ব্রেকিং নিউজ
চিলমারীতে বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ : অব্যহতি দুই বিক্ষোভকারীকে কুড়িগ্রামে সেনাবাহিনী’র মাদক বিরোধী অভিযানে ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজাসহ আটক ১ ঢাবি’র জহুরুল হক হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন পুনর্গঠন : সদস্য সচিব নিয়ে বিতর্ক রাস্তায় অভিনেতা সিদ্দিককে মারধরের ভিডিও ভাইরাল ইন্টারপোলের মাধ্যমে হাসিনার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারির সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঢাবি দর্শন বিভাগের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত ঢাবি দর্শন বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ১৪তম পুনর্মিলনী ও কমিটি গঠিত হয়েছে সাইদ সোহরাব ও শেখ মো. নাসিম এর নেতৃত্বে ঢাবি মুহসীন হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন গঠন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিসপ্লে-তে ভেসে উঠেলো ‘ছাত্রলীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে’ কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, যুবদল নেতার মৃত্যু

যেভাবে ওমরাহ পালন করবেন, ধারাবাহিক নিয়ম ও দোয়া

Ayesha Siddika | আপডেট: ২৮ মে ২০২৫ - ০৮:১৭:১৩ পিএম

ডেস্ক নিউজ : ওমরাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ, আবাদ স্থানের সংকল্প করা। এর পারিভাষিক অর্থ, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে বছরের যে কোন সময় শরীয়ত নিধারিত ক্রিয়া-পদ্ধতি সহকারে মক্কায় গিয়ে বাইতুল্লাহ জিয়ারত করার সংকল্প করা।

ওমরাহর বিধান

ওমরাহ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। যে কোন মুসলমানের মক্কা মুকাররমায় পৌঁছার সামর্থ থাকলে তার জন্য সারা জীবনে একবার ওমরাহ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এবং একবারের চেয়ে অধিক ওমরাহ করা মুস্তাহাব। ওমরাহকে ‘হজে আসগর বা ছোট হজ’ও বলা হয়।

ওমরাহর ফজিলত

১. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- তোমরা আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য নিয়মিত হজ ও ওমরাহ করতে থাক। কেননা, এ দু‘টি দারিদ্র্যকে ও গুনাহসমূহকে এমনভাবে দূর করে দেয়, যেমন আগুনের চুল্লী লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে দেয়। (তিরমিযী শরীফ)

২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন- হজ ও ওমরাহ পালনকারীগণ আল্লাহ তাআলার বিশেষ মেহমান। তারা আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করলে আল্লাহ তা কবূল করেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি ক্ষমা করে দেন। (ইবনে মাজাহ শরীফ)

৩. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- রমজান মাসে ওমরাহ করা সওয়াবের দিক দিয়ে হজ করার সমতুল্য। (বুখারী ও মুসলিম)

ওমরাহর সময়

হজ তো বছরে শুধু একবারই আদায় করা সম্ভব। কেননা, শরীয়তে হজের জন্য সুনির্দিষ্ট তারিখ রয়েছে। কিন্তু ওমরাহ সারা বছরের যে কোন সময় যতবার ইচ্ছা আদায় করা যায়। তাতে অধিক সময়ের প্রয়োজন হয় না বিধায় অনেকে একই দিনে একাধিকবার ওমরাহ করে নেয়। তবে জিলহজের ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ এই পাঁচ দিন ওমরাহ করা মাকরূহ। কারণ, এ দিনগুলো হজের জন্য নির্ধারিত।

ওমরাহর কার্যাবলী

ওমরাহয় চারটি কাজ করতে হয়: এক. মিকাত থেকে ওমরাহর ইহরাম বাঁধা। (অর্থাৎ,ওমরাহর নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করা।) দুই. মক্কা মুকাররমায় পৌঁছে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করা। তিন. সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সায়ী করা। চার. হলক বা কসর করা (অর্থাৎ, সায়ী শেষ করে মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছাঁটা।) 

