
মো. সাইদুল আনাম, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে চাঁদা না দেয়ায় প্রাণ দিতে হয়েছে এক কৃষককে। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আরেক কৃষক। নির্মম ও পৈশাচিক হত্যাকান্ডে এলাকাবাসী হতবাক হলেও চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ তারা। তবে পুলিশ বলছে অপরাধী যেই হোক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সরজমিনে এলাকা ঘুরে জানাগেছে, দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের বাগোয়ান কান্দিপাড়া গ্রামের কৃষক সারফান সরদার ও বায়জিদ সরদারের কাছে একই এলাকার সোহেলের নেতৃত্বে সাদ্দাম, ওবায়দুল, রুবেল, মনি, নুরুল ও লেমন মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে আসছিল। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে তারা এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করে আসছে। একইভাকে দুই কৃষক সারফান সরদার ও বায়জিদ সরদারের কাছেও মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে তারা।
কৃষকরা তাদের চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সৃষ্টি হয় বিরোধের। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) কৃষক সারফান সরদার তার পোষা গরু ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় বিক্রয় করলে চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা ওইদিন রাতে হানা দেয় সারফান সরদারের বাড়িতে এবং চাঁদার টাকা দাবি করে। দিতে না চাইলে সন্ত্রাসীরা কৃষক সারফান সরদারকে বাড়ি থেকে অস্ত্রের মুখে বাগানে নিয়ে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করে।
একই সময় বায়জিদ সরদার ওরফে বাখেরকেও নির্মমভাবে কুপিয়ে বামহাত বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। তবে সে প্রাণে বাঁচলেও বর্তমানে মৃত্যু শয্যায় রয়েছেন তিনি। হত্যাযজ্ঞ শেষে তারা উল্লাস করে হতাহত কৃষকদের বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে সন্ত্রাসীরা ততক্ষণে এলাকায় গুলি বর্ষণ ও বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে নির্বিগ্নে চলে যায়।
নিহত সারফান সরদারের মেয়ে মিম খাতুন জানান, আমারা বাবা সারফান সরদারকে ওইদিন রাতে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায় সোহেলের নেতৃত্বে সাদ্দাম, ওবায়দুল, রুবেল, মনি, নুরুল ও লেমন সহ জামালপুর সীমান্ত থেকে ভাড়া করে আনা সন্ত্রীারা। পাশের একটি বাঁশবাগানে আমার বাবাকে পা কেটে ও গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করে তারা। গরু বিক্রির টাকা নিতে এসেছিল তারা। বাবা টাকা দিতে না চাইলে এ হত্যাযজ্ঞ চালায়। এর আগেও আমার বাবাকে পা কেটে দিয়ে হত্যা করার হুমকি দিয়েছিল ওই সন্ত্রাসীরা।
তিনি নিরাপরাধ বাবার খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে। সন্ত্রাসী সোহেল বাহিনীর ভয়ে ভীতসন্ত্রস্থ এলাকাবাসী মুখ খুলতে ভয় পেলেও তারা হত্যাকান্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। সেইসাথে এলাকাবাসী সন্ত্রাস ও চাঁদামুক্ত শান্তিতে বসবাস করতে পারে সে আহ্বানও জানিয়েছে। হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান শেখ জানান, নিহত সারফান সরদারের স্ত্রী হাজেরা খাতুন বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
হত্যার ঘটনায় ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পাশাপাশি হত্যাকান্ডে জড়িত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে। পুলিশ ও সেনা সদস্যদের টহল চলামান থাকলেও হত্যাকান্ডের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে এখনও। হত্যাকারীরা আইনের আওতায় না আসলে পুনরায় সহিংসতার আশঙ্কা এলাকাবাসীর।
আয়শা/১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /রাত ৮:১৪