এআইয়ের কারণে চাকরি পাচ্ছেন না কম্পিউটার সায়েন্স স্নাতকেরা!

Anima Rakhi | আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ১১:৫৪:৪৭ এএম

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের নানা দেশে প্রযুক্তি খাতের নতুন চাকরিপ্রার্থীদের সামনে তৈরি হয়েছে এক বড় সংকট। বিশেষ করে কম্পিউটার সায়েন্স ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে স্নাতক করা অনেক তরুণ এআইয়ের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) দ্রুত উত্থানের কারণে চাকরি পেতে হিমশিম খাচ্ছেন।

নিউ জার্সির ব্লুমফিল্ড কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও গেম প্রোগ্রামিংয়ে ডিগ্রি পাওয়া আব্রাহাম রুবিও গত কয়েক মাসে ২০টিরও বেশি চাকরির আবেদন করেও কোনো অফার পাননি। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় প্রতিদিন লিংকডইনে গিয়ে সুযোগগুলো খুঁজি, তবে অধিকাংশ কোম্পানি থেকে কোনো সাড়া পাইনি।’

একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন আরও অনেকে। অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের মে মাসের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালের পর থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও ম্যাথমেটিক্স বিষয়ে নতুন স্নাতকদের কর্মসংস্থান ৮ শতাংশ কমেছে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব সেন্ট লুইসের তথ্য বলছে, চাকরি খোঁজার প্ল্যাটফর্ম ‘ইন্ডিডে’ সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের বিজ্ঞাপন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৭১ শতাংশ কমেছে।

আর্থিক মন্দার পাশাপাশি এআইয়ের প্রভাবও বড় কারণ। অনেক সফটওয়্যার কোম্পানি জুনিয়র পর্যায়ের নিয়োগ কমিয়ে এনেছে। মাইক্রোসফট সম্প্রতি ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারমূল্যে পৌঁছালেও অল্প সময় পরেই তৃতীয় দফায় ৯ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। কোম্পানির সিইও সত‍্য নাদেলা জানিয়েছেন, তাদের প্রায় ৩০ শতাংশ কোড এখন এআই দিয়ে লেখা হচ্ছে।

জুলিও রদ্রিগেজ, এলমস কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট, বলেন—‘প্রযুক্তির চাকরি ভালো, তবে বর্তমান চাকরির বাজারে একটা কাজ পাওয়া প্রায় অসম্ভব।’ তিনি একটি চাকরি পাওয়ার আগে ১৫০টির বেশি আবেদন করেছিলেন।

নিক ভিনোকুর, ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের কম্পিউটার সায়েন্স গ্র্যাজুয়েট, জানালেন তাঁর চাকরির অফার মেটার পুনর্গঠনের কারণে বাতিল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘এআই কোডিং টুলগুলো আমাদের কাজের প্রকৃতি পরিবর্তন করবে। তবে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ।’

অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের তথ্যে দেখা যায়, সাম্প্রতিক গ্র্যাজুয়েটদের বেকারত্বের হার সারা দেশের গড় বেকারত্বের চেয়ে বেশি। কম্পিউটার সায়েন্স ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে হার যথাক্রমে ৬ দশমিক ১ শতাংশ ও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে ইতিহাস (৩%), ইংরেজি (৪.০%) ও পারফর্মিং আর্টসের (২.৭%) তুলনায় এই হার অনেক বেশি।

কিছু শিক্ষার্থী তাদের হতাশা প্রকাশ করছেন টিকটকে। ‘কুইনঅবস্ল্যাক’ নামে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা যেমন কঠিন, তেমনি চাকরির ক্ষেত্রে রয়েছে বড় অনিশ্চয়তা।”

অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে কোর্সে পরিবর্তন আনছে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের পরিচালক ম্যাগডালেনা বালাজিনস্কা জানিয়েছেন, এআই শুধু কোড লেখা কমাচ্ছে না, কোম্পানিগুলো এখন বড় এআই প্রজেক্টে বিনিয়োগ করছে, তাই নিয়োগও কমছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এআই সমন্বিত সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোর্স চালু হচ্ছে। তবে প্রাথমিক স্তরের ক্লাসে এআই ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে।

কোডিং বুটক্যাম্পগুলোর ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে। ড্যানিয়েল গ্রাসি, জেনারেল অ্যাসেম্বলির সিইও, বলেছেন—এখন শুধু সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নয়, বরং সিআইও ও এইচআর ম্যানেজারদেরও এআই প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তোলা হচ্ছে।

কর্মসংস্থান বিশেষজ্ঞ কাইল হলম মনে করেন, “এআইয়ের উত্থান আগের প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মতো নয়। এখন কোম্পানিগুলো ছোট দল নিয়ে কাজ করতে চাইছে।”

আমাজনের দিপাক সিংহ বলেন, “কম্পিউটার সায়েন্স শুধু কোড লেখা নয়, এটি সিস্টেম বুঝতে শেখায়। এআই আসলে আমাদের চিন্তার ও সৃজনশীলতার প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়াবে।”

অভিজ্ঞ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ডেভিড বারাজাস বলেন, “এআই আপনাকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে প্রতিস্থাপন করবে না, তবে এআইসহ ইঞ্জিনিয়ার আপনাকে প্রতিস্থাপন করতে পারে।” সূত্র: সিএনএন

কুইকটিভি/অনিমা/০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫/সকাল ১১:৫৪

▎সর্বশেষ

ad