
ডেস্ক নিউজ : জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে সংকল্পবদ্ধ হন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান। ১৭ জুলাই থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে অধীনস্থদের সর্বোচ্চ বল প্রয়োগের মাধ্যমে আন্দোলন দমনে গুলির নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে চূড়ান্ত নির্দেশ দেন তার অধীনস্থ চার কর্মকর্তা। তারা সবাই আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন করে দায়িত্ব ও কর্তব্য ভুলে শেখ হাসিনার নির্দেশে আন্দোলন দমনের সর্বাত্মক চেষ্টা চালান।
মামলায় গ্রেফতার চার আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। একজন আসামি বলেন, ঘটনার দিন তার দায়িত্ব চানখাঁরপুল এলাকায় ছিল না। তিনি শাহবাগ এলাকায় দায়িত্বে ছিলেন। আগামী ১০ আগস্ট এ মামলায় প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন এবং ১১ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হাবিবুর রহমান ৫ আগস্ট ভোর পাঁচটার দিকে শাহবাগ থানায় উপস্থিত হয়ে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের যে কোনো মূল্যে আন্দোলন দমনে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন। তার নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেন ডিএমপির তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল ও পুলিশ পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন। তাদের নির্দেশ মোতাবেক ওইদিন চানখাঁরপুল এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়, যেন আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে অগ্রসর না হতে পারে।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, এই পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশে কনস্টেবল সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ইমন ও নাসিরুল ইসলাম প্রাণঘাতী চাইনিজ রাইফেল দিয়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করেন। এতে শহীদ হন শিক্ষার্থী শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক এবং মানিক মিয়া। সোমবার এ মামলায় গ্রেফতার চার আসামি শাহবাগ থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন ও কনস্টেবল নাসিরুল ইসলামকে অভিযোগ গঠনের শুনানিতে হাজির করা হয়। বাকি চার আসামি ঢাকা মহানগর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম এবং রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুলকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার কাজ চলবে।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনান বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ। এ সময় আসামিদের তিনি জিজ্ঞেস করেন তারা অপরাধ স্বীকার করেন কি না। এরপর প্রথমে শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেনকে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট দুপুরে চানখাঁরপুল এলাকায় আদিষ্ট হয়ে আপনি আপনার অধীন যারা ছিলেন, তাদের চায়নিজ রাইফেল ও শটগান দিয়ে গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন। আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা স্বীকার করেন কি না?’ জবাবে আরশাদ হোসেন বলেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা তিনি স্বীকার করেন না।
সেদিন তার ডিউটি ছিল শাহবাগ এলাকায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে। তা ছাড়া কাউকে গুলি করার নির্দেশ দেওয়ার এখতিয়ার তার ছিল না। কনস্টেবল সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও নাসিরুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘চানখাঁরপুল এলাকায় গত বছরের ৫ আগস্ট দুপুরে আপনারা আদেশপ্রাপ্ত হয়ে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করেছেন। আপনারা দোষ স্বীকার করেন কি না?’ কনস্টেবল সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও নাসিরুল ইসলাম একই জবাব দেন। তারা বলেন, তারা সম্পূর্ণ নির্দোষ। তারা অপরাধ অস্বীকার করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করলে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা গত ১১ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেন। নথিপত্র পর্যালোচনা করে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ২৫ মে ফরমাল চার্জ আকারে তা দাখিল করেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে সেদিন ট্রাইব্যুনাল হাবিবুর রহমানসহ পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে ৭৯ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এছাড়া ১৯টি ভিডিও, পত্রিকার ১১টি রিপোর্ট, ২টি অডিও, বই ও রিপোর্ট ১১টি এবং ৬টি ডেথ সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা হয়।
আয়শা//১৫ জুলাই ২০২৫,/রাত ৯:১২