জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তরুণীর টিকটক

superadmin | আপডেট: ১৭ মে ২০২২ - ১০:২৫:১৫ পিএম

ডেস্কনিউজঃ ইউক্রেনের একটি আন্ডারগ্রাউন্ড বম্ব শেল্টার থেকে ভিডিও প্রকাশ করতেন ২০ বছর বয়সী এক টিকটক শিল্পী। সেসব ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, তাই তাকে অনুসরণ করছেন ১০ লাখের বেশি মানুষ। ফিউচার লেখা এক হুডি পরে জুম ক্যামেরার সামনে হাজির হন ভ্যালেরিয়া শাশেনক। কয়েক সপ্তাহে আগে ইটালির মিলান শহরে পৌঁছেছেন তিনি। বর্তমানে বাস করছেন এক ইটালীয় পরিবারের সঙ্গে।

ইউক্রেন ছাড়ার আগ অবধি দেশটির রাশিয়া সীমান্তের কাছে অবস্থিত চার্নিহিউ শহরের এক বেসমেন্টে বাবামায়ের সঙ্গে বেশ কয়েকদিন কাটিয়েছেন তিনি। আমার মা ২৪ ফেব্রুয়ারি আমার রুমে এসে বলেন: ভ্যালেরিয়া! কিয়েভে বোমার আঘাতে একটি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে! বলেন শাশেনক। তখন তিনি এবং তার বাবামা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে একটি বেসমেন্টে চলে যান। সেসময় তার বাবা একটি রেস্তরোঁ চালাচ্ছিলেন এবং বেসমেন্টটি ছিল তার অফিস। কিছুদিন আগেই সেটি সংস্কার করা হয়েছিল। সেখানে একটি শাওয়ার এবং টয়লেটও বসানো হয়েছিল। শাশেনক সেই বেসমেন্টে ১৭ দিন কাটিয়েছেন। সেখানে থাকাটা খুব ক্লান্তিকর ব্যাপার ছিল, বলেন ২০ বছর বয়সি এই ইউক্রেনীয় তরুণী।

বেসমেন্টে ওয়াইফাই এবং স্মার্টফোন পাওয়ায় নিজেকে অবশ্য ভাগ্যবান মনে করেন তিনি। টিকটক এবং বাইরের বিশ্ব শাশেনক একজন ডিজিটাল নেটিভ: তিনি জেনারেশন জেড এর সদস্য যারা কিনা ইন্সটাগ্রাম এবং টিকটকের সঙ্গে বড় হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ছিল তার কাছে বাইরের বিশ্ব দেখার জানালা। তবে, ইউক্রেন যুদ্ধ সেই বাস্তবতায় পরিবর্তন এনে দেয়। কারণ বিশ্ব তখন উল্টো তার কাছে জানতে চাচ্ছিল যে যুদ্ধের মাঝে তিনি কীভাবে টিকে আছেন।

যুদ্ধের মাঝেই থিংস দেট জাস্ট মেক সেন্স ইন নামে একটি বাক্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ড করতে শুরু করে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা তাদের নিজ নিজ শহর বা একেবারেই ঘরোয়া পরিসরের সঙ্গে সম্পর্কিত অস্বাভাবিক বিষয়াদি এই ট্রেন্ডে তুলে ধরছিলেন। শাশেনকও সেই ট্রেন্ডে যোগ দেন এবং বাংকারে তার জীবনের নানা দিক তুলে ধরতে শুরু করেন। নিজের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে তিনি এমন সব বিষয় প্রকাশ করতে শুরু করেন যা শুধু একটি বম্ব শেল্টারেই অর্থ বহন করে। যেমন হট-এয়ার গান ব্যবহার করে চুল শুকানো, আন্ডারগ্রাউন্ডে ব্রেকফাস্ট কেমন হয় কিংবা স্টোভ ছাড়াই কটেজ চীজের প্যানকেক বানানোর উপায়।

