
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হিজবুল্লাহর মোকাবিলায় প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বিমান ও ড্রোন হামলার পর গত ১ অক্টোবর লেবাননে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে ইসরাইল। হাজার হাজার ট্যাংক ও সাজোঁয়া যান নিয়ে দক্ষিণ লেবাননে ঢুকে পড়ে দেশটির সেনাবাহিনী। তবে হিজবুল্লাহর ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়ে।
সেই থেকে দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলি বাহিনী ও হিজবুল্লাহর মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। এই লড়াইয়ের মধ্যে ওই এলাকায় অবস্থিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অবস্থানেও হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। গত এক সপ্তাহে অন্তত দুইবার হামলা চালানো হয়েছে। এতে ৫ শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘসহ বিশ্বের শতাধিক দেশ ইসরাইলের এমন বেপরোয়া আচরণের নিন্দা জানালেও তাতে কর্ণপাত করছেন না ইসরাইলি নেতারা। এবার শান্তিরক্ষা মিশনের ঘাঁটির প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েছে ইসরাইল সেনা ও ট্যাঙ্ক।
খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রোববার (১৩ অক্টোবর) ইউনিফিল শান্তিরক্ষী সেনাদের দক্ষিণ লেবানন থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য জাতিসংঘ প্রধানকে হুঁশিয়ারি দেন। এই হুঁশিয়ারির কয়েক ঘণ্টা পরই ইসরাইলের অন্তত দুইটি ট্যাঙ্ক শান্তিরক্ষা মিশনের ঘাঁটিতে হামলা করে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা রোববার দুপুরে এক বিবৃতিতে জানায়, দুটি ইসরাইলি মেরকাভা ট্যাঙ্ক তাদের ঘাঁটির প্রধান গেট ‘ধ্বংস’ করেছে এবং শান্তিরক্ষীরা ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় জোরপূর্বক ঢুকে পড়ে। শান্তিরক্ষীরা প্রতিবাদ করার প্রায় ৪৫ মিনিট পর ট্যাংকগুলো চলে যায়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এরপর বিকেলে শান্তিরক্ষা মিশনের ঘাঁটির মাত্র ১০০ দূরে বেশ কয়েক রাউন্ড গোলা ছোড়ে। গোলাগুলো এক ধরণের রাসায়নিক এজেন্ট বলে মনে হচ্ছে। এতে মাস্ক পরে থাকা সত্ত্বেও অন্তত ১৫ জন শান্তিরক্ষী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন।
দক্ষিণ লেবানন নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার জন্য ১৯৭৮ সালে গঠন করা হয় ইউনিফিল শান্তিরক্ষী বাহিনী। এরপর ওই এলাকায় ১৯৮২ সালে আগ্রাসন চালায় ইসরাইল দক্ষিণ লেবানন দখল করে নেয়। তবে ২০০০ সালে ওই এলাকা পুনর্দখল করে হিজবুল্লাহ। এরপর আবার ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর সাথে ইসরাইলের যুদ্ধ শুরু হয় যা এক মাসেরও বেশি স্থায়ী হয়।
গত তিন সপ্তাহ ধরে ইসরাইল লেবাননে যে হামলা চালাচ্ছে তা কয়েক দশকের মধ্যে অনেক বেশি প্রাণঘাতী। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী হিজবুল্লাহর জন্য মানব ঢাল হিসাবে কাজ করছে বলে নেতানিয়াহু অভিযোগ করেন। তবে হিজবুল্লাহ এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইসরাইলের কর্মকর্তারা বলছেন, ইউনিফিল শান্তিরক্ষী বাহিনী ২০০৬ সালের যুদ্ধর পর পাস হওয়া জাতিসংঘ প্রস্তাবনা ১৭০১ বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ওই প্রস্তাবনার আওতায় দক্ষিণ লেবানন সীমান্ত অস্ত্র ও সেনামুক্ত রাখতে বলা হয়েছিল।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রধান জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রোয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ভেঙে পড়েছে। তারা নিজ নিজ অবস্থানে থাকলেও তাদের কাজ ২৩ সেপ্টেম্বর থেকেই থমকে গেছে।
লেবাননে বর্তমানে ১০ হাজার শান্তিরক্ষী রয়েছে। তবে তারা ঘাঁটিতেই থাকে। ৩০০ শান্তিরক্ষীকে সম্প্রতি সাময়িকভাবে বড় ঘাঁটিগুলোতে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানান জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রোয়া। জাতিসংঘের কয়েকটি সূত্র বলেছে, ইসরাইলের হামলার কারণে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের বিষয়টিতে শান্তিরক্ষীদের নজর রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে তারা আশঙ্কা করছে।
কিউটিভি/আয়শা/১৩ অক্টোবর ২০২৪,/রাত ১১:৪৩