ব্রেকিং নিউজ
চিলমারীতে বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ : অব্যহতি দুই বিক্ষোভকারীকে কুড়িগ্রামে সেনাবাহিনী’র মাদক বিরোধী অভিযানে ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজাসহ আটক ১ ঢাবি’র জহুরুল হক হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন পুনর্গঠন : সদস্য সচিব নিয়ে বিতর্ক রাস্তায় অভিনেতা সিদ্দিককে মারধরের ভিডিও ভাইরাল ইন্টারপোলের মাধ্যমে হাসিনার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারির সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঢাবি দর্শন বিভাগের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত ঢাবি দর্শন বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ১৪তম পুনর্মিলনী ও কমিটি গঠিত হয়েছে সাইদ সোহরাব ও শেখ মো. নাসিম এর নেতৃত্বে ঢাবি মুহসীন হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন গঠন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিসপ্লে-তে ভেসে উঠেলো ‘ছাত্রলীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে’ কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, যুবদল নেতার মৃত্যু

বাংলাদেশ, রবীন্দ্রনাথ ও সাগর সেন : আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে— (অগ্নিঝরা মার্চ পর্ব-১)

admin | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২২ - ০২:২০:১০ পিএম

বাংলাদেশের জন্ম ১৯৭১ সালে, কিন্তু “আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে” গানটির রচয়িতা রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয় ১৯৪১ সালে। তাহলে গানটির প্রকৃত রচয়িতা কি অন্য কেউ নাকি ১৯৭১ সালের আগেই বাংলাদেশ নামটির জন্ম হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের কলমের ডগায় ? আসলেই এই গানের কথা লিখে গেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর যিনি সকল বাঙালির কর্ণ কুহরে ভরাট গলার আওয়াজে পৌঁছে দিয়েছেন এই গানের কথাগুলো, আজ তাঁকে নিয়েই লিখব।

৮০ এর দশকে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী ছাত্রআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এর মাঝে ২১শে ফেব্রুয়ারী আসে শহীদ দিবস নিয়ে, ২৬শে মার্চ আসে স্বাধীনতা দিবস নিয়ে, ১৬ ডিসেম্বর আসে বিজয় দিবস নিয়ে। বিশেষ বিশেষ এই দিনগুলোতে হল গুলোতে মাইকে বাজানো হয় দেশাত্ববোধক গান। এমনি এক আগুনঝরা ফাগুন দিনে বিশেষ দিবসে হলের মাইকে ভরাট গলায় শুনতে পেলাম –

আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি
তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী!
ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে!
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে॥

বাঙালি জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর গান। বিগত শতকের গোড়ার দিকে পঙ্কজ কুমার মল্লিক রবীন্দ্রসঙ্গীতকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবার যে গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, পরবর্তী প্রজন্মের বিভিন্ন শিল্পীরা বিভিন্ন সময়ে সেই দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন, পঙ্কজ-প্রবর্তিত পথেই হেটেছেন তাঁরা নিজের যোগ্যতায় এবং আপন ভঙ্গিমায়। এবং এইভাবেই রবীন্দ্রগান হয়ে উঠেছে বাংলার প্রতিটি ঘরের সুখ-দুঃখের নিত্যসঙ্গী। সকাল-সাঁঝে কাজের মাঝে অনেকেই নিজ নিজ প্রিয় শিল্পীর কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত কানে ঢেলে নিতে চান। আবার অনেক সময় বেতার বা বর্তমান যুগের নিত্যসঙ্গী মুঠোফোনের মাধ্যমে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় ঠিক কানে চলে আসে বিভিন্ন গান, রবীন্দ্রসঙ্গীতও।

