ব্রেকিং নিউজ
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হলেন হুমায়ুন কবির  মেয়েকে ধর্ষণ, নরপিশাচ পিতার কারাদণ্ড কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপিকে নিয়ে পাহাড়সম অভিযোগঃ ১০ মাসেও হয়নি কাউন্সিল সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : শিক্ষক,লেখক-সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতিম্যান একজনের বিদায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে উপকৃত হবেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক- ভিসি ড.আমানুল্লাহ ফেরদৌস বাজে ব্যাটিংয়ে ফাইনাল মিস বাংলাদেশের জনস হপকিন্সের সাথে কাজ করবে বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  মজিদা কলেজে ৪০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ, তোলপাড় কুড়িগ্রাম খারুয়ার পাড়ে ভাঙ্গনের শব্দ থেমে যাক — বদরুদ্দীন উমর : শিরদাঁড়া বাঁকা করে বাঁকা হয়নি যার

গাজায় ঔপনিবেশিক ভাগবাঁটোয়ারার নতুন ফাঁদ

Ayesha Siddika | আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৫ - ০২:০৫:২১ পিএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজা যখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে পাশ্চাত্যসমর্থিত ইসরাইলি নৃশংসতায় ৭০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, তখন সাম্রাজ্যবাদী ওয়াশিংটন ও ঔপনিবেশিক হোয়াইটহলের (ব্রিটিশ সরকারের কেন্দ্র) করিডর থেকে একটি ভয়ানক প্রস্তাব উঠে এসেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থনপুষ্ট এ পরিকল্পনায় ‘গাজা আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষ’ (জিআইটিএ) কল্পনা করা হয়েছে; যা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের একটি ‘সংস্কার করা’ অংশের হাতে নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়ার আগে গাজা শাসন করার জন্য একটি পাঁচ বছরের অন্তর্বর্তী সরকার হবে।

আর ফিলিস্তিনিরা কী করবে? তাদের ভেটো ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করে ‘নিরপেক্ষ’ প্রশাসনিক ভূমিকায় নামিয়ে দেওয়া হবে। এটি কোনো শাসনব্যবস্থা নয়; এটি এক নয়া ঔপনিবেশিক ভাগবাঁটোয়ারা, যা অতীতে এ অঞ্চলকে খণ্ড-বিখণ্ড করে দেওয়া ব্রিটিশ ম্যান্ডেটগুলোরই প্রতিধ্বনি। ফিলিস্তিনি জাতীয় উদ্যোগের নেতা মুস্তফা বারঘুতি এটিকে একটি ‘বিপর্যয়’ আখ্যা দিয়ে নতুন করে ‘ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের’ উত্থান সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। অবশ্য কেবল ফিলিস্তিনে নয়, বিশ্বজুড়েই এ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠেছে।

কিন্তু তাতে কি ব্লেয়ারের কিছু যায়-আসে? নিজেকে এক আধা-ঐশ্বরিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে দেখা ব্লেয়ারের কাছে এসব নতুন কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর ক্যাথলিক ধর্মে দীক্ষিত হওয়া ব্লেয়ার প্রায়ই তার সিদ্ধান্তগুলোকে আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন। কথিত আছে, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করতেন, ‘যিশু কী করতেন?’ কার্যত ব্লেয়ার এক বিশৃঙ্খল পৃথিবীতে নিজেকে ধার্মিক সালিশকারী হিসাবে দেখতে চান। তিনি মনে করেন, ইরাকের মতো বা এখন গাজার মতো ‘ব্যর্থ রাষ্ট্রগুলোকে’ পুনর্গঠিত করার জন্যই যেন তার জন্ম।

এ ঔদ্ধত্যই বিপর্যয়ে ইন্ধন জুগিয়েছিল। ২০০৩ সালের ইরাক আক্রমণ, যা ব্লেয়ারের যৌথ উদ্যোগে হয়েছিল, তা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ ছিল এবং এর জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ছিল না। চিলকট তদন্ত (২০১৬) প্রকাশ করে, কীভাবে ব্লেয়ার সাদ্দাম হোসেনের অস্ত্রের হুমকিকে অতিরঞ্জিত করেছিলেন, মন্ত্রিসভার বিতর্ককে উপেক্ষা করেছিলেন। এর ফল কী হলো? ১৭৯ জনেরও বেশি ব্রিটিশ সৈন্য এবং লাখ লাখ ইরাকি বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু, যার ফলে সৃষ্ট ক্ষমতা শূন্যতা থেকে আইএসআইএসের জন্ম হয়।

তিনি ৯/১১-কে ১৯৯০-এর দশকের ‘হাতছাড়া হওয়া সুযোগের’ ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেখেছিলেন। অর্থাৎ তার কাছে এটি ছিল হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্বকে শৃঙ্খলায় আনার একটি সুযোগ। ইরাক ছিল তার সেই পরীক্ষার ক্ষেত্র; তার প্রস্তাবিত জিআইটিএ’র অধীনে গাজা আরেকটি একইরকম ক্ষেত্র হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য শান্তিদূত হিসাবে তার নিয়োগ আসলে ছিল ব্যর্থতার এক চূড়ান্ত উদাহরণ। ফিলিস্তিনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার দায়িত্ব পেয়েও তিনি ইসরাইলি বসতি স্থাপনকে আরও প্রসারিত করার সুযোগ করে দেন। তিনি ২০০৬-পরবর্তী হামাস বয়কটকে সমর্থন করেছিলেন, যা ফাতাহ-হামাস বিভেদকে গভীর করে এবং গাজাকে আরও বিচ্ছিন্ন করে তোলে। শান্তি আলোচনা ভন্ডুল হয়ে গিয়েছিল এবং ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা তার ইসরাইলঘেঁষা পক্ষপাতিত্ব এবং সীমিত ম্যান্ডেটের জন্য ‘বিশাল ব্যর্থতার’ জন্য ব্লেয়ায়ের সমালোচনা করেন।

