ব্রেকিং নিউজ
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হলেন হুমায়ুন কবির  মেয়েকে ধর্ষণ, নরপিশাচ পিতার কারাদণ্ড কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপিকে নিয়ে পাহাড়সম অভিযোগঃ ১০ মাসেও হয়নি কাউন্সিল সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : শিক্ষক,লেখক-সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতিম্যান একজনের বিদায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে উপকৃত হবেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক- ভিসি ড.আমানুল্লাহ ফেরদৌস বাজে ব্যাটিংয়ে ফাইনাল মিস বাংলাদেশের জনস হপকিন্সের সাথে কাজ করবে বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  মজিদা কলেজে ৪০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ, তোলপাড় কুড়িগ্রাম খারুয়ার পাড়ে ভাঙ্গনের শব্দ থেমে যাক — বদরুদ্দীন উমর : শিরদাঁড়া বাঁকা করে বাঁকা হয়নি যার

পবিত্র লাইলাতুল বরাতের ইবাদত

uploader3 | আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ - ০২:১০:৩৩ পিএম

ডেস্ক নিউজ : শাবান মাসের পবিত্রতম রাত লাইলাতুল বরাত। শাবানকে বলা হয় রমজানের প্রস্তুতিমূলক মাস। এ মাসেই পবিত্র কাবাকে মুসলমানদের কেবলা হিসেবে নির্ধারণ করেন মহান আল্লাহ। মাহে রমজানের প্রস্তুতিমূলক মাস হিসেবে মুসলমানের কাছে শাবান অত্যন্ত বরকতময় বলে বিবেচিত। 

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রসুল (সা.)-কে রমজান ছাড়া এত বেশি রোজা রাখতে দেখিনি, যত বেশি রোজা তিনি শাবানে রাখতেন।’ হঠাৎ রমজানে রোজা রাখতে শুরু করলে উম্মতের জন্য কষ্ট হতে পারে, সেজন্য উম্মতের কষ্ট লাঘবে নিজে রোজা রেখেই রসুল (সা.) উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন, ‘আমি শাবান মাসে বেশি রোজা রাখছি। তোমরা আমাকে অনুসরণ করে এ মাসে বেশি বেশি রোজা রাখো, তাহলে রমজানের ফরজ রোজা রাখতে তোমাদের কষ্ট হবে না।’

পবিত্র রমজানে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মুসলমানের ওপর রোজা রাখা ফরজ। রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে রোজা রাখা ফরজ নয়। তবে নফল রোজা রাখার অনেক ফজিলত রয়েছে। রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই জান্নাতে রাইয়ান নামে একটি ফটক রয়েছে। কিয়ামত দিবসে এতে রোজাদাররা প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া কেউ এতে প্রবেশ করবে না। আহ্বান করা হবে রোজাদাররা কোথায়? তারা প্রবেশ করার পর ওই ফটক বন্ধ করা হবে। এরপর আর কেউ প্রবেশ করবে না।’ (বোখারি, মুসলিম)।

অন্য এক বর্ণনায় উল্লেখ আছে, ‘আল্লাহর জন্য কেউ এক দিন রোজা পালন করলে এর বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে তাকে সত্তর বছর দূরত্বে সরিয়ে দেবেন।’ (বোখারি, মুসলিম)।

আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রসুল (সা.) এমন ধারাবাহিকভাবে রোজা রেখে যেতেন যে, আমরা ধারণা করতাম তিনি আর রোজা বিরতি দেবেন না। আবার বিরতি দিলে আমরা ধারণা করতাম হয়তো আর রোজা রাখবেন না। এক মাস রমজান ছাড়া পূর্ণ মাস রোজা পালন করতে আমি রসুল (সা.)-কে দেখিনি। দেখিনি তাকে শাবান অপেক্ষা অন্য কোনো মাসে অধিক পরিমাণে রোজা পালন করতেও।’ (নাসায়ি : ২১৭৬)। 