ওমরাহর ফরজ দুটি: এক. ওমরাহর ইহরাম বাঁধা। (যা ওমরাহর নিয়ত করে তালবিয়া পাঠের মাধ্যমে হয়ে যায়।) দুই. বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করা।

ওমরাহর ওয়াজিব দুটি: এক. সাফা ও মারওয়ার মাঝে সায়ী করা। দুই. সায়ী শেষ করে মাথার চুল ছাঁটা বা মুণ্ডানো। (ওমরাহর তাওয়াফে রমল ও ইযতিবা‘ সুন্নাত)

ওমরাহ করার নিয়ম

ইহরাম: যখন কোন পুরুষ বা কোন নারী (মাহরাম পুরুষের সঙ্গে) ওমরাহ করার জন্য রওয়ানা হবে, তার যাত্রাপথে যে মিকাত পড়বে সেখান থেকে বা পূর্ববর্তী কোন স্থানে ইহরাম বেঁধে নিবে; চাই সে যে কোন ধরনের বাহনেই যাত্রা করুক না কেন।

ওমরাহর তাওয়াফ: মসজিদে হারামে প্রবেশ করে ওমরাহর তাওয়াফ করবে। পুরুষরা রমল ও ইযতিবা‘-এর সঙ্গে এবং নারীরা রমল ও ইযতিবা‘ ব্যতীত ওমরাহর তাওয়াফ শুরু করে দিবে। 

তাওয়াফের নামাজ: তাওয়াফ সম্পন্ন করে মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দু‘রাকাত তাওয়াফের নামাজ পড়বে। মাকামে ইবরাহীমের পেছনে সুযোগ না হলে মসজিদে হারামের যেখানে সুযোগ হয় পড়ে নিবে। এ দু’রাকাতে সূরা ফাতেহার পর প্রথম রাকাতে সূরা কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়া সুন্নাত।

সাফা-মারওয়ায় সায়ী: তাওয়াফের দু’রাকাত থেকে অবসর হয়ে হাজরে আসওয়াদ ইসতিলাম (ইশারায় চুমু) করে সাফা-মারওয়ায় সায়ী করার জন্য রওয়ানা হয়ে যাবে। সায়ী সাফা থেকে শুরু হয়। 

হলক বা কসর: সাফা-মারওয়ার মাঝে সাত চক্কর পূর্ণ করার পর মারওয়ায় গিয়ে সম্পূর্ণ মাথার চুল মুণ্ডাবে বা আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ ছাঁটবে। মাথা মুণ্ডানোকে হলক এবং চুল ছাঁটাকে কসর বলে। হলক কসরের চেয়ে উত্তম। তবে মহিলাদের জন্য মাথা মুণ্ডানো হারাম। 

মহিলারা মাথার চুল এক কর পরিমাণ কাটবে। ইহরাম থেকে বের হওয়ার জন্য ন্যূনতম এক চতুর্থাংশ মাথার চুল হলক বা কসর করা আবশ্যক এবং সম্পূর্ণ মাথা হলক বা কসর করা সুন্নাত। 

ওমরাহর সায়ীর পর যখন হলক বা কসর করে নিল, তখন ওমরাহর কার্যক্রম সম্পূর্ণ হয়ে গেল এবং ইহরাম থেকে বের হয়ে গেল। এখন সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং ইহরাম পরিপন্থী কাজসমূহের নিষেধাজ্ঞা বিলুপ্ত হয়ে গেল।

ইহরাম বাঁধার সময় করণীয়

সব ধরনের পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা অর্জন করে গোসল করবে। অন্যথায় কমপক্ষে ওজু করে নিবে। এরপর একটি চাদর লুঙ্গির মত করে পরিধান করবে এবং একটি চাদর শরীরের উপরে জড়াবে। 

