যায় যে, হজরত মুসা (আ.)-এর যুগেও ইহুদীদের মধ্যে সুদের লেনদেনের প্রচলন ছিল এবং মুসা (আ.)-এর কাছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত কিতাব তাওরাতেও ‘রিবা’ অর্থাৎ সুদের লেনদেনকে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে।
সুতরাং যে শব্দটি প্রাচীনকাল থেকে আরব ও তার আশপাশের এলাকায় পরিচিত ছিল এবং সে অনুযায়ী লেনদেনের প্রচলন ছিল, পবিত্র কোরআনে এর প্রতি নিষেধাজ্ঞা বর্ণনা করার পাশাপাশি এ কথাটিও উল্লেখ করা হয়েছে যে, মুসা (আ.)-এর উম্মতের জন্যও রিবা তথা সুদ হারাম করা হয়েছিল; তাই তা এমন কোনো বিষয় নয়, যা কোরআন নাজিল হওয়ার সময় সাহাবায়ে কেরামের পক্ষে বুঝা বা বুঝানো কঠিন ছিল। তারা সকলেই রিবার বাস্তবতা বুঝতেন। তাদের কাছে একথা স্পষ্ট ছিল-
كل قرض جر نفعا فهو ربا অর্থ: যে ঋণ ঋণদাতার জন্য কোনো ধরনের মুনাফা বয়ে আনে সেটাই রিবা।সব ধরনের সুদ হারাম
এ কারণে অষ্টম হিজরিতে সুরা বাকারার রিবা সম্পর্কিত আয়াতগুলো যখন নাজিল হয় তখন সাহাবায়ে কেরামের পক্ষে রিবা’র নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক বিধান বুঝতে এবং মেনে নিতে কোনোরূপ বেগ পেতে হয়নি। মদ্যপানের প্রতি নিষেধাজ্ঞা যেমন তারা নির্দ্বিধায় মেনে নিয়েছিলেন, তেমনি রিবা সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা নাজিল হওয়ার পর তাও তারা অকপটে মেনে নিয়ে সব ধরনের সুদি লেনদেন ছেড়ে দিয়েছিলেন।
ইসলামে রিবা’র নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে কেবল নৈতিক বিবেচনার অধীনে রাখেনি; বরং তাকে পুরোপুরি আইনের মর্যাদা দিয়েছে। এ বিষয়ে বিদায় হজে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঐতিহাসিক ভাষণের সংশ্লিষ্ট অংশটুকু বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أَلَا كُلّ شَيْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيّةِ تَحْتَ قَدَمَيّ مَوْضُوعٌ،… وَرِبَا الْجَاهِلِيّةِ مَوْضُوعٌ অর্থ: সাবধান! জাহেলিয়্যাতের প্রত্যেক বিষয় আমার দু’পায়ের নিচে।… জাহেলি যুগের ‘রিবা’ বাতিল। (মুসলিম: ১২১৮)
সুদের ভয়াবহ ৩ পরিণতিমেরাজের রাতে নবীজি এমন লোকদের দেখলেন,
যাদের পেট ছিল এক একটি গৃহের মতো। পেটের ভেতরটা ভর্তি ছিল সাপে, যা বাইরে থেকেই দেখা যাচ্ছিল। প্রশ্ন করা হলে জিবরাইল (আ.) জানালেন, ‘এরা সুদখোর।’ (আহমদ : ২/৩৫৩)
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, আমরা (আমি, জিবরাইল (আ.) ও মিকাইল (আ.) চলতে চলতে একটি রক্ত নদীর পাড়ে পৌঁছলাম। নদীর মাঝে এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। তীরে দাঁড়িয়ে আছে আর একজন। তার কাছে কিছু পাথর আছে। নদীর ভেতরের লোকটি তীরে এসে যখনই পাড়ে উঠার চেষ্টা করে তখনই তীরের লোকটি তার মুখ বরাবর পাথর ছুড়ে তাকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে দেয়। যতবার উঠার জন্য অগ্রসর হচ্ছে ততবারই মুখের ওপর পাথর ছুড়ে পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে দিচ্ছে। আমি বললাম, এ কে? তারা (জিবরাইল (আ.) ও মিকাইল(আ.) উত্তর দিলেন, নদীর ভেতরের লোকটি একজন সুদখোর। (বুখারি: ২০৮৫)
শুধু তাই নয়, রসুল (সা.) সুদখোরকে, সুদ দাতাকে, সুদের লেখককে, সাক্ষীকে অভিশাপ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এরা সবাই সমান অপরাধী। (মুসলিম ৪১৭৭) যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে, তারা বলে, ব্যবসা তো সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৫)
আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং সদকাহকে বৃদ্ধি দেন। (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭৬)