
ডেস্ক নিউজ : রাতের সর্বশেষ বুলেটিনে আবহাওয়া দফতর জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাতে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতিভারী (৮৯ মিমি) বর্ষণ হতে পারে। অতিভারী বর্ষণ কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে রাতে এক ফেসবুক পোস্টে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, রাত ৩টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে মোখার অগ্রবর্তী অংশ সেন্টমার্টিন দ্বীপে আঘাত হানা শুরু করতে পারে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়ে অতিক্রম করবে।
মোখার সর্বশেষ অবস্থান
রাতে আবহাওয়া দফতরের সর্বশেষ বুলেটিনে আরও জানানো হয় ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে এগোচ্ছে। এটি সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে রোববার (১৪ মে) সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।
এদিকে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
তবে সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকা ১৫ থেকে ২৫ ফুট উচ্চ বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এছাড়া চট্টগ্রাম উপকূলে প্রায় ১২ থেকে ১৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
অবজারভেশন টিম জানায়, মোখা কক্সবাজার জেলা ও মিয়ানমার উপকূলে প্রায় ১৮০ থেকে ২১৫ কিলোমিটার দমকা বা ঝড়ো বাতাসের প্রাবল্যতাসহ আঘাত হানতে পারে। এ সময় ঝড়ের শক্তির বাতাস প্রায় ২০০-২৫০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ জুড়ে বিস্তৃত থাকতে পারে। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলায় সর্বাধিক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছে ওয়েদার অবজারভেশন টিম।
আবহাওয়া দফতর কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত, চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ এবং মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। এছাড়া উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
কিউটিভি/আয়শা/১৩ মে ২০২৩,/রাত ১১:৫০