মশিউর রহমান, আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি : ঢাকার আশুলিয়ার শিমুলিয়া-জিরানী আঞ্চলিক সড়কের শিমুলিয়া বাজার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে সরকারি রাস্তা দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক আওয়ামী পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারি রাস্তা দখল করে দোকানপাট থেকে প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পরিবারটি।
এলাকাবাসির পক্ষ থেকে বাবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি সরকারী সড়কের উপরে স্থাপিত অবৈধ স্থাপনা অপসারণের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদনও করেছেন। এছাড়া সম্প্রতি তিনি সহকারী কমিশনার ভূমি আশুলিয়া সার্কেলও আবেদন করেছেন।এরপরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিমুলিয়া বাজার থেকে শিমুলিয়া শ্যামা প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের আগের কালভার্ট পর্যন্ত এবং শিমুলিয়া বাজার থেকে নতুন বন্দর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত সরকারি রাস্তার উভয় পাশেই রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক দোকানপাট।
দোকানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘স’ মিল, মুদি দোকান, চায়ের দোকান, কাপড়ের দোকান, মিষ্টির কার্টুনের দোকান, রড সিমেন্টের দোকান, টেইলার্স ও ফ্ল্যাক্সিলোডসহ নানা ধরণের দোকানপাট। এছাড়াও বিভিন্ন মনিহারিসহ দোকানপাট রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক। এসব কারণে রাস্তাটি সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে এবং ভ্যান-রিকশা, অটোরিকশা সহ কোন যানবাহন রাস্তার পাশে রাখা যায়না। যার ফলে যানবাহনগুলো ঝটলা বেঁধে থাকে সবসময়। জরুরী কোন রোগী থাকলে তাকে নেয়া দুস্কর হয়ে পড়ে।
শিমুলিয়া বাজারের বিভিন্ন লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিমুলিয়া বাজার থেকে শিমুলিয়া শ্যামা প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের আগের কালভার্ট পর্যন্ত রাস্তার আরএস দাগ নং ১৩৫০, বিআরএস দাগ ৮৪১৪ এবং শিমুলিয়া বাজার থেকে নতুন বন্দর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত আরএস দাগ ১৮২৭, বিআরএস ৮৪২১ নং দাগের রাস্তার উভয় পাশ দখল করে বিভিন্ন দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে।
সরকারী এ রাস্তা দখল করে শিমুলিয়া তীর্থঘাট এলাকার মৃত হামেদ আলীর ছেলে ইয়ার হোসেন, সাইদুর রহমান মাষ্টার, তার ছেলে ইউনয়ন যুবলীগের যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসন, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ফরহাদ হোসেনগং সহ ১০/১২ জন দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা ভাড়া হিসেবে হাতিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়া আবার ইয়ার হোসেন প্রভাব খাটিয়ে ১২০ ফিট লম্বা করে টিন দিয়ে ঘর নির্মাণ করেছেন। আওয়ামী লীগ পরিবারের লোকজন হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারে না। শিমুলিয়া বাজারের সবকিছুই চলে তাদের ইশারায়। প্রতিবাদ করারও সাহসটুকু কেউ পায় না।
এলাকাবাসী আরো জানান, এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন শতশত ছাত্র-ছাত্রী এবং এলাকার হাজার হাজার মানুষজন চলাচল করে। এছাড়া রাস্তাটি দিয়ে যানবাহনও চলাচল করে। স্থানীয় ভুমিদস্যু ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রেকর্ডীয় সরকারী রাস্তাটির উভয় পাশ অবৈধভাবে দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করে নিজেরা ব্যবসা করছে এবং দোকানপাট ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। রাস্তা দখলে নিয়ে দোকানপাট নির্মাণ করে চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। রাস্তাটি দখলমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিমুলিয়া শ্যামা প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, এই রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন শতশত লোকজন, শিক্ষার্থী, পোশাক শ্রমিক, যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু রাস্তা দখল করে উভয় পাশে দোকানপাট করে রাস্তা সংকীর্ণ করে ফেলেছে। ফলে এখান দিয়ে চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। স্থানীয় প্রভাব ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এর আগেই অনেক দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আবারও সরকারি রাস্তা ভরাট করে বিশাল আকৃতির একটি অটোরিকশা রাখার গ্যারেজ তৈরী করছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের এদিকে সুদৃষ্টি কামনা করেন এই শিক্ষক।
স্থানীয় বাবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি জানান, একের পর এক ঘর করে ভাড়া দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। শুধু তাই নয়, ইয়ার হোসেন সরকারি রাস্তা ভরাট করে টিন সেডের বিশাল একটি ঘর নির্মাণ করছেন। এসব বিষয় বিবেচনা করে এরই মধ্যে এলাকাবাসির পক্ষে তিনি ঢাকা জেলা প্রশাসক এবং আশুলিয়া এসিল্যান্ড বরাবরে আবেদনও করেছেন। সেই সাথে এলাকাবসী রাস্তা উদ্ধারের গণসাক্ষরও প্রদান করেছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এব্যাপারে আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহ মো: জুবায়ের জানান, ঘরগুলো অনেক আগের তোলা। এরপরেও বিষয়টি যেহেতু আপনার মাধ্যমে জানলাম। খোঁজ নিয়ে দেখবো।
কিউটিভি/আয়শা/১০ অক্টোবর ২০২৪,/সন্ধ্যা ৬:৩৩