
ডেস্ক নিউজ : মাওলানা নোমান বিল্লাহ
হজরত সোলাইমান (আ.) বিলকিসের সাম্রাজ্যের কথা জানতেন না। তিনি তার গোয়েন্দা পাখি হুদহুদের মাধ্যমে জানতে পারেন, কারো আনুগত্য স্বীকার না করেই বিলকিস বিস্তীর্ণ একটি অঞ্চল শাসন করছেন। তিনি তাকে আত্মসমর্পণের আহ্বান করলেন। কোরআনের সুরা নমলের ২৪টি আয়াতে আল্লাহ ঘটনাটি বর্ণনা করা হয়েছে।
একবার হুদহুদ পাখিকে পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন হুদহুদ আসলো এবং সোলাইমান (আ.)-কে বলল, ‘আমি এমন সব তথ্য এনেছি, যা আপনার জানা নেই আর সাবা থেকে সঠিক খবর নিয়ে এসেছি। আমি এক নারীকে দেখলাম সে জাতির ওপর রাজত্ব করছে। তাকে সবই দেয়া হয়েছে ও তার আছে এক বিরাট সিংহাসন।’
‘আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম, তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে। শয়তান ওদের কাছে ওদের কাজকর্ম সৌন্দর্যময় করে তুলেছে ও ওদের সৎ পথ থেকে দূরে রেখেছে যেন ওরা সৎ পথ না পায় এবং যিনি আকাশ ও পৃথিবীর গোপন বিষয়কে প্রকাশ করেন, যিনি জানেন যা তোমরা গোপন কর ও যা তোমরা প্রকাশ কর, সেই আল্লাহকে যেন ওরা সিজদা না করে। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনিই মহা আরশের অধিপতি।’
জবাবে সোলাইমান (আ.) বললেন, ‘আমি দেখব, তুমি সত্য বলছ না মিথ্যা বলছ? তুমি আমার এ চিঠি নিয়ে যাও। এবং তাদের কাছে দিয়ে এসো। তারপর তাদের কাছ থেকে সরে পড়ো ও দেখো তারা কী উত্তর দেয়।’সাবা সাম্রাজ্যের রানি বিলকিস বললেন, ‘হে পারিষদবর্গ, আমাকে এক সম্মানিত পত্র দেয়া হয়েছে। যা সোলাইমানের কাছ থেকে এসেছে। আর তাতে লেখা আছে, “করুণাময়, পরম দয়াময় আল্লাহর নামে। অহংকার করে আমাকে অমান্য করো না, আনুগত্য স্বীকার করে আমার কাছে উপস্থিত হও”।’
এরপর বিলকিস বললেন, ‘পারিষদবর্গ, আমার এ সমস্যায় তোমাদের পরামর্শ দাও, আমি যা করি তা তো তোমাদের উপস্থিতিতেই করি।’ ওরা বলল, ‘আমরা তো শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা; তবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আপনার, কী নির্দেশ দেবেন, তা আপনিই দেখুন।’
বিলকিস বললেন, ‘রাজা-বাদশাহরা যখন কোনো জনপদে প্রবেশ করে, তখন তাকে বিপর্যস্ত করে দেয় ও সেখানকার মর্যাদাবান ব্যক্তিদের অপদস্থ করে; এরাও তা-ই করবে। আমি তার কাছে উপঢৌকন পাঠাচ্ছি। দেখি, দূতেরা কী উত্তর আনে।’
দূত সোলাইমান (আ.)-এর কাছে এলে তিনি বললেন, ‘তোমরা কি আমাকে ধনসম্পদ দিয়ে সাহায্য করতে চাও? আল্লাহ তোমাদের যা দিয়েছেন তার চেয়ে উত্তম জিনিস দিয়েছেন আমাকে, অথচ তোমরা তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে উৎফুল্ল বোধ করছ।… তোমরা ওদের কাছে ফিরে যাও, আমি অবশ্যই ওদের বিরুদ্ধে এমন এক সৈন্যবাহিনী নিয়ে উপস্থিত হব, যা রুখবার শক্তি ওদের নেই। আমি ওদেরকে সেখান থেকে অপমান করে বের করে দেব ও ওদেরকে দলিত করব।’
সোলাইমান তার কাছে থাকা মানুষ, জিন ও অন্যান্য প্রাণীদের নিয়ে গঠিত পরিষদকে বললেন, ‘হে আমার পারিষদবর্গ, তারা আমার কাছে আত্মসমর্পণ করতে আসার পূর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমাকে এনে দেবে?’