অন্য হাদিসে তিনি বর্ণনা করেন, ‘নবীজি (সা.) শাবানের চেয়ে বেশি রোজা কোনো মাসে রাখতেন না। তিনি পুরো শাবান মাসই রোজা রাখতেন এবং বলতেন তোমাদের মধ্যে যতটুক সামর্থ্য আছে ততটুকু আমল করো। কারণ তোমরা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়া পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা প্রতিদান বন্ধ করেন না। নবীজি (সা.)-এর কাছে বেশি পছন্দনীয় নামাজ হলো যা নিয়মিত করা হতো, যদিও তা পরিমাণে স্বল্প। আর তিনি যখন কোনো নফল নামাজ আদায় করতেন এর ধারাবাহিকতা তিনি অব্যাহত রাখতেন।’ (বোখারি)

রসুল (সা.) মাহে রমজানের প্রস্তুতিস্বরূপ শাবানের চাঁদের হিসাব রাখার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ‘তোমরা রমজানের সম্মানার্থে শাবানের চাঁদের হিসাব গণনা করে রাখো।’ (তিরমিজি)।

রজব ও শাবান আগমন করলেই রসুল (সা.) এ দোয়াটি বেশি পাঠ করতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবানকে বরকতময় করে দিন এবং আমাদের হায়াত রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। (নাসায়ি)।

আবুবকর বলখি (রহ.) বলেন, রজব ঠান্ডা বাতাসের মতো, শাবান মেঘমালার মতো, আর রমজান হলো বৃষ্টির মতো। (লাতায়েফুল মা’আরিফ) রমজানে দিনে রোজা ও রাতে জাগরণ করে যেন ইবাদত করা যায় তার জন্য রমজানের আগে লাইলাতুল বরাতে জাগরণ ও দিনে রোজা রাখাকে পছন্দ করেছেন। যাতে রমজানের রাতদিনের ইবাদতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। 

রমজান শুরু হওয়ার আগে শাবানে বেশি বেশি রোজা ও অন্য ইবাদতের মাধ্যমে রমজানের জন্য মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘লাইলাতুল বরাত রাতে আল্লাহতায়ালা বান্দার প্রতি নজর দেন (যারা ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে তওবা করেন) সবাইকে মাফ করে দেন একমাত্র মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া।’ লাইলাতুল বরাতে ক্ষমা প্রাপ্তির মাধ্যমে রমজানের রহমত, মাগফিরাত, নাজাত পাওয়ার জন্য পরিপূর্ণভাবে শিরক ও হিংসা থেকে মুক্ত হতে হবে। 

রসুল (সা.) লাইলাতুল বরাতে বেশি বেশি ইবাদত ও পরদিন রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। (মিশকাত) বর্তমানে লাইলাতুল বরাত পালন করা হলেও এর ফজিলত পাওয়ার জন্য শিরক ও হিংসা থেকে মুক্ত হওয়ার যে সক্ষমতা অর্জন করা দরকার তা আমাদের অনেকের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা কত ধরনের শিরকে লিপ্ত আছি, চিন্তা করলে আতঙ্কিত হতে হয়। এ শিরক থেকে মুক্ত না হয়ে কতটুকু ফজিলত অর্জন করা যাবে তা ভেবে দেখার বিষয়।

লাইলাতুল বরাতের পবিত্র রাতের ফজিলত পাওয়ার জন্য যে দুটি শর্ত রয়েছে তা মেনে যদি আমরা শিরক ও হিংসামুক্ত হতে পারি তাতে লাইলাতুল বরাতের ফজিলত পাওয়া যাবে এবং রমজানে ইবাদত করার জন্য পূর্বপ্রস্তুতিও গ্রহণ করা হবে। এতে রমজানের রহমত, মাগফিরাত, নাজাত পাওয়ার পথও অধিকতর উন্মুক্ত হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে শাবানে বেশি বেশি ইবাদত করা ও রমজানের প্রস্তুতি নেওয়ার তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

কিউটিভি/অনিমা/২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪/দুপুর ২:১০

▎সর্বশেষ

ad