বায়তুল্লাহ অভিমুখে হজের এই সফর হলো ইবাদত ও আমলের সফর। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্যলাভের সফর। এই সফরে বিভিন্ন করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় যেমন আছে, তেমনি বিশেষ স্থানে বিশেষ আমলের অপরিহার্যতাও রয়েছে। উপরন্তু আছে গভীর রুহানিয়ত ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্যের বিষয়। তাই আল্লাহ তাআলা তাঁর যে বান্দাকে তাঁর ঘরে যাওয়ার তাওফিক দান করেছেন, তার অবশ্যকর্তব্য হলো এই ইবাদতের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। এ ক্ষেত্রে জাগতিক ও দুনিয়াবি প্রস্তুতির চেয়ে বেশি প্রয়োজন রুহানি ও ইলমি প্রস্তুতি।

ডেসক্ নিউজ : অল্প কিছুদিন পরই শুরু হচ্ছে হাজিদের হজযাত্রা। যাঁরা হজে যাওয়ার ইচ্ছা করেছেন, তাঁদের এখন থেকেই হজের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। কারণ হজের সফর হচ্ছে একটি ঈমানি সফর, একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের সফর। অন্য যেকোনো সফরের চেয়ে এই সফর ভিন্ন ও স্বতন্ত্র বলে এর প্রস্তুতির ধরনও ভিন্ন হয়। তাই এখানে হাজিদের শারীরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি রুহানি ও ইলমি তথা আত্মিক ও জ্ঞানের প্রস্তুতিও গ্রহণ করতে হবে। হজ যেন সঠিক ও সুন্দর হয়, শরিয়তের বিধানমতো সহিহ ও বিশুদ্ধ হয়, তার জন্য এখন থেকে অবশ্যই সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
হজ ও ওমরাহ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ ও উমরা পরিপূর্ণরূপে পালন করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৬)
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, হজ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করা। যে ব্যক্তির ওপর হজ হয়েছে, তার জন্য হজ করা যেমন জরুরি, অনুরূপভাবে তার জন্য হজের আহকাম ও মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা করাও ফরজ ও জরুরি। হজের বিভিন্ন প্রকার যেমন আছে, তেমনি বিভিন্ন হুকুম-আহকামও আছে। হজের কিছু বিধান ফরজ, কিছু বিধান ওয়াজিব ও সুন্নত। হজ যেন কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক হয়, তার জন্য এসব বিষয় জানা ও যথাযথ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করাও অপরিহার্য। অন্যথায় হজ কবুল হওয়ার আশা করা কঠিন। তাই যারা হজে যাবেন, তাদের উচিত, হজ বিষয়ক নির্ভরযোগ্য বই পড়ে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ আলেমদের থেকে এ বিষয়ে বিধি-বিধান জানা ও এ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করা।
চতুর্থ বিষয় হলো, হজের আগে ও হজ থেকে প্রত্যাবর্তন করার পর সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করা। কারণ হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল, সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসবে, যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫২১, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৫০)
সাধারণত হজের সফরে অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক বিষয়ের সম্মুখীন হতে হয়। সফরের সঙ্গী-সাথিদের পক্ষ থেকে কিংবা এজেন্সি বা কাফেলার লোকদের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম কিছু দেখলে সফরের সময় মানুষের মধ্যে ক্রোধের সৃষ্টি হয়। তখনই ঝগড়া-বিবাদ, গালাগাল-অশ্লীল কথাবার্তা ও অন্যায় আচার-আচরণগুলো পরিলক্ষিত হয়। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সহনশীলতার সঙ্গে এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা তো ভালোভাবে জানেন, হজের সফরে এ রকম কিছু সংঘটিত হবে। তাই তিনি পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘হজের নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস আছে। যে ব্যক্তি সেসব মাসে (ইহরাম বেঁধে) নিজের ওপর হজ অবধারিত করে নেয়, সে হজের সময় কোনো অশ্লীল কথা বলবে না, কোনো গুনাহ করবে না এবং ঝগড়াও নয়। তোমরা যা কিছু সৎকর্ম করবে আল্লাহ তা জানেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৭)
হজ মানুষের জীবনকে গুনাহমুক্ত করে একটি পবিত্র জীবন দান করে। তাই হজের পরে আগের সব মন্দ অভ্যাস, পাপকর্ম ও অন্যায়-অনাচার বর্জন করে নতুন জীবন গড়তে ও আলোকিত সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। যদি এই মানসিকতা সৃষ্টি হয়, তবে বুঝতে হবে হজের এই সফর আল্লাহর কাছে গৃহীত হয়েছে।
মহান আল্লাহ আমাদের মকবুল হজ নসিব করুন।
কিউটিভি/আয়শা/১৫ মে ২০২৩,/সন্ধ্যা ৬:২৪