অতপর মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে উপরের অংশের চাদর দ্বারা মাথা ঢেকে ইহরামের নিয়তে দু’রাকাত নামাজ পড়বে। মাকরূহ ওয়াক্ত হলে নামাজ না পড়ে শুধু ইহরাম বেঁধে নিবে।

হজ বা ওমরাহর নিয়ত করে তালবিয়া পড়াকে ইহরাম বলে। নামাজ পড়ে হজ বা ওমরাহর নিয়ত করবে। 

যদি শুধু হজের নিয়ত করে, তাহলে এভাবে বলবে- اَللّٰهُمَّ إنِّىْ اُرِيْدُ الْحَجَّ فَيَسِّرْهُ لِىْ وَتَقَبَّلْهُ مِنِّىْ

বাংলায়: হে আল্লাহ! আমি হজ করতে চাই। তুমি তা আমার জন্য সহজ করে দাও এবং কবূল করে নাও।

আর যদি শুধু ওমরাহর নিয়ত করে, তাহলে এভাবে নিয়ত করবে- اَللّٰهُمَّ إنِّىْ اُرِيْدُ الْعُمْرَةَ  فَيَسِّرْهَا لِىْ وَتَقَبَّلْهَا مِنِّىْ                                                                                                             

বাংলায় : হে আল্লাহ! আমি ওমরাহ করতে চাই। তুমি তা আমার জন্য সহজ করে দাও এবং কবূল করে নাও। 

কোন সময় হজ ও ওমরাহ উভয়টির নিয়ত একসঙ্গে করা হয়। এভাবে হজ করাকে ক্বেরান বলে। তাই হজে ক্বেরানের নিয়ত এভাবে করবে- 

اَللّٰهُمَّ إنِّىْ اُرِيْدُ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ  فَيَسِّرْهُمَا لِىْ وَتَقَبَّلْهُمَا مِنِّىْ

বাংলায় : হে আল্লাহ! আমি হজ ও ওমরাহ উভয়টির নিয়ত করছি। তুমি উভয়টি আমার জন্য সহজ করে দাও এবং কবূল করে নাও।

আরবীর পরিবর্তে অন্য কোন ভাষায় নিয়ত করলে তাও জায়েয আছে; বরং মুখে কিছু না বলে শুধু অন্তরে নিয়ত করলে তাহলেও নিয়ত হয়ে যাবে। নিয়তের পর তালবিয়ার শব্দগুলো পড়বে। তালবিয়ার মাসনূন শব্দগুলো ভালভাবে মুখস্থ করে নিবে। তালবিয়ার কোন শব্দ বাদ দেওয়া মাকরূহ। 

তালবিয়ার মাসনূন শব্দগুলো হল-

لَبَّيْكَ اللّٰهُمَّ لَبَّيْكْ. لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ .إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكْ  لَا شَرِيْكَ لَكَ.  

উচ্চারণ: লাব্বাইকাল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকালাকা লাব্বাইক, ইন্নালহামদা ওয়ান্নিয়মাতা লাকা ওয়ালমুল্ক লা শারীকালাক।

অর্থ: আমি হাযির। হে আল্লাহ! আমি হাযির। তোমার কোন অংশীদার নেই। আমি হাযির। নিশ্চয় সমস্ত প্রশংসা, সমস্ত অনুগ্রহ ও সার্বভৌম ক্ষমতা তোমারই। তোমার কোন অংশীদার নেই।

শুধু নিয়ত করলে ইহরাম আরম্ভ হয় না; বরং নিয়ত ও তালবিয়া পাঠের মাধ্যমে ইহরাম শুরু হয়। তালবিয়া পড়ার পূর্বে মাথা থেকে চাদর সরিয়ে ফেলবে। সফর অবস্থায় অধিকহারে উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়তে থাকবে। 

