
খোরশেদ আলম বাবুল,শরীয়তপুর প্রতিনিধি : মনোয়ারা বেগম নামে এক হতভাগা শিশু জন্মেছিলেন ৮০ বছর পূর্বে। জন্মের আড়াই বছর পরেই তার পিতৃবিয়োগ হয়। তখন তার ৪০ দিন বয়সী একটি ভাই ছিল। মাও পুনারয় বিয়ে করে অন্য স্বামীর ঘরে চলে যায়। সেই থেকেই মনোয়ারার কষ্টে দিন কাটতে শুরু করে। কিছুদিন পরে ছোট ভাইয়ের মৃত্যু হয়। একটু বুঝতে শিখলেই দাদির কাছে আশ্রিত মনোয়ারা বেগমকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। মনোয়ারার স্বামীও ছিলেন একজন হতদরিদ্র। স্ত্রী ও সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে স্বপরিবারে ঢাকায় চলে যায়। কিছুদিন পরে স্বামীর মৃত্যু হয়। সন্তানদের খাবার জোগাতে নিজেই দিনমজুরী করতেন। বড় ছেলে বিয়ের উপযুক্ত হয়। তখন ছেলেকে বিয়ে দেন। নাতি-নাতনিদের নিয়ে একটু সুখের সময় কাটছিল মনোয়ারা বেগমের। তাও বেশীদিন স্থায়ী হয়নি তার। কিছুদিন পরেই বড় ছেলের মৃত্যু হয়। এই ভাবেই ৮০ তে পাঁ রেখেছেন মনোয়ার বেগম। এর মধ্যে আর বাপের রেখে যাওয়া ভিটায় তার ফেরা হয়নি।
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার দক্ষিন চাকধ গ্রামের ছবর আলী কাজির মেয়ে মনোয়ারা বেগম। চার বছর পূর্বে মনোয়ারা বেগম পিতার রেখে যাওয়ার ভিটা-মাটিতে ফিরেন। তখন দেখেন তার পিতার রেখে যাওয়া ভিটা-মাটি স্থানীয় আব্দুল গনি ছৈয়াল, হাতেম আলী শিকদার, ছাদেম আলী শেখ, আব্দুল মালেক ছৈয়াল ও দেলোয়ার ছৈয়ালরা ভোগ দখল করছেন। তারা জমির মালিকদের কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছেন বলে মনোয়ারাকে জানিয়েছেন। কিছুতেই তারা জমি মনোয়ারাকে ফেরত দিবেনা বলে জানিয়েছেন। তার পর থেকে মনোয়ারা বেগম স্থানীয় শালিশ দরবার শেষে থানা-পুলিশের আশ্রয় নেয়। সেখান থেকেও কোন সমাধান না পেয়ে এবার আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন।মনোয়ার বেগম জানায়, ২৫-৩০ বছর পূর্বে সে একবার বাড়ি এসেছিলেন। তখন তার পিতার রেখে যাওয়া জমি দখল মুক্ত ছিল। এবার এসে দেখে জমি দখল হয়ে গেছে। সে জমি বিক্রি করেনি। তাহলে তার পিতার রেখে যাওয়া জমি বিক্রি কে এবং কিভাবে করল। এটাই তার প্রশ্ন।
ইদ্রিস ছৈয়াল নামে একজন ক্রেতা জানায়, সে মনোয়ারার চাচা আইউব আলী কাজীর কাছ থেকে জমি ক্রয় করে বাড়ি করেছেন। সে মনোয়ারার জমি ক্রয় করেনি। মনোয়ারার পিতা রেখে যাওয়া জমি অন্যান্যরা কিভাবে ভোগ দখল করতেছে তা ইদ্রিস ছৈয়াল জানেন না।শত বছর বয়সী স্থানীয় মুরব্বি কাদির বক্স ছৈয়াল জানায়, মনোয়ারা একটা দুঃখী মেয়ে। মনোয়ারার আড়াই বছরের সময় তার পিতার মৃত্যু হয়। তখন মনোয়ারার ছোট আর একটি ভাই ছিল। মনোয়ারা দাদীর কাছে বড় হয়। ছোট বয়সেই তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। মনোয়ারা এর পূর্বে তার পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ভোগ দখলে আসে নাই। মনোয়ারা কোন জমিও বিক্রি করে নাই। এই কথার সমর্থণ করেছেন স্থানীয় আরেক মুরব্বি কিরফত আলী ছৈয়াল (৮০)।
কিউটিভি/অনিমা/১৬ অক্টোবর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ২:৪১