
ডেস্ক নিউজ : ছিনতাই হওয়ার ১১ দিন পর মোবাইল ফোন ফিরে পেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী পারিশা আক্তার। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে তার হাতে মোবাইল ফোনটি তুলে দেওয়া হয়। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পারিশা আক্তার। তিনি বলেন, আমি আসলে অনেক খুশি। এসআই তারেক জাহান আমাকে প্রতিনিয়ত আপডেট জানিয়েছেন। কখন কি হচ্ছে আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন। উনারা চেষ্টা করেছেন, সাকসেস হয়েছেন।
আমার কাছে ভালো লাগছে আমার ফোনটা উদ্ধার হয়েছে। ছিনতাইকারী ধরা পড়েছে- এটাই হলো সবচেয়ে বড় কথা। পারিশা বলেন, ওনাদের (পুলিশের) যে কার্যক্রম ছিল এটা যেন আরও কঠোরভাবে করা হয়, ছিনতাইকারী যেন জামিনে ছাড়া না পায়। পরবর্তীতে জামিনে ছাড়া পেয়ে এ ধরনের কাজ যেন আর না করে। ওনাদের (পুলিশের) যে সেকশনগুলো তারা যেন ছিনতাকারীদের জন্য আরেকটু কঠোর হয়। আমি চাই তাদের (ছিনতাইকারীদের) কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক এবং তারা যেন জামিনে ছাড়া না পায়। তাদের ১০ বছরের সাজা হোক কিংবা ৭ বছরের সাজা হোক, এর জন্য আমাকে যা করতে হবে আমি তা করতে রাজি।
আমি আল্লাহর রহমতে সবার কাছ থেকে খুব ভালো সাপোর্ট পেয়েছি। আমি চাই, এভাবে সবাই সাহসিকতা দেখাক এবং সবাই সবার বিপদে এগিয়ে আসুক। এ সময় পারিশা তার ফিরে পাওয়া ফোনটি সাংবাদিকদের অনুরোধে হাতে নিয়ে দেখান। এবং তার মোবাইলের আইএমই নাম্বারটি মিলিয়ে দেখান। পারিশা বলেন, আমি সবাইকে বলব, আপনারা ফোন ছিনতাই হলে থানায় আসেন, মামলা করেন। আমি যেভাবে পুলিশের সাথে লেগে ছিলাম, পুলিশ যেভাবে ছিনতাইকারীদের সাথে লেগেছিল- এভাবে যেন হয়।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, কারওয়ান বাজারে বাসের ভেতর থেকে পারিশার মোবাইল ফোনটি ছিনতাইয়ের পর বিক্রি করে দুই ছিনতাইকারী মদ কিনে খেয়েছিল। গত ২১ জুলাই সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুর থেকে তানজিল পরিবহণ নামে একটি যাত্রীবাহী বাসে সদরঘাটে যাচ্ছিলেন পারিশা। বাস কারওয়ান বাজারে এলে পারিশার মোবাইলফোন ছিনতাই হয়। দ্রুত বাস থেকে নেমে ছিনতাইকারীকে ধরার চেষ্টা করেন তিনি।
এ সময় দুই ছিনতাইকারীকে ধরে ফেলেন তিনি। যদিও তাদের মধ্যে কেউ পারিশার মোবাইলফোন ছিনতাইকারী ছিলেন না। ওই ছিনতাইকারীদের ধরার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর নিজের মোবাইলফোন উদ্ধার ও ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করতে নিজে বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলা করেন পারিশা।
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রুবাইয়াত জামান বলেন, গত ২১ জুলাই রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকা থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পারিশা আকতারের মোবাইলটি বাস থেকে ছিনিয়ে নেয় রিপন ওরফে আকাশ। তাকে ধাওয়া করলে মোবাইলটি আরেক ছিনতাইকারীর কাছে হাতবদল করে পালিয়ে যায় রিপন।
রুবাইয়াত জামান আরও বলেন, রিপন মোবাইলটি ছিনিয়ে দৌড় দেয় কিন্তু তার পিছু পিছু অন্য এক যুবক দ্রুত হাঁটতে শুরু করে। ওই যুবকের সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে তার সম্পর্কে পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং তাকে ২৪ জুলাই কারওয়ান বাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার নাম রাশেদুল ইসলাম (১৭)।
এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, রাশেদ প্রথমে ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে স্বীকার করে তারা দুজন মিলে এ কাজটি করেছে।
ওই তথ্য পাওয়ার পর আদালতে আবেদন করে আকাশকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। আকাশ তখন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে রাশেদ ও রিপন বলে, তারা ৪ হাজার টাকায় মোবাইলটি বিক্রি করে দেয়। রিপন নেয় ১ হাজার টাকা আর রাশেদ নেয় ৫০০ টাকা। বাকি টাকায় তারা মদ কিনে খায়।
রুবাইয়াত বলেন, আকাশ ও তার কিশোর সহযোগীর দেওয়ার তথ্যে মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় শফিককে, যার কাছে বিক্রি করা হয়েছিল ওই ছাত্রীর ফোন। অভিযানে মোবাইলটিও উদ্ধার করা হয়।
সেই পারিশার মোবাইল বেচে ‘মদ খেয়েছিল’ ছিনতাইকারীরা
কিউটিভি/আয়শা/০৩ অগাস্ট ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৬:১৮