বিশেষভাবে এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় পরিবর্তনের সময় বেশি বেশি তালবিয়া পড়বে। যেমন- সকাল-সন্ধ্যায়, ওঠা-বসায়, বাইরে যাওয়ার সময়, ভেতরে আসার সময়, মানুষের সাথে সাক্ষাতের সময়, ফরয নামাজসমূহের পর, স্থান ত্যাগের সময়, যানবাহনে উঠার সময় এবং তা হতে নামার সময়, ঘুম থেকে ওঠার সময়। এ সময়গুলোতে তালবিয়া পাঠের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যখনই তালবিয়া পড়বে তিনবার পড়বে। 

অতপর দরূদ শরীফ পড়ে এ দোয়া করবে-

أَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْئَلُكَ رِضَاكَ وَالْجَنَّةَ وَأَعُوْذُبِكَ بِرَحْمَتِك َ مِنَ النَّارِ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা রিজাকা ওলজান্নাতা, ওয়া আঊযুবিকা বিরাহমাতিকা মিনার না-র।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার সন্তুষ্টি ও জান্নাত চাই এবং তোমার রহমতের ওসীলায় জাহান্নামের শাস্তি থেকে আশ্রয় চাই।

মাসয়ালা : মহিলারা উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়বে না; বরং তারা এতটুকু আওয়াজে পড়বে যেন নিজে শুনতে পায়।

তাওয়াফের বর্ণনা

কাবা শরীফের চতুর্পার্শে নির্দিষ্ট নিয়মে সাতবার প্রদক্ষিণ করাকে তাওয়াফ বলে। কাবা শরীফের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে যে ‘হাজরে আসওয়াদ’ (কালো পাথর) স্থাপিত আছে, সেখান থেকে তাওয়াফ শুরু করে পুনরায় সেখানে এসে তাওয়াফ শেষ করবে। 

তাওয়াফ যেমন ওয়াজিব হতে পারে, অনুরূপ সুন্নাত ও নফলও হতে পারে। প্রতি তাওয়াফে সাতবার কাবা শরীফ প্রদক্ষিণ করতে হয় এবং প্রত্যেক তাওয়াফ হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু হয়ে সেখানে এসে শেষ হয়। তাওয়াফের সময় কাবা শরীফ তাওয়াফকারীর বাম দিকে থাকে। 

কাবা শরীফের কিছু অংশ ছাদবিহীন অবস্থায় আছে, তাকে ‘হাতীম’ বলে। হাতীমে কাবায় কাবা শরীফের ছাদের পানি পড়ার নল রয়েছে, তাকে ‘মীযাবে রহমত’ বলে। এ ছাদবিহীন অংশসহ তাওয়াফ করা আবশ্যক।

তাওয়াফের প্রত্যেক প্রদক্ষিণে উভয় হাত বা ডান হাত দ্বারা ‘রুকনে ইয়ামানী’ স্পর্শ করাকে ‘ইসতিলাম’ বলে। হাজরে আসওয়াদের বিপরীত দিকে অবস্থিত কাবা শরীফের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণকে রুকনে ইয়ামানী বলে। এটা ইয়ামানের দিকে অবস্থিত বলে তাকে রুকনে ইয়ামানী বলে। 

যে তাওয়াফের পর সাফা-মারওয়া সায়ী করতে হয়, (যেমন- ওমরার তাওয়াফকারীরা তাওয়াফের পর ওমরার সায়ী করে এবং অনেক হাজি তাওয়াফে কুদূমের পর সাফা-মারওয়া সায়ী করে) সে তাওয়াফে রমল ও ইযতিবা‘ সুন্নাত।

যেসব হাজি মীকাত থেকে হজ্জের ইহরাম বেঁধে আসে, তারা মসজিদে হারামে প্রবেশ করে প্রথমে তাওয়াফে কুদূম করে। এ তাওয়াফ সুন্নাত। যারা ওমরার ইহরাম বেঁধে আসবে, তারা তাওয়াফ শুরু করার পূর্বেই তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিবে।