এসব ভিডিও দ্রুতই ভাইরাল হতে শুরু করে এবং ২০ বছরের তরুণীর অনুসারীর সংখ্যা দ্রুত ১০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। তার একটি ভিডিও পাঁচ কোটি বার প্রদর্শিত হয়েছে। শেল্টার থেকে মুক্তি টানা ১৭ দিন আন্ডারগ্রাউন্ড শেল্টারে থাকার পর এবং রুশ বাহিনী যখন হামলার পরিমান বাড়াতে শুরু করে তখন শেল্টার ছেড়ে অন্য কোথাও আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন শাশেনক। যদিও তার বাবামা চার্নিহিউতে রয়ে গেছেন, তিনি কিছুদিন আগে ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ড এবং জার্মানি হয়ে ইটালিতে চলে গেছেন। তিনি এখন সেখানে একটি পরিবারের সঙ্গে বাস করছেন।

তবে, শাশেনক দেশে থাকা তার বাবামা এবং আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তিনি প্রতিদিন তার বাবামায়ের সঙ্গে কথা বলেন। বেশি কথা বলেন তার মায়ের সঙ্গে, বাবার সঙ্গে কম। বাবা অনেক অস্থির। তার সারাদিন কিছু করার নেই। ফোনে আমার সঙ্গে চিৎকার চেচামেচি করেন। তবে সেটা আমাকে তিরস্কার করতে নয়। আসলে তিনি ক্রমশ ধৈর্য হারাচ্ছেন বলেন শাশেনক।

গত মার্চের শেষের দিকে শাশেনককে তার মা জানান যে তার এক আত্মীয় বোমার আঘাতে মারা গেছেন। রুশ ভাষা শিখতে শিখতে বড় হওয়া এই ইউক্রেনীয় তরুণী বলেন, রাশিয়া আমাদের দেশে কী করছে? আমি প্রতিদিন নিজেকে এই প্রশ্নটি করি। পুতিন বলেন যে তিনি আমাদেরকে ইউক্রেনীয় সরকারের কাছ থেকে রক্ষা করতে চান। এটার মানে কী? আমাদের জীবনতো আগে চমৎকার ছিল। রাশিয়ার আমাদেরকে সুরক্ষা দেয়ার দরকার নেই। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অন্য সব ইউক্রেনীয়র মতো, শাশেনকও আশা করছেন যে যুদ্ধ শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে। আর তখন দেশে ফিরে যেতে চান তিনি। আমি আমার দেশকে মিস করছি। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে ফিরে যাবো বলেন এই টিকটক তারকা। চলতি সপ্তাহে শাশেনক একটি রিডিং ট্যুরে আছেন।

তার বই ভিয়াউন্ডশোয়ান্সিশ ফেব্রুয়ারি: উন্ড ডেয়ার হিমেল ভার নিখশ্ট মেয়ার ব্লাও (ফেব্রুয়ারি ২৪: এবং আকাশ আর নীল ছিল না) সম্প্রতি জার্মান ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর নিজের অভিজ্ঞতা এবং সে সম্পর্কিত বিভিন্ন ছবি দিয়ে বইটি সাজিয়েছেন তিনি। আমি এই বইটি এই আশায় রুশদের উৎসর্গ করছি যেনো তারা বুঝতে পারে যে তারা আমাদের সঙ্গে কী করেছে, বলেন তিনি।

তবে, রুশরা আদৌ বুঝবে কিনা তা নিয়ে শাশেনকের নিজেরই সন্দেহ আছে। কিছু মানুষ বুঝতে চায় না, আর কিছু মানুষ ভয়ে যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলছে না বলে মনে করেন তিনি। তাসত্ত্বেও নিজের সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে চান ভ্যালেরিয়া শাশেনক। টিকটক এবং ইন্সটাগ্রামে নিজের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে চার্নিহিউ শহরে কাজ করা একটি সাহায্য সংস্থার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন তিনি। ভবিষ্যতে নিজের শহর পুর্নগঠনেও কাজ করবেন এই তরুণী।

 বিপুল/ ১৭.০৫.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/ রাত ১০.১১

▎সর্বশেষ

ad