
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরানে দীর্ঘদিনের জ্বালানি ভর্তুকি ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন এনেছে দেশটির সরকার। শনিবার থেকে দেশটিতে নতুন দামে পেট্রোল বিক্রি শুরু হয়েছে, যা ২০১৯ সালের বিতর্কিত মূল্যবৃদ্ধির পর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। সে সময়ে হঠাৎ দাম বাড়ানোর জেরে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়নে প্রাণ হারান অন্তত তিন শতাধিক মানুষ।
ইরানে সস্তা পেট্রল বহু প্রজন্ম ধরে এক ধরনের ‘জন্মগত অধিকার’ হিসেবে বিবেচিত। তবে বর্তমানে ইরানের শাসকগোষ্ঠী প্রবল অর্থনৈতিক চাপে আছে। দ্রুত অবমূল্যায়ন হওয়া মুদ্রা এবং পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সরকারের জন্য ভর্তুকি ধরে রাখা কঠিন করে তুলেছে। কয়েক পয়সা দরে বিশ্বের অন্যতম সস্তা পেট্রল সরবরাহ করতে গিয়ে প্রতিবছর গুনতে হচ্ছে বিপুল অঙ্কের অর্থ।
নতুন ব্যবস্থায় তিন স্তরের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। মাসে প্রথম ৬০ লিটার পেট্রল মিলবে আগের মতোই ভর্তুকি মূল্যে- লিটারপ্রতি ১৫ হাজার রিয়াল। পরবর্তী ১০০ লিটারের দাম থাকছে ৩০ হাজার রিয়াল। এর বেশি কিনতে হলে নতুন নির্ধারিত দরে লিটারপ্রতি ৫০ হাজার রিয়াল গুনতে হবে। এ ঘোষণার পর কিছু স্থানে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। তবুও সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে রাশিয়ার পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জ্বালানি ভর্তুকি দিয়েছে ইরান, যা প্রায় ৫২ বিলিয়ন ডলার। অথচ অর্থনীতিবিদদের মতে, এই ভর্তুকি না কমিয়েছে বাজেট ঘাটতি, না থামিয়েছে মূল্যস্ফীতি। বর্তমানে দেশটিতে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি প্রায় ৪০ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, পেট্রলের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী মোহসেন পাকনেজাদ বলছেন, এই পদক্ষেপ জ্বালানি ব্যবহারের প্রবণতা সংশোধনের সূচনা মাত্র।
বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক চাপে বিপাকে পড়া ইরানি জনগণের সামনে জ্বালানির দাম নিয়ে সরকারের যেকোনো ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত আবারও বড় ধরনের সামাজিক অস্থিরতার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
আয়শা/১৪ ডিসেম্বর ২০২৫,/সন্ধ্যা ৬:৫৫