এইভাবেই একদিন কী যেন এক কাজের মাঝে কানে এল মার্জিত শ্রুতিমধুর কণ্ঠে গীত একটি গান – ‘তুমি এ-পার ও-পার করো কে গো ওগো খেয়ার নেয়ে?’ ইতিপূর্বে গানটির সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না একেবারেই। খানিকটা হয়তো সেই কণ্ঠের আকর্ষণেই কান পেতে ভালো করে শুনতে থাকি অপূর্ব সেই গান। ‘কালো জলের কলকলে আঁখি আমার ছলচলে/ও পার হতে সোনার আভা পরান ফেলে ছেয়ে।/দেখি তোমার মুখে কথাটি নাই ওগো খেয়ার নেয়ে–/কী যে তোমার চোখে লেখা আছে দেখি যে সব চেয়ে…’ – এই অংশটুকু শুনে মনটা হঠাৎ যেন হু হু করে উঠল। গানের ভেতর দিয়েও কারুর চোখে অমন করে তাকানো যায়?

প্রয়াণের আটত্রিশ বছর পরও এইভাবেই আকৃষ্ট করতে পারেন তিনি। বিমুগ্ধ শ্রোতারা আজও অবাক হয়ে শোনেন তাঁর কণ্ঠ। তিনি বাংলা সঙ্গীত জগতের এক বিস্ময়কর প্রতিভা সাগর সেন। আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি, তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী! গানটি এমন ভাবে কে গেয়েছেন, খুঁজতে গিয়েই জানতে পারলাম এটি সাগর সেন গেয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরীতে শুরু হল আমার অপারেশন ”সার্চ দ্য সাগর সেন”।

‘সাগরের মৃত্যু নেই, সে অমর’, সাগর সেনের অকাল প্রয়াণে লিখেছিলেন সুচিত্রা মিত্র। রবীন্দ্র সংগীতের আরেক কালজয়ী শিল্পীর লেখায় বিস্ময়করভাবে আবিষ্কার করলাম সাগর সেনকে।

পূর্বতন পূর্ববঙ্গের ফরিদপুর জেলার প্রখ্যাত জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করেন বিজনবিহারী সেন ও নয়নমঞ্জরী সেনের কনিষ্ঠ পুত্র সাগর সেন। তবে তাঁর জন্ম হয়েছিল কলকাতায় ১৯৩২ সালের ১৫ মে। স্থানান্তরের পরবর্তীতেও দেশের বাড়িতে বহুদিন ধরে তাঁর যাতায়াত ছিল অব্যাহত। অনেকেরই ধারণা তাঁর জন্ম বরানগরে মামারবাড়িতে। কিন্তু তা সঠিক নয়। শৈশবকাল বাংলাদেশে কাটলেও তাঁর প্রায় আড়াই দশকের সঙ্গীতজীবন কেটেছে কলকাতাতেই।

ছোটোবেলা থেকেই তিনি ছিলেন প্রকৃতিদত্ত কণ্ঠের অধিকারী। সেই কণ্ঠকেই ধীরে ধীরে পরিশীলিত, পরিমার্জিত করে তুলেছিলেন তিনি নিজের চেষ্টায় ও দক্ষতায়। সেই অর্থে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গান শেখেননি কারুর কাছেই। তা সত্ত্বেও আশ্চর্যভাবে অদৃষ্টের বিধানেই হয়তো সঙ্গীতই ছিল তাঁর সারাজীবনের মূল সঙ্গী, আমাদের কাছে তা পরম সৌভাগ্য। তীর্থপতি ইন্সটিটিউশনে স্কুল শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করেছিলেন সুরেন্দ্রনাথ কলেজে। এরপরে পাবলিক ফাংশনের মাধ্যমে শ্রোতাদের সামনে উপস্থিত হওয়া এবং ১৯৫৮ সালে প্রথম বেতারে সঙ্গীত পরিবেশন। এইভাবেই তাঁর সঙ্গীতজীবনের সূত্রপাত ঘটে।

(চলবে)

লেখকঃ লুৎফর রহমান। রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট।

১০ই মার্চ, ২০২২ | ২৫ ফাল্গুন, ১৪২৮ | দুপুর ২.১০

 

▎সর্বশেষ

ad