ব্রেকিং নিউজ
চিলমারীতে বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ : অব্যহতি দুই বিক্ষোভকারীকে কুড়িগ্রামে সেনাবাহিনী’র মাদক বিরোধী অভিযানে ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজাসহ আটক ১ ঢাবি’র জহুরুল হক হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন পুনর্গঠন : সদস্য সচিব নিয়ে বিতর্ক রাস্তায় অভিনেতা সিদ্দিককে মারধরের ভিডিও ভাইরাল ইন্টারপোলের মাধ্যমে হাসিনার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারির সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঢাবি দর্শন বিভাগের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত ঢাবি দর্শন বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ১৪তম পুনর্মিলনী ও কমিটি গঠিত হয়েছে সাইদ সোহরাব ও শেখ মো. নাসিম এর নেতৃত্বে ঢাবি মুহসীন হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন গঠন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিসপ্লে-তে ভেসে উঠেলো ‘ছাত্রলীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে’ কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, যুবদল নেতার মৃত্যু

আমার মা : দেখা হবেনা আর চক্ষু মেলিয়া

admin | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২২ - ০৫:৩০:৩৪ পিএম

চৈত্র মাসে মা মারা গেলেন। পাতা ঝরিয়ে ফাগুন এল। আমের গাছ গুলো ভরে গেল মুকুলে মুকুলে। কালবৈশাখী ঝড়ও আসে। এক নিমিষেই আকাশ ঘনকালো রূপ নিয়ে বিজলি চমকায়। আমি ভয় পাই। বজ্রপাতের বিকট শব্দে কানে আঙ্গুল চেপে ধরি। দৌড়ে ঘরে ঢুকি, বিছানায় লাফ দিয়ে উঠি আর ভাবি এই বার আমার মা ফিরে আসবে। গেল বছর এমন দিনে, মেঘ বৃষ্টি ঝড়ের দিনে মা আমাকে আঁচলের নিচে ঢেকে রেখেছিল। খুব মনে পড়ে আমার।

কালো মেঘ কেটে যায়। ঝড় থেমে যায়। মেঘ বৃস্টি বিজলি থামে। আমি বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নেমে পড়ি। মা’ত আজও আসলোনা। মনটা বেদনায় ভরে যায়। বুক ফাটা কান্না আসে। এমন ঝড়ের দিনেও মা আসলোনা ? আমার খুব অভিমান হয়। আমার খুব রাগ উঠে। আমি দৌড়ে যাই হাটির পাড়। আমাদের মসজিদ সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠকে আমরা হাটিরপাড় বলি। হাটিরপাড়ে আমার মা শুয়ে আছে।

শেষ বিকেলের এই ঝড়ে অনেক গুটি আম পরে আছে। আমার নজর সেদিকে নেই। আমি দৌড়ে মা এর কবরের কাছে যাই। কই আমার মা? মা’কে যেখানে শুইয়ে দিয়ে পরিপাটি করে মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে সেখানে আবছা বৃষ্টিতে কি সুন্দর ভাবেইনা মাটি মসৃন ভাবে সমান হয়ে গেছে। আমি কবরের দিকে তাকিয়ে থাকি। দেখি মা উঠে আসে কিনা ? না মা আসেনা। আমি শুধু কবরের বুকে পুঁতে দেয়া খেজুরের ডালটার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি। মা’কে কবর দেয়ার সময় খেজুর পাতা গুলো কি সবুজ ছিল। এখন রোদে পুড়ে হলুদাভ হয়েছে। আমি মন খারাপ করে আমার মা এর কাছ থেকে ফিরে আসি। কেউ দেখে ফেলবে, এই লজ্জায় কলাতি আমের গাছের গোড়ায় নিজেকে আড়াল করে ফুফিয়ে কাদি।

মাগরিবের আজান দেয়। আমি উদাসী মন নিয়ে বাড়ি ফিরি। ঝোপঝাড়ে ঝিঝি পোকা ডাকে। আমি ঘরে ঢুকি। হটাৎ মনে হয় ঝড়ে পড়া গুটি আম আনা হয়নি। মাকেও দেখতে পেলাম না। আম ও আনা হলোনা। মনটা আরো খারাপ হয়ে যায়।

সন্ধ্যায় শুয়ে থাকি বিছানায়। রান্নাঘরে ভাবীরা রান্না করছে। রাতের খাওয়ার অপেক্ষায় আমি শুয়ে শুয়ে বড় ভাইয়ের পড়া শুনি। অনর্গল একটি করে বাক্য পড়ছে সে। পা মাথা দুলিয়ে সুর করে ওর মুখস্থ পড়া শুনতে ভালোই লাগে। আমি ভাইকে বলি, দাদা আমিও পড়ব। ভাই আমার হাতে একটি ছবিওয়ালা বই তুলে দেয়। আমি পড়তে পারিনা, আমি শুধু ছবি দেখি।

