ডেস্কনিউজঃ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকের প্রচেষ্টায় দীর্ঘ ১৬২ ঘণ্টা পর আমরণ অনশন কর্মসূচি ভাঙলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ২১ মিনিটের দিকে তারা আমরণ অনশন ভাঙেন। এর কিছুক্ষণ পর সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে জাফর ইকবাল বলেন, ‘তোমারা টের পাচ্ছ না, তোমারা কী করেছ। এটাই আমার দুঃখ। বাংলাদেশ ৩৪টা ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর বলেছেন, এই ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে তারা সবাই পদত্যাগ করবেন। এই জিনিসটা দেখার খুব শখ আমার যে, আমাদের এরকম ভাইস-চ্যান্সেলর আছেন, যাদের আদর্শ এত বেশি যে উনারা অন্যর সহমর্মিতায় নিজেরা পদত্যাগ করবেন। কিন্তু আমার ধারণা, আমার এ আশা সহজে মিটবে না। তারা এটা বলেছেন, কারণ ওই ৩৪ জন ভাইস-চ্যান্সেলরের ঘুম নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তোমরা যেটা করেছো, আমি আশা করি এর থেকে বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটিগুলোর একটা মোডিফিকেশন হয়েছে। সবাই যেন এখন নতুন করে অ্যানালাইসিস করে যে, আমি যে মানুষটাকে ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে পাঠিয়েছি সে কি আসলেই ভাইস-চ্যান্সেলর হওয়ার যোগ্য?
তিনি আরও বলেন, আমি অনেক কিছু জানি, কিন্তু পাবলিকলি বলতে চাই না। কারণ নিজেদের দুর্বলতার কথা বলতে ভালো লাগে না। তোমাদেরকে শুধু এটুকু বলতে চাই, তোমরা যেটা করেছো এটার কোনো তুলনা নেই। যে আন্দোলনটা তৈরি করেছো বাংলাদেশের প্রত্যেকটা যুবক ছেলেমেয়ে তোমাদের সঙ্গে আছে।
পুলিশের উপর শিক্ষার্থীদের গুলি ছোঁড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ছাত্ররা গুলি করেছে, আমাকে একটা ছবি দেখান। সবার কাছে একটা স্মার্টফোন থাকে। একটা ছবি অন্তত দেখান যে ওরা গুলি করেছে।
অধ্যাপক জাফর ইকবাল সাবেক শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা করায় তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বিষয়ে বলেন, সব মামলা তুলে নেওয়া হবে বলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে জানানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যেভাবে কথা হয়েছে তা বাস্তবায়িত হবে বলে অধ্যাপক জাফর ইকবাল আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করেন।
এর আগে বুধবার ভোর রাতে ক্যাম্পাসে পৌঁছান শাবির সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন। এ সময় তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের কথা শুনেন। একপর্যায়ে,আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন এবং অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন। এসময় অনশনকারীরা তাদের কথা মতো অনশন ভাঙতে রাজি হন। তবে হাসপাতালে অবস্থানরত অনশনকারীদেরসহ সবাই একসঙ্গে অনশন ভাঙ্গবেন বলেন তারা জানান। পরে হাসপাতালে থাকা অন্যান্য অনশনকারী ভিসির বাসভবনের সামনে একত্রিত হলে অধ্যাপক জাফর ইকবাল অনশনকারী শিক্ষার্থী হামিদা আব্বাসিকে পানি পানের মাধ্যমে অনশন ভাঙান। তবে আন্দেলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন। পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে একজন আন্দোলনকারী জানান, অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও আনুসাঙ্গিক কাজ শেষে তারা তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) হতে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজার পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। ধারাবাহিক বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন গত রবিবার (১৬ জানুয়ারি)। এসময় শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি হামলা হলে তা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে রূপ নিয়ে শাবি‘র ভিসি পদত্যাগের আন্দোলনে রূপ নেয়। কিন্তু তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় গত ১৯ জানুয়ারি দুপুর হতে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করে।
বিপুল/২৬শে জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ |বিকাল ৫:৩০