
লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী বয়স্ক মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে বার্ধক্যজনিত রোগসমূহের প্রকোপও বেড়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নাগরিকদের জন্য ৬০ বছর ও তদূর্ধ্ব এবং উন্নত দেশগুলোর জন্য ৬৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীকে প্রবীণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বয়স্কদের রোগব্যাধি
মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুল পাকা, ত্বকে বলিরেখাসহ দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি কমতে থাকে, চোখে ছানি পড়ে। কমতে থাকে কিডনি ও লিভারের কার্যক্ষমতা। বয়স্কদের খাদ্যাভ্যাস, কায়িক পরিশ্রমের ঘাটতি, ওষুধ খেতে ভুলে যাওয়া প্রভৃতি নানা কারণে ডায়াবেটিসের মাত্রা ওঠানামা করে। হাইপোগ্লাইসেমিয়া বয়স্ক ব্যক্তিদের বেলায় অত্যন্ত বিপজ্জনক।
বয়স্কদের সাধারণত সিস্টোলিক হাইপারটেনশন এবং কারও কারও অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বয়স্কদের বিশেষভাবে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। রক্তনালি সরু হওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি হতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড় ক্ষয় হয়ে অস্টিওপোরেসিস দেখা দেয়।
এ ছাড়া অস্টিও আর্থাইটিসের কারণে বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হয় ও কার্যক্ষমতা কমে যায়। অনেকে দীর্ঘ সময় ব্যথানাশক ওষুধ বা এনএসআইডিএস খেয়ে থাকেন, যা কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করে। বয়স্ক পুরুষদের প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে ঘন ঘন প্রস্রাব লাগা, প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা, প্রস্রাব করতে কষ্ট হওয়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া বয়স্ক মহিলাদের প্রস্রাবে ইনফেকশন হতে পারে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঘোরানো, হাত-পা কাঁপা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, ঘুম কমে যাওয়া, আলঝেইমারস বা ডিমনেশিয়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিচার-বিবেচনা, চিন্তাক্ষমতা, বোধশক্তি, আবেগ-অনুভূতির পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
বয়স্ক মানুষের খুব সহজেই পানিশূন্যতা বা লবণের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ডায়রিয়া, বমি হলে প্রচুর পরিমাণে পানি, স্যালাইন, ডাবের পানি খাওয়াতে হবে। এ সময় দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে। বয়স্কদের নিউমোনিয়া বা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, প্রস্রাবে ইনফেকশন প্রকৃতি থেকে সেপটিসেমিয়া মাল্টি অর্গান ফেইলিওরের মতো জীবনসংহারী সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যেকোনো ধরনের ইনফেকশনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া বয়স্ক মানুষের নানা ধরনের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই প্রবীণদের ব্যাপারে অধিক সচেতন হতে হবে।
প্রবীণদের দায়িত্ব
– স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস মেনে চলুন। নিয়মিত হাঁটুন। কোনো অবস্থাতেই দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকবেন না।
– চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ওষুধ সেবন নয়।
– নির্দিষ্ট সময় অন্তর চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
– কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যাকে ছোট মনে করবেন না বা লুকিয়ে রাখবেন না।
– এ সময় হাড় ক্ষয় হয়ে ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় বলে পিচ্ছিল জায়গা পরিহার করুন। বাথরুম, গোসলখানা সব সময় শুকনো রাখুন। হাঁটার সময় প্রয়োজনে লাঠি ব্যবহার করুন। সিঁড়ি ব্যবহারের সময় রেলিং ধরে নামবেন।
লেখক: ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ও হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ, কনসালট্যান্ট, ইমপালস হাসপাতাল, তেজগাঁও, ঢাকা।
কিউটিভি/আয়শা/০১ অক্টোবর ২০২৩,/বিকাল ৪:১২