ফিরে দেখা ২১: সংস্কৃতি অঙ্গনে যাদের হারালাম

admin | আপডেট: ০২ জানুয়ারী ২০২২ - ০৫:৪৪:৫৯ পিএম

বিনোদন ডেস্ক : করোনাভাইরাসের কারণে পৃথিবীতে বিষাদের বছর হিসেবে ইতিহাসে থেকে যাবে ২০২০ সাল। যার রেশ ছিল ২০২১ সালেও। এই বছরেও কোভিড কেড়ে নিয়েছে দেশের অনেক গুণীজনকে। এছাড়া স্বাভাবিক মৃত্যুতেও অনেক গুণীজন আমাদের ছেড়ে গেছেন এ বছর।  

গেল বছর আমরা যেসব গুণী মানুষকে হারিয়েছি-

এ টি এম শামসুজ্জামান

দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে ২১-এর সবচেয়ে বড় ক্ষতি এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যু। ৮০ বছরের জীবনকে কতখানি বর্ণিল আর অর্থবহ করে তোলা যায়, তার অনন্য দৃষ্টান্ত ছিলেন তিনি। অভিনেতা, লেখক, পরিচালক নানা ভূমিকায় মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একুশে পদকসহ বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছিলেন তিনি। পরিপাকতন্ত্রের জটিলতায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন বরেণ্য এই অভিনেতা।  

কবরী

ঢাকাই সিনেমার মিষ্টি মেয়ে ছিলেন তিনি। কিংবদন্তি অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। হয়েছিলেন একাধিক প্রজন্মের আদর্শ। সেই কবরী চলে গেলেন এ বছরের ১৭ এপ্রিল। মহামারি করোনাভাইরাস কেড়ে নিয়েছে তার প্রাণ। সিনেমার মানুষের চোখ ভাসল অশ্রুতে, হৃদয় কাঁদল হাহাকারে। 

কবরী নামে সুপরিচিত হলেও তার আসল নাম মিনা পাল। ষাটের দশকে সিনেমায় অভিষেক। এরপর লম্বা এক পথচলা। অসংখ্য কালজয়ী সিনেমায় অভিনয়। দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছিলেন তিনি। রাজনীতিতেও ছিল তার বিচরণ। সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০০৮ সাল থেকে।

ফকির আলমগীর

এ বছরের ২৩ জুলাই থেমে যায় প্রতিবাদের বিপ্লবী কন্ঠস্বর। দেশের গণসংগীতে যিনি অসামান্য অবদান রেখেছিলেন, সেই ফকির আলমগীর। মৃত্যুর কারণ সেই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। ৭১ বছরের জীবনে তিনি নিজেকে এক মহান শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের এই কণ্ঠসৈনিক ১৯৯৯ সালে পেয়েছিলেন একুশে পদক।

মিতা হক

রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী হিসেবে তার ছিল অসামান্য খ্যাতি। সংগীতানুরাগীদের কাছে মিতা হক নামটি অতিপরিচিত ছিল। করোনার থাবায় ভর্তি হন হাসপাতালে। এরপর সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও জীবনের পথ আর দীর্ঘ হয়নি। হার্ট অ্যাটাকে গত ১১ এপ্রিল মারা যান গুণী এই শিল্পী। প্রায় ২০০টি রবীন্দ্রসংগীত কণ্ঠে ধারণ করা মিতা হক ২০২০ সালে একুশে পদকে ভূষিত হয়েছিলেন।

ওয়াসিম

ফোক ফ্যান্টাসি ঘরানার সিনেমায় ওয়াসিম ছিলেন অনন্য। সত্তর ও আশির দশকে দারুণ জনপ্রিয়তা ছিল তার। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ এপ্রিল মারা যান তিনি। ৭১ বছরের জীবনে তিনি দেড় শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন।

কায়েস চৌধুরী 

২১ অক্টোরব ৬৪ বছর বয়সে মারা যান কায়েস চৌধুরী। দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন এই অভিনেতা, নাট্যকার ও পরিচালক।

