
খোরশেদ আলম : ‘৯০ এর ডাকসুর এক বীরসেনানী
—————————————————————
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খোরশেদ ভাই আমার এক বছরের সিনিয়র ছিলেন। ৮০ এর দশকে স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে একজন নিবেদিত ছাত্রনেতা খোরশেদ আলমকে ঘিরে অনেক গর্বিত কাহিনী তৈরী হয়ে আছে।
এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সহ সমগ্র ঢাকা শহরে ছাত্রদলের মিছিল মিটিঙে স্লোগান মাস্টারদের অন্যতম ছিলেন খোরশেদ আলম। গোলগাল,ফর্সা, মাঝারি গড়নের এই মানুষটির কণ্ঠ থেকে স্লোগান উদ্গীরিত হত আগুনের স্ফুলিঙ্গ নিয়ে। ছন্দময় তালে তালে তার স্লোগান মিছিলকারীদের রক্তে আগুন ধরিয়ে দিত।
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পরিশ্রমী, ত্যাগী, নিবেদিত দলীয় নেতাকর্মীদের খুব পছন্দ করতেন। বিশেষ করে যারা সন্ত্রাস, গ্ৰুপিং এর সাথে জড়িত ছিলনা তাদেরকে বিশেষ স্নেহ করতেন বেগম জিয়া। খোরশেদ আলম ছিলেন এই শ্রেণীর একজন নিবেদিত ছাত্রদল কর্মী। বেগম খালেদা জিয়ার সম্মুখ সভায় খোরশেদ আলমের স্লোগান জনসভাকে পূর্ণতা দান করত।
৯০ এর ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়নের শেষ মুহূর্তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্যানেল ঘোষণা করলেন আমান -খোকন-আলম পরিষদ। কিন্তু সমগ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের প্রত্যাশিত প্যানেল ছিল দুদু-রিপন- রানা শিকদার পরিষদ। আমান -খোকন-আলম পরিষদে খোরশেদ আলম ছাত্রদলের প্যানেল থেকে সদস্য প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন লাভ করেন।
বিক্ষুব্ধ ক্যাম্পাসে তখন আমান -খোকন-আলম পরিষদের প্রার্থীরা আসতে পারেনা। এরমধ্যে রেজিস্টার বিল্ডিঙের সামনে মল চত্বরে বিক্ষুব্ধ কয়েকজন ছাত্রদল নেতাকর্মীর সামনে পড়ে যায় খোরশেদ আলম। একজন ক্ষুর বের করেছে। খোরশেদ আলমকে ক্ষুরের পোচ দিবে। কিন্তু হাসতে হাসতে খোরশেদ আলম ক্ষুরওয়ালাকে বলেছিল, কাটা রাইফেল, পিস্তল, সাবমেশিন গান থাকলে বের করো। ক্ষুর টুর দিয়ে আমারে ভয় দেখাইও না। আমি অতর্কিতে ওখানে পৌঁছে খোরশেদ আলম ভাইকে নিরাপদে শাহবাগে পৌঁছে দেই।
পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়ার অনড় অবস্থান মেনে নিয়ে আমান -খোকন-আলম পরিষদকে ডাকসুতে নিরংকুশ ভাবে জিতিয়ে আনে ছাত্রদলের সেই সকল নেতাকর্মীই। অতঃপর খোরশেদ আলম ডাকসুতে সদস্য হিসাবে জয়লাভ করে।
বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এখন বড় প্রয়োজন খোরশেদ আলমদের। রাজনীতিতে যাদের কমিটমেন্ট আছে খোরশেদ আলম সেই দলেরই একজন। দলের প্রতি অসীম আনুগত্য, মেধা, শ্রম আর ত্যাগের মিশেল সৃষ্টি করতে চাইলে খোরশেদ আলমদের নিজ দলে যথাযথ দায়িত্ব প্রদান এখন অপরিহার্য। খোরশেদ আলমরা মূল্যায়িত হলে দল হবে বেগবান। জাতি খুঁজে পাবে তার আসল গন্তব্য।
পোস্টদাতা ও লেখকঃ লুৎফর রহমান। তাঁর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে পোস্টটি সংগৃহিত। তিনি রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট।
বিপুল/২৪.০৫.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/ দুপুর ১২.২১