ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের জরুরি অধিবেশনে প্রবল চাপ সত্ত্বেও ইতোপূর্বে বাংলাদেশ নিরপেক্ষতা বজায় রাখায় বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে রাশিয়া।
গত বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) সকালে রাশিয়া দূতাবাস আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি একথা বলেন।
কিন্তু একই দিনে ঘটে যায় ভিন্ন ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে বাংলাদেশ সরাসরি রাশিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার জেরে যে মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। ১৪০ ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়েছে। জাতিসংঘের ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে অধিবেশনে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়। এতে ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং মানবিক সহায়তার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে রুশ হামলার ফলে দেশটিতে সৃষ্ট ‘ভয়াবহ’ মানবিক পরিস্থিতির জন্য মস্কোর সমালোচনা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে সাধারণ পরিষদের জরুরি অধিবেশনে এই প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটিতে অংশ নেয় সদস্য দেশগুলো। শেষ পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পাস হয় প্রস্তাবটি। তবে রাশিয়ার জন্য এটি মেনে চলার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।
এদিনের ভোটাভুটিতে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় বাংলাদেশসহ ১৪০ সদস্য দেশ। বিপক্ষে ভোট দেয় পাঁচটি দেশ। আর ভোটদানে বিরত ছিল চীন, পাকিস্তান ও ভারতসহ ৩৮ দেশ। বিপক্ষে ভোট দেওয়া পাঁচ দেশ হলো রাশিয়া, বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, ইরিত্রিয়া ও সিরিয়া।
কি এমন ঘটনা ঘটল যে বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে রাশিয়ার বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করল ? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা এর ব্যাখ্যা কি দিবে জানিনা। তবে অনেকেই মনে করেন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড এর বাংলাদেশ সফরেই রাশিয়া বিষয়ে বাংলাদেশের ভূমিকা নির্ধারিত হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীতে সম্পর্ক আরো জোরদারে ৮ম অংশীদারিত্ব সংলাপে যোগ দিতে গত ১৯শে মার্চ ঢাকায় পৌঁছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। তিনি শনিবার বিকেলেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পা রাখেন।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও শ্রীলঙ্কাসহ ত্রিদেশীয় সফরের অংশ হিসেবেই নুল্যান্ড প্রথমে ঢাকায় এসেছেন। এদিন বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে বিমান বন্দরে তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
৯০ মিনিটব্যাপী “পার্টনারশিপ ডায়ালগ” বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব এবং মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে তাদের আলোচনার ফলাফল প্রকাশের জন্য একটি যৌথ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন ।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দফতর এবং ঢাকায় মার্কিন কূটনীতিকরা বলেছেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শ্রম, মানবাধিকার ও শাসন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বৈশ্বিক হুমকিসমূহ, একটি মুক্ত এবং “ওপেন ইন্দো-প্যাসেফিক রিজন”সহ আঞ্চলিক ইস্যুসমূহ এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এবং এর বেশ কয়েকজন সিনিয়র অফিসারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে অংশীদারিত্বের এই রাউন্ডের সংলাপটি অতিরিক্ত গুরুত্ব পেয়েছে।
অংশীদারিত্ব সংলাপের বৈঠকের সঙ্গে সম্পর্কিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা এই সংলাপে অবরোধের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরবে এবং সন্ত্রাস দমন ও মাদক পাচার রোধে এই এলিট আইন প্রয়োগকারী ইউনিটের সাফল্য তুলে ধরা হবে।
তিনি বলেন, যখনই র্যাবের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রমাণ ঢাকা এই বৈঠকে উপস্থাপিত হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকায় অবস্থানরত এক মার্কিন কূটনীতিক বলেছেন, সংলাপের সময় মানবাধিকার একটি অন্যতম ইস্যু ছিল ।
ইউএস আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড এর বাংলাদেশ সফর পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বাংলাদেশের ভূমিকা স্পষ্ট হওয়ার পিছনে ইউএস স্যাংশন পলিসি মূল ভূমিকা রেখেছে বলে অনেকেই মনে করেন।
লেখকঃ লুৎফর রহমান। লেখক, কলামিস্ট, রাজনীতিবিদ।
বিপুল/ ২৫শে মার্চ, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | রাত ১১.৫৫