ড. ইনামুল হক

দেশের অভিনয় জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র ড. ইনামুল হক মারা যান গত ১১ অক্টোবর। পেশাগত জীবনে ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক। এর বাইরে তিনি অভিনয়ে ছড়িয়ে গেছেন অপার মুগ্ধতা। মঞ্চ নাটক, টিভি নাটক ও সিনেমায় তার সাবলীল অভিনয় এখনো দর্শকের চোখে ভাসে। এছাড়া লেখক হিসেবেও তিনি সুনাম কুড়িয়েছিলেন। নাট্যকলায় অবদানের জন্য ২০১২ সালে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হয়েছিলেন খ্যাতিমান এ অভিনেতা।

জানে আলম

জানে আলমের একটি গান খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। গানটি হচ্ছে ‘একটি গন্ধমেরও লাগিয়া’। এ ছাড়া, আরও অসংখ্য গান করে মানুষের মন জয় করে নিয়েছিলেন শিল্পী হিসেবে। গত ২ মার্চ তিনি পৃথিবীর মায়া ছেড়ে বিদায় নেন।

রাবেয়া খাতুন

চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি একুশে পদক বিজয়ী বাংলাদেশি লেখিকা রাবেয়া খাতুন মারা যান। বাধ্যর্কজনিত রোগে ভুগে বনানীতে নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। 

কর্মজীবনে রাবেয়া খাতুন রচিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জনপ্রিয় উপন্যাস ‘মেঘের পর মেঘ’ অবলম্বনে বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র। ২০১১ সালে তার আরেকটি উপন্যাস ‘মধুমতি’ অবলম্বনে পরিচালক শাহজাহান চৌধুরী একই শিরোনামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। লেখালেখির পাশাপাশি রাবেয়া খাতুন শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতা করেছেন।

শাহীন আলম

চলতি বছরের ৮ মার্চ মারা যান চলচ্চিত্র অভিনেতা শাহীনূর আলম শাহীন (শাহীন আলম)।  কিডনির জটিলতা ও ডায়াবেটিসে ভুগে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে অভিনয়ে হাতেখড়ির পর ১৯৮৬ সালের এফডিসির নতুন মুখের সন্ধানে চলচ্চিত্রে ডাক পান। ১৯৯১ সালে তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘মায়ের কান্না’। প্রায় দেড়শ সিনেমাতে অভিনয় করা শাহীন আলম শেষজীবনে কাপড়ের ব্যবসার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন।

ইন্দ্র মোহন রাজবংশী

ইন্দ্রমোহন রাজবংশী ৭ এপ্রিল ২০২১ মার যান। তিনি একজন বাংলাদেশী লোকগানের শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী, জারি, সারি, মুর্শিদি ইত্যাদি গাইতেন। পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীও ছিলেন।

মাহমুদ সাজ্জাদ

শো-বিজের সদা হাস্যোজ্বল, মিষ্টভাষী মানুষ ছিলেন মাহমুদ সাজ্জাদ। তার দক্ষ অভিনয় সমৃদ্ধ করেছে নাট্যাঙ্গন। কলেজ জীবন থেকে মঞ্চনাটকে যুক্ত হন তিনি। এরপর টিভি নাটকে জনপ্রিয়তার সঙ্গে কাজ করে গেছেন দীর্ঘদিন। গত ২৪ অক্টোবর মৃত্যুর কাছে নিজেকে সঁপে দেন তিনি।

এস এম মহসীন

একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা এস এম মহসীন প্রাণ হারিয়েছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার অভিনীত শেষ সিনেমা ‘অন্তরাত্মা’।

আশা চৌধুরী

ছোটপর্দার অভিনেত্রী আশা চৌধুরী না ফেরার দেশে চলে গেছেন ৪ জানুয়ারি। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার। ৪ জানুয়ারি মধ্যরাতে মিরপুরের দারুস সালাম এলাকায় ট্রাক চাপায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। আশা বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন। নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতেন।

এছাড়াও ‘ঢাকা ৮৬’ খ্যাত চলচ্চিত্রকার শফিকুর রহমান, ‘দেবদাস’ সিনেমার প্রযোজক কামরুল, বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আনোয়ারার স্বামী মহিতুল ইসলাম, অভিনেতা শামীম ভিস্তি, নৃত্য পরিচালক সুমন রহমান, কাইয়ুম চৌধুরীর স্ত্রী শিল্পী তাহেরা চৌধুরী, সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ, নাট্যপরিচালক ও অভিনেতা কায়েস চৌধুরী এ বছর পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।

কিউটিভি/অনিমা/২রা জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৫:৪৪

▎সর্বশেষ

ad