রমল শুধু প্রথম তিন চক্করে করতে হয় এবং ইযতিবা‘ পূর্ণ সাত চক্করে করতে হয়। দু‘ কাঁধ হেলিয়ে একটু ঘন পদক্ষেপে বীরদর্পে চলাকে রমল বলে। 

ইহরামের চাদর ডান বগলের নীচ দিয়ে বের করে তার উভয় মাথা বাম কাঁধের উপর ফেলাকে ইযতিবা‘ বলে। ইযতিবা‘র মধ্যে ডান কাঁধ খোলা থাকে। রমল ও ইযতিবা‘ শুধু পুরুষদের জন্য, মহিলাদের জন্য নয়।

তাওয়াফ করা অবস্থায় কালেমায়ে সওম পড়তে থাকবে। রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে নিম্নোক্ত দোয়া পড়বে-

رَبَّنَا اٰتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِى الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ يَا عَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا رَبَّ الْعَالَمِيْنَ.

উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাওঁ ওয়া ফিলআখিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা আযাবান্নার। ইয়া আযীযু ইয়া গাফ্ফারু ইয়া রাব্বাল আলামীন! 

অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর এবং আখেরাতে কল্যাণ দান কর। আর আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা কর। হে পরাক্রমশালী! হে অতিশয় ক্ষমাশীল!! হে জগতসমূহের অধিপতি!

তাওয়াফের পর দু’রাকাত নামাজ

তাওয়াফ শেষ করে দু’রাকাত নামাজ পড়বে। এ দু’রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব। যদিও তা নফল তাওয়াফ হোক। 

এ নামাজ মাকামে ইবরাহীমের পেছনে আদায় করা সুন্নাত। মাকামে ইবরাহীমের পেছনে আদায় করার অর্থ হল, মাকামে ইবরাহীম নামাজ আদায়কারী ও বায়তুল্লাহ শরীফের মাঝখানে থাকবে। 

তাওয়াফের শেষ চক্করকে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করার মাধ্যমে সমাপ্ত করে মাকামে ইবরাহীমের দিকে অগ্রসর হওয়া অবস্থায় আয়াতখানা তেলাওয়াত করবে- وَاتَّخِذُوْا مِنْ مَّقَامِ إِبْرَاهِيْمَ مُصَلًّى  (‘তোমরা গ্রহণ কর মাকামে ইবরাহীমকে সালাত স্থলরূপে।’) অতপর দু’রাকাত নামাজ আদায় করবে। তাতে সূরা কাফিরূন ও সূরা ইখলাস পড়া সুন্নাত। 

তাওয়াফের এ দু’রাকাত নামাজ তাওয়াফ শেষ হওয়ার সাথে সাথে পড়া জরুরি, অকারণে বিলম্বিত করা মাকরূহ। তবে মাকরূহ ওয়াক্ত হলে বিলম্বিত করবে। 

এ নামাজ পড়ার সর্বোত্তম স্থান মাকামে ইবরাহীম, অতপর হাতীমে কাবা, অতপর বায়তুল্লাহ শরীফের নিকটে যেখানে সুযোগ হয়, অতপর হেরেম শরীফের সীমানার মধ্যে যেখানে সুযোগ পাওয়া যায়। 

কিন্তু যদি কেউ হেরেম শরীফের সীমানার মধ্যে না পড়ে জেদ্দা চলে আসে বা নিজের দেশে চলে যায়, তাহলে যেখানে স্মরণ হবে সেখানে আদায় করে নিবে। আদায় করা ব্যতীত দায়িত্বমুক্ত হবে না। তাওয়াফের নামাজের পর মাকামে ইবরাহীমের কাছে অবস্থান করে যা ইচ্ছা দোয়া করবে।