ছবিতে একটা স্কুল ঘর। স্কুল ঘরের সামনে পতাকা পত পত করে উঠছে। একটা ছেলে আর মেয়ে স্কুলের দিকে যাচ্ছে। দূর থেকে ছেলে মেয়ের দিকে মা তাকিয়ে দেখছে তাদের স্কুল যাওয়া। আমি বই বন্ধ করে বিছানায় ওপাশ হয়ে শুয়ে ছবির মা এর কথা ভাবি। আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।

দিন যায় রাত যায়। আমার দিনগুলো এমনি পাড় হয়ে যায়। সারাদিন ছুটাছুটি, খেলাধুলা, দৌড় ঝাঁপ গোল্লাছুটে আমি ভুলে থাকি আমার মা’কে।সন্ধ্যা হলেই রাজ্যের শূন্যতা আমাকে গ্রাস করে। হাহাকার করা এই শূন্যতা আমাকে নীরবে কাদায়। কখনো খেয়ে কখনো না খেয়ে আমি ভর সন্ধ্যাতে ঘুমিয়ে পড়ি।

রাতে নয়টা দশটার দিকে আমাকে ডেকে তোলা হয়। আমি ঘুমের ঘোরেই ভাত খাই। মাছের কাঁটা আটকে গেলে আমি ডুকরে কাঁদি। আমার সে কান্না আর থামেনা। মেজ ভাই আমাকে আঙিনায় নিয়ে যায়। দূর্বাঘাসের উপর দুই ভাই বসি। আমাদের বাড়ি থেকে অনতিদূরেই রেল স্টেশন। কয়লার ইঞ্জিনের বিকট হুইসেল বাজলে মেজো ভাই আমাকে বলে, কাঁদিস না, ট্রেনে করে বড় ভাই আসবে। ভাই আসবে, এই আশায় আমি কান্না থামাই। চুপ করে যাই। কিন্তু বড়ভাই ও আসেনা। আমার ভিতরে এক বুনো ষাড় গর্জন করে উঠে। আমার মা ও আসেনা, আমার ভাইও আসেনা।

একদিন রাতে ঘুম ভেঙে দেখি বাড়ী গম গম করছে। আমার মেজ ভাই, আমার ছোট ভাই কি নিয়ে যেন কাড়াকাড়ি করছে। চোখ কচলে দেখি আমার বড় ভাই এসেছে। কলেজে নাকি আর প্রফেসারী করবে না। আমার ভাই ব্যাংকে চাকুরী পেয়েছে। বড় ভাই আমার জন্যে অনেক কিছু এনেছে। চকোলেট, বিস্কুট, সৌদি খেজুর, আর ছবিওয়ালা বই। অ আ বই হাতে নিয়ে দেখি, মলাট অনেক মোটা।

পরের দিন ভাই আমাকে নিয়ে ভাবীর বাড়িতে গেলেন। সাইকেলের হ্যান্ডেল আর সিটের মাঝে লম্বা রডে কাপড় বেঁধে দেয়া হয়েছে। আমি সেই বানানো সিটে বসে ভাবীর বাড়ি যাচ্ছি। বড়ভাই শা শা করে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। কাঁচামাটির মেঠোপথে ঝাকি খেতে খেতে আমরা ভাবীদের বাড়িতে পৌছুলাম। ভাবি আমাকে পেয়ে পরম আদরে হাতটি টেনে ধরল।

দু একদিন যেতে না যেতেই আমার আর কিছু ভাল লাগেনা। বাড়ি যেতে মন চায়। ভাইকে বললাম, চল আমরা বাড়ি যাই। ভাই বলে দু একদিন পরে যাই। আমি বাড়ি যাওয়ার জন্যে কাঁদি। ভাই বলে বাড়িতে মা নেই, মা’ত মরে গেছে। আমাদের মা’ত এখন কবরে। আমি কেঁদে বলি, আমি মা’র কবরই দেখব। আমার বড় ভাই মুখ ঘুরিয়ে চোখ মুছে।

লেখকঃ লুৎফর রহমান। লেখক, কলামিস্ট, রাজনীতিবিদ।

 

 

বিপুল/১৭ই এপ্রিল, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ |বিকাল ৫:২৭

▎সর্বশেষ

ad