
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরান-ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের মধ্যেই চীন থেকে একের পর এক কার্গো উড়োজাহাজের ইরানের দিকে যাত্রা ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য। গত শুক্রবার ইসরায়েলের ইরানে হামলার ঠিক একদিন পর প্রথম একটি কার্গো উড়োজাহাজ চীন থেকে উড্ডয়ন করে। পরের দিন আরেকটি উড়োজাহাজ চীনের উপকূলীয় শহর থেকে যাত্রা করে, এবং সোমবার সাংহাই থেকে উড্ডয়ন করে তৃতীয় উড়োজাহাজটি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেছে। গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, তিনটি উড়োজাহাজই উত্তর চীনের ওপর দিয়ে পশ্চিম দিকে উড়ে যায়। এরপর এগুলো কাজাখস্তান হয়ে উজবেকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান অতিক্রম করে ইরানের সীমানার কাছাকাছি পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ফ্লাইট পরিকল্পনা অনুযায়ী উড়োজাহাজগুলোর গন্তব্য ছিল ইউরোপের লুক্সেমবার্গ। তবে সেগুলো ইউরোপীয় আকাশে প্রবেশ করেনি বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ফলে এই উড়োজাহাজের গতিপথ এবং প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বোয়িং ৭৪৭ ধরণের এ মালবাহী উড়োজাহাজগুলো সাধারণত সামরিক সরঞ্জাম বা অস্ত্র পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এ ধরণের উড়োজাহাজ সরকারি বা বেসরকারি প্রতিরক্ষা চুক্তির অধীনে ভাড়া দেওয়া হয়।
যুক্তরাজ্যের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক এবং চীন-মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্ক বিশ্লেষক আন্দ্রেয়া ঘিসেলি বলেন, ইরানকে সাহায্য করার জন্য চীন কিছু করছে— এই প্রত্যাশা থেকেই বিষয়টি ঘিরে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
তাঁর মতে, ইরানে বর্তমান সরকার পতনের ঘটনা চীনের জন্য বড় ধরনের আঘাত হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে, যা চীনের অর্থনৈতিক ও জ্বালানি স্বার্থকে বিপন্ন করতে পারে।
তবে চীন সরাসরি প্রতিরক্ষা উপকরণ পাঠিয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও, বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশ্লেষকরা। ইসরায়েলের ইনস্টিটিউট অব ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ–এর চীন ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক টুভিয়া গেরিং বলেন, চীনের পক্ষ থেকে সরাসরি প্রতিরক্ষা উপকরণ পাঠানোর সম্ভাবনা কম, তবে বিষয়টি নিবিড় পর্যবেক্ষণের দাবি রাখে।
এদিকে, কিছু কার্গো উড়োজাহাজ ইরান সীমান্ত থেকে উড্ডয়ন করে ফের লুক্সেমবার্গের দিকে যাত্রা করেছে বলেও ফ্লাইট তথ্য থেকে জানা গেছে। যদিও এই উড়োজাহাজে কী বহন করা হয়েছে, তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এই উড়োজাহাজ চলাচল ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্য, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের এই মুহূর্তে, বেইজিং সম্ভবত সতর্কতার সাথেই এগোবে।
টেলিগ্রাফ বলছে, কার্গো উড়োজাহাজগুলোতে ঠিক কী বহন করা হয়েছে তা জানা সম্ভব নয়। যদিও প্রকাশিত ফ্লাইট তথ্যানুসারে, পরবর্তী ফ্লাইটগুলোতে, কিছু উড়োজাহাজ তুর্কমেনিস্তান-ইরান সীমান্তের একই এলাকা থেকে উড়ে গিয়ে লুক্সেমবার্গের দিকে রওনা হয়।
লুক্সেমবার্গ-ভিত্তিক উড়োজাহাজ পরিচালনাকারী কোম্পানি কার্গোলাক্স জানিয়েছে, তাদের উড়োজাহাজগুলো ইরানের আকাশসীমা ব্যবহার করে না। তবে তারা কী বহন করছিল, সে সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দেয়নি সংস্থাটি। সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ।
কিউটিভি/অনিমা/১৯ জুন ২০২৫, /বিকাল ৩:৪৩