নামাজের পর জমজম পান করা

দু’রাকাত সালাতুত্ তাওয়াফ আদায় করে জমজম পানির নিকট যাবে। সেখানে পেট ভরে এবং পরিতৃপ্তির সঙ্গে পানি পান করবে। 

পান করার শুরুতেبِسْمِ اللهِ  (বিসমিল্লাহ) বলবে এবং শেষে اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ  (আলহামদুলিল্লাহ) বলবে। তিন শ্বাসের চেয়ে কমে পান করবে না। 

অতপর নিম্নোক্ত দোয়া পড়বে- 

أَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْئَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَّرِزْقًا وَّاسِعًا وَّشِفَاءً مِّنْ كُلِّ دَاءٍ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা ইলমান নাফিআওঁ ওয়ারিযক্বাওঁ ওয়াসিআওঁ ওয়াশিফাআমমিন কুল্লি দা-ইন। 

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উপকারী জ্ঞান, পর্যাপ্ত রিযিক এবং সমস্ত রোগ-ব্যাধি থেকে শিফা কামনা করি। 

এছাড়া অন্য যে কোন দোয়া ইচ্ছা হয় করবে। এরপর মুলতাযামে যাবে। হজরে আসওয়াদ ও বায়তুল্লাহ শরীফের দরজার মাঝে যে অংশ রয়েছে, তাকে মুলতাযাম বলে। মুলতাযাম আঁকড়ে ধরে কেঁদে কেঁদে দোয়া করবে। উভয় হাত উপরের দিকে উত্তোলন করে এবং মাথা, বুক ও গাল মুলতাযামের সাথে লাগিয়ে বিনয়-কাতরতার সাথে দোয়া করবে। এটা দোয়া কবূল হওয়ার বিশেষ স্থান। 

বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এখানে যে কোন দোয়া করলে অবশ্যই তা কবূল হয়। এ স্থানের জন্য বিশেষ কোন মাসনূন দোয়া হাদীসে বর্ণিত নেই। তাই যে কোন দোয়া পড়া যাবে।

সায়ীর বর্ণনা

সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাতবার আসা-যাওয়াকে সায়ী বলে। এটা হজও ওমরাহ উভয় ক্ষেত্রেই ওয়াজিব। হজের সায়ী তাওয়াফে কুদূমের পরেও হতে পারে, আবার তাওয়াফে যিয়ারতের পরেও হতে পারে। 

তাওয়াফের পর দু’রাকাত নামায আদায় করে প্রথমে হাজরে আসওয়াদের নিকট গিয়ে ইসতিলাম করবে। অতপর সাফা পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হবে। সাফা পাহাড় থেকে কিছু দূরে থাকতে সায়ীর নিয়ত করবে। 

অন্তরের নিয়তই যথেষ্ট; যা হাজরে আসওয়াদ ইসতিলাম করে সাফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সময় হয়ে গেছে। যখন সাফার নিকটবর্তী হবে, তখন এটা পড়বে: 

أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللهُ بِهٖ إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللهِ

উচ্চারণ: আবদাউ বিমা বাদাআল্লাহু বিহী ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআয়িরিল্লাহ।

অর্থ: আমি তা দ্বারা শুরু করছি, আল্লাহ যা দ্বারা শুরু করেছেন। ‘নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া (পাহাড়দ্বয়) আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্য হতে।’ (অর্থাৎ, সাফা থেকে শুরু করছি, যা কুরআনে পাকে মারওয়ার পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।) 

এটা পড়া সুন্নাত। সাফা পাহাড়ের এতটুকু উঁচুতে উঠবে, যেন বায়তুল্লাহ শরীফ দৃষ্টিতে আসে। (বর্তমানে সামান্য উপরে উঠলেই মসজিদে হারামের কোন কোন দরজা দিয়ে বায়তুল্লাহ শরীফের কিছু অংশ নজরে এসে পড়ে।) 

এরপর বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে মুখ করে দোয়ার ন্যায় হাত উত্তোলন করবে। এরপর তিনবার আল্লাহু আকবার বলবে এবং আল্লাহ তাআলার তাওহীদ বর্ণনা করবে এবং এ দোয়া পড়বে: 

لَا إلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَئٍ قَدِيْرٍ .

