নূরুল ইসলাম নূরচান এর ছোটগল্পঃ বিদায় ঘণ্টা

superadmin | আপডেট: ২০ জুন ২০২২ - ১১:৪২:৩৪ পিএম

 বিদায় ঘণ্টা


রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশ। বিশাল আকাশ জুড়ে কোথাও একফোঁটা মেঘের বালাই ছিলো না।কিন্তু হঠাৎ করেই যেন কালো মেঘে ছেয়ে যাচ্ছে আকাশটা। প্রতিবেশীরা মোবাইল ফোনে আমির উদ্দিনের অসুস্থতার কথা জানিয়েছে দু ছেলেকে। ছেলেদের একজন থাকেন ঢাকায় অন্যজন জেলা শহরে। তারা সরকারি চাকরি করেন। ভালো মানের চাকরি। বিয়ে করেছেন, দুজনেরই সন্তানাদি আছে।

আমির উদ্দিন একজন খাঁটি কৃষক ছিলেন।জমিজমা তেমন একটা ছিল না। খুব সামান্য জমিজমা ছিল। নিজের জমির পাশাপাশি বর্গা চাষ করতেন এবং অন্যের জমিতে কামলা খেটে দুই ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছেন। গ্রামের বাড়িতে একটি ডেড়াঘরে বসবাস করেন আমির উদ্দিন ও তার স্ত্রী।

ছেলেদের চাকরি হওয়ার পরপরই তারা বিয়ে করে কর্মস্থলের আশেপাশে দামি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। বাবা-মাকে ভরণপোষণ ও দেখাশোনা করার মত সময় তাদের নেই।

তাই বাধ্য হয়ে আমির উদ্দিন পড়ন্ত বয়সেও কামলা খেটে সংসার পরিচালনা করছিলেন। এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর থেকে বিছানা নিয়েছে। এর মধ্যে ডাক্তার দেখানো হয়েছে। যা টাকা পয়সা ছিল তা ডাক্তার এবং ওষুধের পেছনে চলে গেছে। এখন হাত একেবারেই খালি।

নাতিপুতি কোলে নিয়ে আদর করার অনেক শখ ছিল বুড়োবুড়ির। কিন্তু সেই শখ পূরণ হয়নি। বড় ছেলেকে আমির উদ্দিন একদিন বলেছিল, ‘বাবা তোমার পোলাপান লইয়া একবার আইয়ো, তাগোরে কোলে নিয়া আদোর করার আমগো অনেক আউশ।’ বাবার কথার জবাবে ছেলে বলেছিল, ‘আসবো।’ কিন্তু আর আসেনি।

কিছুক্ষণ আগেও আকাশটা ছিলো নির্মল, মেঘহীন। হঠাৎ করেই আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। আস্তে আস্তে আমির উদ্দিনের বাড়ির উপরে আকাশটা মেঘে ঢেকে যাচ্ছে এবং বাতাস ভারী হয়ে আসছে। বাড়িতে লোকজনের ভিড় ধীরে ধীরে বাড়ছে। আমির উদ্দিন মাঝেমধ্যে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে, বুকটা ওঠানামা করছে খুব দ্রুত। রক্ত প্রবাহ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে তার শিরা-উপশিরায়।

আমির উদ্দিনের মাথার কাছে অনেকক্ষণ যাবত বসে থাকা এক মুরুব্বী হঠাৎ বলে উঠলেন ‘সে আর নেই।’ একথা শুনে উপস্থিত সকলের মুখে সমস্বরে আওয়াজ উঠল, ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।’

এদিকে আমির উদ্দিনের ছেলেদ্বয় বউ ও ছেলেমেয়েসহ এসে উপস্থিত হলো বাড়িতে। জানতে পারলো, তাদের বাবা আর নেই। তারা মা মা বলে ডাকতে ডাকতে মায়ের কাছে গেলো। কিন্তু মা’র কোনো সাড়াশব্দ নেই। মা ছিল বাবার শিয়রের কাছে বসা। বড় ছেলে মা’র শরীরে হাত দিতেই ঢলে পড়ে গেলো মা। মা’র চোখ দুটো ছিলো খোলা। ছোট ছেলে চোখ দুটো বন্ধ করে দিলো।

 

 

 

লেখক : নূরুল ইসলাম নূরচান, সাবেক সভাপতি- শিবপুর প্রেসক্লাব, নরসিংদী। প্রকাশিত গ্রন্থঃ ১. এরই নাম জীবন, ২. বাইশে মাঘ (গল্পগ্রন্থ), ৩. চেনাপৃথিবী অচেনা মানুষ।

সম্মাননাঃ ‘বাইশে মাঘ’ গল্পগ্রন্থের জন্য ‘কবি খান মুহাম্মদ সাহিত্য পুরস্কার ২০১০ এবং আমির প্রকাশন সাহিত্য পুরস্কার ২০১০’ পান।

 

 

কিউএনবি/বিপুল/২০.০৬.২০২২/রাত ১১.৩৫

▎সর্বশেষ

ad