বাদল আহাম্মদ খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : ঢাকার মতিঝিল এলাকায় জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন বিজয় ঋষি। করোনায় তার কপাল পুড়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গ্রামের বাড়ি কামারগাঁওয়ে ফিরে জমি বর্গা নেন। আশায় ছিলেন ভালো কিছুর। কিন্তু বিধিবাম। মেদির হাওড়ে থাকা সেই ১৫ কানি দানি জমি তলিয়ে গেছে বানের পানিতে। বিজয়ের চিন্তা এখন ধারদেনা নিয়ে। কথায় তার বেশ চিন্তার ছাপ। রূপন দাসের সংসার চলে মাছ ধরে আর জমির ফসল বিক্রির টাকায়। একমাত্র ছেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে পড়ার সুযোগ পাওয়ায় বাড়তি খরচের চিন্তা। তবে ধানের ফলন ভালো হওয়ায় বেশ আশায় ছিলেন। তবে সেই আশায় গুড়েবালি। কাটার আগ মুহুর্তে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তার কথা স্ত্রীকে বলতে গিয়ে চোখ ছলছল করছিলো রূপনের।

বিজয় আর রূপনের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার দুই হাজারেরর বেশি কৃষকের স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। উপজেলার মেদির হাওর, আকাশি হাওর, আটাউড়ি বিল, বালিয়া বিলসহ বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমির মাঠ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সরকারি হিসেব মতে, ৩৫০ হেক্টর ধানের জমি তরিয়ে গেছে। তবে কৃষকরা বলছেন, হাজার হেক্টর জমি এখন পানির নিচে। গত দু’দিনের ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়। হওর পাড়ের কৃষক জিলু চৌধুরী জানান, তার পরিবারের ৭০ কানি ধানি ফসলি জমি এখন পানির নিচে। কৃষি বিভাগ ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করছে শুনলেও তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি।
নাসিরনগর সদরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আজদু মিয়া জানান, তার জমিও পানির নিচে। তার এলাকার অনেকের জমির উপর দিয়ে এখন নৌকা যায়। অনেক কৃষক একমাত্র ফসল ধান হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ তারেক জানান, তারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা প্রণয়ন কাজ শুরু করছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সহায়তা নিয়ে দুই হাজার ৫০ জন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান শাওন জানান, হাওর পাড়ে মাইকিং করে কৃষককে ৮০ ভাগ পরিপক্ক ধান কেটে আনার জন্য বলা হয়েছে। কৃষি বিভাগের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদেরকে সরকারি প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হবে।
কিউটিভি/আয়শা/২২শে এপ্রিল, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সকাল ১১:৫২