উচ্চারণ: লা- ইলাহা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকালাহু লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শায়ইং ক্বদীর।

অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তারই এবং তাঁরই জন্য সমস্ত প্রশংসা। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।

এরপর দরূদ শরীফ পড়ে যা ইচ্ছা দোয়া করবে। তিনবার এ আমলটি সম্পন্ন করবে। এরপর সাফা থেকে অবতরণ করে মারওয়ার দিকে যিকিরের সাথে চলবে। যখন সবুজ স্তম্ভ ছয় হাত দূরে থাকবে, তখন দৌঁড়ানো শুরু করবে। 

উভয় স্তম্ভের মধ্যবর্তী অংশ দৌড়ে অতিক্রম করবে। (এভাবে দৌঁড়ে অতিক্রম করা পুরুষদের জন্য; নারীদের জন্য নয়।) উভয় স্তম্ভের মধ্যবর্তী অংশ দৌঁড়ানোর সময় এ দোয়া পড়ার কথা বর্ণিত রয়েছে:  

رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ الأَعَزُّ اْلأكَرَمُ

উচ্চারণ: রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আন্তাল আআয্যুল আকরাম।

অর্থ: হে আমার রব! তুমি ক্ষমা কর এবং রহমত দান কর। আর তুমি তো সবচেয়ে বেশি মর্যাদাশালী। সবচেয়ে বড় মেহেরবান।

দ্বিতীয় সবুজ স্তম্ভে পৌঁছে দৌঁড়ানো বন্ধ করে স্বাভাবিকভাবে চলবে এবং যে কোন জিকির করতে থাকবে। যখন মারওয়ায় পৌঁছবে, তখন সাফায় যেরূপ আমল করেছিল অনুরূপ মারওয়ায়ও হাত উঠায়ে তিনবার আল্লাহু আকবার বলবে এবং পূর্বের দোয়াটি পড়বে। অতপর দরূদ শরীফ পড়ে যা ইচ্ছা দোয়া করবে। 

মারওয়ায় পৌঁছার পর এক চক্কর হয়ে গেল।

মারওয়ায় যিকির ও দোয়া করে সাফার দিকে যাবে। যখন সবুজ স্তম্ভ আসবে, তখন দৌঁড়ানো শুরু করবে। পরবর্তী সবুজ স্তম্ভ থেকে ছয় হাত অবশিষ্ট থাকতে দৌঁড়ানো বন্ধ করে স্বাভাবিক গতিতে চলবে। যখন সাফা পাহাড়ে পৌঁছবে, কিছুটা উপরে উঠে পূর্বানুরূপ যিকির ও দোয়া করবে। এখন দুই চক্কর পূর্ণ হল। 

এভাবে সাত চক্কর পূর্ণ করে সায়ী সমাপ্ত করবে। যা সাফা থেকে শুরু হয়ে মারওয়ায় গিয়ে শেষ হবে। ওমরাহ ও হজ্জের সায়ী একই রকম। উভয়টির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

ওমরাহর সায়ীর পর যখন হলক বা কসর করে নিল, তখন ওমরাহর কার্যক্রম সম্পূর্ণ হয়ে গেল এবং ইহরাম থেকে বের হয়ে গেল। এখন সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং ইহরাম পরিপন্থি কাজসমূহের নিষেধাজ্ঞা বিলুপ্ত হয়ে গেল।

লেখক: মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস, নিজামিয়া মাদ্রাসা ও মাদানিয়া খানকাহ, পূর্ব আগানগর, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা। 

 

 

কিউটিভি/আয়শা/২৮ মে ২০২৫, /রাত ৮:১৪

▎সর্বশেষ

ad