
স্পোর্টস ডেস্ক : এশিয়ান ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই রোমাঞ্চ। ম্যাচের পরতে পরতে থাকে উত্তেজনা। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখার জন্য ভক্ত-সমর্থকদের অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়। তার মূল কারণ ভারতের একঘেয়েমি। তারা রাজনীতিকে খেলায় টেনে এনে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে খেলতে অনীহা প্রকাশ করে।
প্রতিবেশী দেশ হিসেবে দুই দেশের সীমান্ত নিয়ে ঝুট-ঝামেলা থাকতেই পারে। সেটা দুই দেশের পরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় দেখবে। সেখানে খেলোয়াড়দের মাথা না ঘামানোই বেটার! কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটাররা, খেলার সঙ্গে রাজনীতিকে গুলিয়ে মাঠের লড়াইকে করেছে কলুষিত। মূলত এ কারণেই ২০১৩ সালের পর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলছে না ভারত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) টুর্নামেন্ট ছাড়া ভারত-পাকিস্তানের লড়াই দেখা যাচ্ছে না।
সবশেষ গত জুলাই মাসে অবসরে যাওয়া তারকাদের নিয়ে ‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লেজেন্ডস’ লিগের আয়োজন করা হয়। সাবেকদের সেই সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির বন্ধন জোড়ালো করার টুর্নামেন্টেও রাজনৈতিক ইস্যু সামনে এনে টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলেনি ভারত।
ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার পর পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার শহীদ আফ্রিদি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা ইংল্যান্ডে ক্রিকেট খেলতে এসেছি, ব্যক্তিগতভাবে কথা বলতে এসেছি এবং বন্ধুত্বপূর্ণভাবে আড্ডা দিতে এসেছি। কিন্তু কখনো কখনো একটা বাজে লোক অন্য সবার সবকিছু নষ্ট করে দেয়।’সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিখর ধাওয়ান, হরভজন সিং, ইউসুফ পাঠান, ইরফান পাঠান ও সুরেশ রায়নারা পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামতে আপত্তি জানিয়ে আয়োজকদের কাছে চিঠি লেখেন।
৯ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে এশিয়া কাপ। আগামী রোববার আসরের হাই ভোল্টেজ ম্যাচে মুখোমুখি হবে ভারত-পাকিস্তান। তার আগে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা ‘প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া’কে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ভারতীয় সাবেক তারকা স্পিনার হরভজন সিং। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি জুলাইয়ে ‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লেজেন্ডস’কাপে পাকিস্তান ম্যাচ বর্জন নিয়ে কথা বলেছেন।
হরভজন সিং জানান, ‘সব সময়ই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ আলোচনার কেন্দ্রে থাকে। আমরা ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লেজেন্ডসে খেলেছি, কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামিনি। অপারেশন সিঁধুর বুঝিয়ে দিয়েছে– তাদের সঙ্গে কোনো ক্রিকেট কিংবা বাণিজ্য চলতে পারে না।’
এশিয়া কাপে পাকিস্তান ম্যাচ ভারত বয়কট করবে কিনা জানতে চাইলে হরভজন বলেন, ‘প্রতিটি মানুষের নিজস্ব মত থাকতে পারে। তবে সম্পর্ক ভালো না হলে ক্রিকেট বা বাণিজ্য, কোনোটাই হওয়া উচিত নয়। সরকার যদি অনুমতি দেয়, সেটা আলাদা বিষয়। কিন্তু সম্পর্কের সুষ্ঠু অবস্থা সবচেয়ে জরুরি।’
ইংল্যান্ডের বার্মিংহামের এজবাস্টনে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লেজেন্ডসে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বাতিল হওয়ার পর শহীদ আফ্রিদির জানান, ‘ভারতীয়রা যদি পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতেই না চায়, তাহলে এখানে (ইংল্যান্ডে) আসার আগেই বলে দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তারা এখানে এসেছে, এমনকি অনুশীলনও করেছে। কিন্তু হঠাৎ এক দিনের মধ্যে সবকিছু বদলে গেল।’
৪৫ বছর বয়সী এই তারকা আরও বলেন, ‘খেলাধুলার মাধ্যমে দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই যদি রাজনীতি জড়িয়ে পড়ে, তাহলে সম্পর্কের উন্নতি হবে কী করে? আলোচনা ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান করা যায় না। এ কারণেই এই ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। যোগাযোগের ঘাটতি পরিস্থিতিকে শুধু খারাপের দিকেই নিয়ে যায়। একজন খেলোয়াড়ের তার দেশের জন্য ভালো দূত হওয়া উচিত, লজ্জার কারণ নয়।’
ম্যাচ বাতিল হওয়ার খবরে ভারতীয় ক্রিকেটারদের ওপর চটেছেন আবদুর রউফ খানও। পাকিস্তানের সাবেক এই পেসার বলেছেন, ‘ওরা (ভারতীয়রা) জনগণকে দেখাতে চায়, তারা পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলে না। কিন্তু পর্দার আড়ালে ওরা পাকিস্তানিদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করে, কেনাকাটা করে। এটা মোটেও ভালো ব্যাপার নয়।’
আয়শা/১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /সন্ধ্যা ৬:০৫