
ডেস্ক নিউজ : ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হবে- এমন ঘোষণায় চাঁদপুরে ইলিশের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের ইলিশ কেনা এখন পুরোপুরি নাগালের বাইরে। শনিবার বিকালে চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দেখা যায়, গড়ে ৩ থেকে ৪শ মণ ইলিশ পরিবহণযোগে আসছে; যা এ মাছঘাটে একেবারেই নগণ্য পরিমাণ বলে জানান মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল বারী জমাদার মানিক।
গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ভরা মৌসুমে ১ কেজির ওপরে সাইজের প্রতি কেজি ইলিশের দাম ছিল ১ হাজার ৫শ টাকা। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ছিল প্রতি কেজি ১ হাজার তিনশ টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে এক কেজির ওপরের সাইজের প্রতি কেজি ইলিশের দাম ছিল ১৩০০ টাকা। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ওজনের ইলিশ প্রতি কেজির দাম ছিলো ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা।
ক্রেতাদের অভিযোগ- কোনো উৎপাদন খরচ না থাকলেও এই মাছ নিয়ে বরাবরের মতো এবারও বাজারে এক ধরনের সিন্ডিকেট সক্রিয়। তারা ইলিশ ধরা থেকে বাজারে বিক্রি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে দাম বাড়িয়ে দেয়। ফলে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যায় এই সুস্বাদু মাছ। মৎস্য অধিদপ্তরের বক্তব্যও প্রায় একই রকম।
কিন্তু মাছ ধরা জেলেসহ ব্যবসায়ীদের দাবি, ইলিশ ধরতে খরচ বেশি বলে বাজারে দাম বাড়তি। কোনো সিন্ডিকেট বা কারসাজি নেই এখানে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে ইলিশের অন্যতম পাইকারি বাজার ‘চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র’। দাম ভালো পাওয়ার কারণে সাগর উপকূলীয় এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা নৌ এবং সড়কপথে ইলিশ বিক্রি করতে নিয়ে আসে এখানের আড়তগুলোতে।
স্থানীয় পদ্মা-মেঘনা নদীতে আহরিত ইলিশ এসব আড়ৎ ঘুরে চলে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। একই সঙ্গে ইলিশের বিক্রি বেড়েছে অনলাইনে; কিন্তু ধারাবাহিকভাবে ইলিশের প্রাপ্যতা কমে যাওয়ায় দুই বছরের ব্যবধানে ইলিশের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০২৩ সালে এক কেজির ওপরে ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৩০০ টাকা। বর্তমানে একই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ থেকে ২৬০০ টাকা।
আড়তদার মো. আকবর জানান, এক কেজির উপরে ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ২২০০ টাকা। ছোট সাইজের ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ইলিশ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা। দেশের নানা স্থান থেকে অনেকে আসছেন এখানকার ইলিশ কিনতে। সেজন্য চাহিদা বাড়ার সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হবে এমন ঘোষণা। তবে ব্যতিক্রম হচ্ছে এবার ছোট সাইজের ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে বেশি।
এদিকে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার দেলোয়ার হোসেন ব্যাপারী জানান, দুই থেকে তিন বছর আগে সাগর উপকূলীয় এলাকা থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জোগান ছিল। এই সাইজের ইলিশের চাহিদা ছিল সবচাইতে বেশি। কারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ছিল। এই সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে।
ইলিশের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবেবরাত সরকার জানান, আমদানি যখন কম তখন মাছের দাম বাড়ে। আর সারা দেশের লোকজনের চাঁদপুরের ইলিশের প্রতি নজর থাকে। গত দুই বছর ইলিশের ভরা মৌসুমে আমদানি ছিল ১ থেকে দেড় হাজার মণ। চাহিদা বেশি থাকার কারণে দাম বেড়ে যায়। অনলাইনেও প্রতিদিন ইলিশ বিক্রি হয় ১০০ থেকে দেড়শত মণ। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন ভ্রমণ করতে এসে সরাসরি ইলিশ কিনে নেয়। সব মিলিয়ে চাহিদা বেশি এবং আমদানি কম থাকায় ইলিশের দাম প্রতি বছরই বাড়ছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জুলাই–আগস্টে পদ্মা–মেঘনাসহ বিভিন্ন নদী থেকে ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ আহরিত হয়েছে। গত বছর একই সময়ে আহরিত হয়েছিল ৩ হাজার ৬২৯ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাউসার দিদার বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদীর নাব্যতা হ্রাস, অবৈধ জাল ব্যবহার ও দূষণের কারণে এ বছর ইলিশের সরবরাহ কম।
আয়শা/১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /রাত ১১:৪৪