এক শক্তিশালী জিন বলল, ‘আপনি আপনার স্থান থেকে ওঠার আগেই আমি তা এনে দেব। এ ব্যাপারে আমি এমন শক্তি রাখি। আর আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।’ কিতাবের জ্ঞান যার ছিল সে বলল, ‘আপনি চোখের পলক ফেলার আগেই আমি তা এনে দেব।’
সোলাইমান (আ.) যখন তা সামনে রাখা দেখল, তখন বলল, এ আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন, আমি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তা নিজের জন্য করে, আর যে অকৃতজ্ঞ সে জেনে রাখুক যে আমার প্রতিপালকের অভাব নেই, তিনি মহানুভব।’
নিজের সিংহাসন সোলাইমান (আ.)-এর দরবারে দেখে বিলকিস অবাক হবেন এবং ক্ষমতা দেখে তাকে নবী হিসেবে মেনে নিয়ে আনুগত্য করবেন। তাই তাকে পরীক্ষা করার জন্য সোলাইমান (আ.) কিছু নির্দেশনা দিলেন। বললেন, তার সিংহাসনের ধরন পাল্টে দাও। এরপর দেখি, সে সত্য পথের দিশা পায়, নাকি যারা পথের দিশা পায় না তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়।
রানি বিলকিস আত্মসমর্পণের জন্যই এলেন। তাকে সিংহাসনটি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘এটা কি আপনার সিংহাসন?’ তিনি বললেন, ‘তাই তো মনে হয়। আমরা আত্মসমর্পণ করতেই এসেছি।’ রানি বিলকিসকে প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানিয়ে সোলাইমান (আ.) বললেন, ‘প্রাসাদে প্রবেশ করুন।’
প্রাসাদের মেঝে দেখে তিনি ভাবলেন সেটি স্বচ্ছ পানির হ্রদ। বিভ্রান্ত হয়ে পানি থেকে বাঁচানোর জন্য তিনি পায়ের গোছা থেকে কাপড় উঁচু করেন। সোলাইমান (আ.) বললেন, ‘এটা স্বচ্ছ কাচের প্রাসাদ।’
রানি বিলকিস এসব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গিয়ে সোলাইমান (আ.)-এর অলৌকিক ক্ষমতা উপলব্ধি করলেন। তিনি আত্মসমর্পণ করলেন। বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমি অবশ্যই নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আমি সোলাইমানের সঙ্গে বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করছি।’
এর পরবর্তী ঘটনাবলি, যা বিভিন্ন তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে যেমন সোলাইমান (আ.)-এর সঙ্গে রানি বিলকিসের বিবাহ হয়েছিল। সোলাইমান (আ.) তার রাজত্ব বহাল রেখে ইয়ামনে পাঠিয়ে দেন। প্রতি মাসে সোলাইমান (আ.) একবার করে সেখানে যেতেন ও তিনদিন করে থাকতেন। তিনি সেখানে বিলকিসের জন্য তিনটি নজিরবিহীন প্রাসাদ নির্মাণ করে দেন ইত্যাদি সব তথ্য ধারণা প্রসূত। যার কোনো বিশুদ্ধ ভিত্তি নেই।
জনৈক ব্যক্তি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উতবাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘সোলাইমান (আ.)-এর সঙ্গে রানি বিলকিসের বিয়ে হয়েছিল কি? জবাবে তিনি বলেন, বিলকিসের বক্তব্য ‘আমি সোলাইমানের সাথে বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহর নিকটে আত্মসমর্পণ করলাম’ এ পর্যন্তই শেষ হয়ে গেছে। কোরআন এর পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চুপ রয়েছে। অতএব আমাদের এ বিষয়ে খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন নেই (তাফসীর বাগাভী)।
কিউটিভি/আয়শা/২০ অক্টোবর ২০২৪,/রাত ৮:৩৩