এর চেয়েও খারাপ বিষয় হলো, দূত হিসাবে তার ভূমিকা ব্যক্তিগত এটিএম (টাকার মেশিন) হিসাবেও কাজ করেছিল। মধ্যস্থতা করার সময় ব্লেয়ার ২০১৪ সালে গাজা যুদ্ধের সময় মিশরের আবদুল ফাত্তাহ আল সিসির মতো স্বৈরশাসকদের পরামর্শ দিতেন এবং তার ‘টনি ব্লেয়ার ফেইথ ফাউন্ডেশন’ ও ‘অ্যাসোসিয়েটস কনসালটেন্সি’র মাধ্যমে লাখ লাখ ডলার উপার্জন করতেন। উপসাগরীয় রাজতন্ত্রের শাসক এবং কাজাখ অলিগার্কদের সঙ্গে চুক্তির ফলে তার আয় সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকত এবং তার সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৬০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।

ডাউনিং স্ট্রিট ছাড়ার পর তিনি জেপি মর্গ্যান চেজ (বছরে ২ মিলিয়ন পাউন্ড), জুরিখ ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (বছরে ৫ লাখ পাউন্ড) এবং ল্যান্সডাউন পার্টনার্সে (কনজারভেটিভ দলের একজন দাতব্য সংস্থার হেজ ফান্ড) যোগ দেন। তিনি তার বৈশ্বিক যোগাযোগগুলোকে কাজে লাগান। ২০১২ সালে কাতারের আমিরের মন জয় করে তিনি গ্লেনকোর-এর ৩৬ বিলিয়ন ডলারের খনি চুক্তির মধ্যস্থতা করেন এবং মোটা অঙ্কের ফি পান। গাজা পুনর্গঠন নিয়ে তার ইনস্টিটিউটের ‘বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা’ আসলে ছিল ফিলিস্তিনিদের উন্নতি নয়, বরং বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রস্তাব দেওয়ার সাংকেতিক ভাষা।

জিআইটিএ’র প্রস্তাবটি এ কৌশলটিরই গন্ধ বহন করে : পাঁচ বছরের জন্য একটি বিলিয়নিয়ার বোর্ড ‘সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ও আইনি’ ক্ষমতা ব্যবহার করবে, ফিলিস্তিনিদের দূরে সরিয়ে রেখে জ্বালানি ও পরিকাঠামো চুক্তিগুলোর দিকে নজর দেবে। ব্লেয়ারের যিশু কমপ্লেক্স-অর্থাৎ আমিরদের সঙ্গে মেশার সময় ‘যিশু কী করতেন?’ জিজ্ঞেস করা-তাকে এ কাজের জন্য একেবারে অনুপযুক্ত করে তোলে। আসলে উন্মুক্ত কারাগারে আটকে থাকা গাজার ২৩ লাখ মানুষের ঔপনিবেশিক পোশাকে মোড়া কোনো ত্রাণকর্তার প্রয়োজন নেই।

তার উত্তর আয়ারল্যান্ডের সাফল্য, যা ডেভিড ল্যামির মতো সমর্থকরা প্রায়ই উল্লেখ করেন, তা ওপর থেকে চাপানো আদেশের ওপর নয়, বরং অন্তর্ভুক্তিমূলক আলোচনার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গাজাও একই পদক্ষেপ দাবি করে : যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি এবং জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন নির্বাচন, কোনো ব্লেয়ার নেতৃত্বাধীন অভিভাবকত্ব নয়।

ট্রাম্প-ব্লেয়ার অক্ষশক্তির এ জোট-যেখানে এমএজিএ’র আস্ফালন (ট্রাম্পের ‘মেক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগানের প্রতীক) ব্লেয়ারের ধর্মপরায়ণ ভানের সঙ্গে মিশেছে-তা দখল করা অঞ্চলের মূল কারণটিকে উপেক্ষা করে : ইসরাইলের বর্ণবৈষম্যমূলক নিয়ন্ত্রণ, যা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দ্বারাও নিন্দিত। নিজেকে পৃথিবীতে ঈশ্বরের প্রতিনিধি মনে করা ব্লেয়ারকে এ পদে নিয়োগ করা হলো একটি নয়া ঔপনিবেশিক প্রহসন প্রতিষ্ঠার ঝুঁকি নেওয়া, যা কেবল এ ট্র্যাজেডিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।

ফিলিস্তিনিদের প্রয়োজন আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার। আর যিনি যুদ্ধ থেকে লাভবান হওয়ার সময় শান্তির জন্য প্রার্থনা করেন-এমন কোনো ত্রাতার তাদের দরকার নেই।

দি ওয়্যার থেকে ভাষান্তরিত

ইন্দরজিৎ পারমার : লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটি সেন্ট জর্জের স্কুল অফ পলিসি অ্যান্ড গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের আন্তর্জাতিক রাজনীতির অধ্যাপক এবং গবেষণার সহযোগী ডিন

 

 

আয়শা/২৩ অক্টোবর ২০২৫,/দুপুর ২:০০

▎সর্বশেষ

ad