
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতীয় উদ্যোক্তা আওয়াইস আহমেদ যখন ২০১৯ সালে বেঙ্গালুরুতে তার স্যাটেলাইট স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করেন তখনও তার দেশ বেসরকারি খাতে মহাকাশ শিল্প উন্মুক্ত করা থেকে পিছিয়ে ছিল। পিক্সেলের প্রতিষ্ঠাতা আওয়াইস বলেন, যখন আমরা শুরু করি, তখন একেবারেই সমর্থন ছিল না, কোনও গতি ছিল না।
এই প্রতিষ্ঠানটি আর্থ ইমেজিং স্যাটেলাইটগুলোর একটি নক্ষত্রমণ্ডলীয় অবস্থান নির্দিষ্ট করছে। প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম শুরুর পর থেকে বেসরকারি মহাকাশ খাত দ্রুত বিকাশমান বিশ্ববাজারে প্রবেশ করেছে।
বর্তমানে ১৯০টি ভারতীয় মহাকাশ স্টার্টআপ রয়েছে, যা এক বছরের আগের তুলনায় দ্বিগুণ। ২০২১ এবং ২০২২-এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। বিজনেস কনসালটিং প্রতিষ্ঠান ডেলয়টি কনসালটেন্সি এ হিসাব প্রকাশ করেছে। খবর বাসসের।
আওয়াইস বলেন, অনেক ভারতীয় বিনিয়োগকারী মহাকাশ প্রযুক্তির বিষয়ে ইচ্ছুক ছিলেন না। কারণ এটি আগে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এখন আপনি দেখতে পাচ্ছেন আরও বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান ভারতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে এবং আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এখন আসতে শুরু করেছে।
পিক্সেল হাইপারস্পেকট্রাল ইমেজিং স্যাটেলাইট তৈরি করে। এটি এমন প্রযুক্তি যা সাধারণ ক্যামেরায় অদৃশ্য সেটির বিশদ বিবরণ প্রদান করতে আলোর বিস্তৃত বর্ণালী ক্যাপচার করে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এটি এই ‘গ্রহের জন্য একটি স্বাস্থ্য মনিটর’। এর মাধ্যমে জলবায়ু ঝুঁকি যেমন বন্যা, দাবানল বা মিথেন লিকের মতো ঘটনা শনাক্ত করা যাবে।
পিক্সেল প্রাথমিকভাবে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) রকেট ব্যবহার করতে চেয়েছিল। আওয়াইস বলেন, আমার মনে আছে ইসরোর একজনের সঙ্গে কথা হয়েছিল। আমরা একটি উৎক্ষেপণ বুক করার চেষ্টা করছিলাম এবং তারা বলেছিল, দেখুন, ভারতীয়ের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য আমাদের কোনও ব্যবস্থা নেই। কিন্তু আপনি যদি একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান হতেন, তাহলে সেটা সম্ভব হত। এমন অবস্থায় আমরা কাজ শুরু করেছিলাম।
পিক্সেলকে তার প্রথম দুটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য মার্কিন রকেট ফার্ম স্পেসএক্স নিয়োগ করতে হয়েছিল। পিক্সেল বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৭১ মিলিয়ন অর্থ সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে গুগল থেকে ৩৬ মিলিয়ন রয়েছে, যা পরের বছর আরও ছয়টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সুযোগ তৈরি করবে। স্টার্টআপটি হাইপারস্পেকট্রাল ইমেজ দেওয়ার জন্য একটি মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা, ন্যাশনাল রিকনেসেন্স অফিসের সঙ্গে একটি চুক্তিও সম্পাদন করেছে।
ফ্রান্সের জাতীয় বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রের ভারতীয় মহাকাশ খাতের বিশেষজ্ঞ ইসাবেল সোর্বেস-ভারজার বলেছেন, ২০২০ সালে এই খাত শুরুর আগে সমস্ত ভারতীয় মহাকাশ কার্যক্রম ইসরোর তত্ত্বাবধানে ছিল, ইসরো সবকিছু পরিচালনা করত। ২০২২ সালে ইসরোর বাজেট ছিল ১.৯ বিলিয়ন ডলার, যা চীনা মহাকাশ কর্মসূচির চেয়ে ছয়গুণ ছোট।
সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও ভারতের মহাকাশ প্রোগ্রামটি বিশাল অগ্রগতি অর্জন করেছে, আগস্ট মাসে চাঁদের অনাবিষ্কৃত দক্ষিণ মেরুতে একটি রোভারের সফল অবতরণ সম্ভব হয়েছে। দেশটি এই মাসের শুরুতে সূর্যের দিকে একটি অনুসন্ধানী প্রোব পাঠিয়েছে, আগামী বছর পৃথিবীর কক্ষপথে তিন দিনের ক্রু মিশন পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইসরোর নীতিগত সংস্কারের আগে বেসরকারি সংস্থাগুলো শুধুমাত্র সংস্থার সরবরাহকারী হিসাবে কাজ করতে পারত। গত এপ্রিলে ইসরোর এই সংস্কার একটি নতুন মহাকাশ নীতি উন্মোচন করে যা ‘মহাকাশ অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের বৃহত্তর অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করবে। ভারত বলেছে, ৩৮৬ বিলিয়ন বৈশ্বিক মহাকাশ অর্থনীতির এই খাতে ভারতের অংশগ্রহণ মাত্র দুই শতাংশ। ২০৩০ সালের মধ্যে এটি নয় শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০৪০ সালের মধ্যে বাজারটি দাঁড়াবে ১ ট্রিলিয়ন ডলার।
কিউটিভি/আয়শা/০১ অক্টোবর ২০২৩,/সন্ধ্যা ৭:৫৪