
ডেস্ক নিউজ : বিশাল এ পৃথিবীতে অসংখ্য জীবের বসবাস। এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো মানুষ। কারণ মানুষ বিবেক ও বুদ্ধির অধিকারী। এ কারণে অন্য প্রাণী অপেক্ষা মানুষ শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে। মানুষ তার বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয় শক্তির সাহায্যে নিজের কাজ নিজেই করতে পারে, বিবাদমান সমস্যার সমাধান খুব সহজেই দিতে পারে, যা অন্য কোনো জীব পারে না। বিবেক বুদ্ধির মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ও মনুষ্যত্বের জন্য মানুষ পৃথিবীর সেরা জীব হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘অবশ্যই আমি আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছি, তাদের জন্য জলে স্থলে যানবাহনের ব্যবস্থা করেছি, তাদের পবিত্র রিজিক দিয়েছি আর আমি তাদের আমার অধিকাংশ সৃষ্টির ওপর মর্যাদায় শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ সুরা আল ইসরা: ৭০
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালা বুদ্ধি ও চেতনায় মানুষকে বিশেষ স্বাতন্ত্র্য দান করেছেন। সবার ভেতর দিয়েছেন একটি পবিত্র সত্তা। তিনি বাকশক্তি ও বোঝাপড়ার নৈপুণ্যের মধ্য দিয়ে মানুষের পূর্ণতা দান করেছেন। প্রকৃতপক্ষে বাকশক্তি ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার যে নৈপুণ্য আমাদের দিয়েছেন, আমরা তার কতটুকু সদ্ব্যবহার করি?ধরে নিলাম কোনোভাবে দেহ সত্তার উত্তরে ইতিবাচক সাড়া আছে, তখনই অন্তর সত্তার অকপট স্বীকারোক্তি, সমাজ আমার কৃতকার্যে নাক ছিটকায়, তাই আমিও স্বার্থপরতা দেখাই! পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব আমার ওপর, পান থেকে চুন খসলেই আমিও খোঁটা দিয়ে যাই! বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন আমাকে না দেখলে, আমিও তাদের দেখব না! আমার ছেলেপেলে আমাকে অশ্রদ্ধা করে, তাই আমিও তাদের তিরস্কার করি! আপনজন আমাকে ঠকিয়েছে, তাই আমিও তাদের ঠকাবো! কারও সঙ্গে আমার সম্পর্কের অবনতি, আমিও হন্য হয়ে ক্ষতি করার সুযোগ খুঁজি! তিনি আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, আমিও তার ওপর খড়গহস্ত!
কিন্তু কেন আমরা সেরা জীব মানুষ হয়েও পশুর মতো এত প্রতিশোধ পারায়ণ? আগে জানতাম জীব-জন্তুর কাছে মানুষ নিরাপদ নয়, এখন প্রায়শই দেখা যায় জীব-জন্তুসহ মানুষও মানুষের কাছে নিরাপদ নয়। সমাজে হত্যা, খুন, গুম, ধর্ষণ, রাহাজানি, মিথ্যাচার, অনাচার, অবিচার, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির যে বিকৃত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, তা প্রমাণ করে মানুষের মনুষত্ব সত্তা বিলুপ্তির পথে। মানুষের বোধশক্তি হ্রাস পেয়েছে। ক্ষমা প্রদর্শনের ইচ্ছা মানুষের অন্তর থেকে নির্বাসিত হয়ে গেছে। মানুষের মধ্যে ধৈর্য, সংযম এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা এখন আর দেখা যায় না।
অথচ আমরা মানুষ, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবন; আমরা পশু নই। এ কথা প্রায়শই ভুলে যাই। আমরা ক্ষমা করাকে কাপুরুষত্ব মনে করি। অথচ ক্ষমা করা কাপুরুষত্ব নয়, মহৎ গুণ। জীবন বোধের কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন, ‘কারও ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার আনন্দ থাকে কয়েকদিন; কিন্তু কাউকে ক্ষমা করার আনন্দ আজীবন থেকে যায়।’
আমাদের একজন শিক্ষক বলেছিলেন, ‘প্রতিটি মানুষের মধ্যেই তিনটি ‘শু’ থাকে। যিশু, শিশু ও পশু। মানুষ পশুর মতোই জন্ম নেয়, মানুষ হয়ে উঠতে হলে সর্বপ্রথম পশু সত্তাকে ত্যাগ করতে হবে। যেটি মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। এটি আমাদের বিসর্জন দিতে হবে।’ তিনি বারবার গুরুত্বের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘পশু সত্তা যেন কোনো মতোই মানব মনে বাসা না বাঁধে। আমাদের মন হবে শিশুসুলভ।’আমরা জানি, সুখ-দুঃখের জীবন সংসারে, ভুল বোঝাবুঝি থাকা স্বাভাবিক। পারিবারিক, সামাজিক ও জীবনের অন্যান্য পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ থাকতেই পারে। শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো অন্যকে ক্ষমা করে দেওয়া। একই সঙ্গে সব ধরনের স্বার্থপরতা থেকে বের হয়ে এসে সভ্য ও সুন্দর মনের মানুষের পরিচয় দেওয়া।
কিউটিভি/আয়শা/১৭ মার্চ ২০২৩,/বিকাল ৩:৩০