ব্রেকিং নিউজ
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপিকে নিয়ে পাহাড়সম অভিযোগঃ ১০ মাসেও হয়নি কাউন্সিল সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : শিক্ষক,লেখক-সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতিম্যান একজনের বিদায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে উপকৃত হবেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক- ভিসি ড.আমানুল্লাহ ফেরদৌস বাজে ব্যাটিংয়ে ফাইনাল মিস বাংলাদেশের জনস হপকিন্সের সাথে কাজ করবে বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  মজিদা কলেজে ৪০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ, তোলপাড় কুড়িগ্রাম খারুয়ার পাড়ে ভাঙ্গনের শব্দ থেমে যাক — বদরুদ্দীন উমর : শিরদাঁড়া বাঁকা করে বাঁকা হয়নি যার কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহবায়ক ভারতীয় নাগরিক, এনআইডি বাতিলে হাইকোর্টের রুল আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে সন্ত্রাসী হামলা : এইচআর হেডসহ আহত ১৫

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে কোন দল কী চাইলো?

Ayesha Siddika | আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৪ - ০৪:২০:২০ পিএম

ডেস্ক নিউজ : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে রাষ্ট্র সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। মূলত এই সংস্কার কমিশনগুলোকে রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে, সেটি নিয়ে সংলাপে মতামত চাওয়া হয়। একই সঙ্গে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দলগুলোর কাছ থেকে মতামতও নেয়া হয়।

শনিবার (৫ অক্টোবর) প্রথম দিনের সংলাপে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি ছাড়াও তিনটি আলাদা রাজনৈতিক জোটের সাথে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। এই বৈঠকের মতামত নিয়ে সংস্কার কমিশন কাজ শুরু করবে বলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে আগেই জানানো হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে কোন দল কী প্রস্তাব দিলো?

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন এবং সে জন্য একটি রোডম্যাপসহ বেশ কিছু দাবি তুলে ধরে বিএনপি। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন স্থগিত করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এজন্য আমরা একটা রোডম্যাপ দিতে বলেছি।’


নির্বাচন সংস্কার কমিটিতে কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে না রাখা, জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল, দেশের সব ইউনিয়নের নির্বাচিত পরিষদ বিলুপ্ত করার দাবিও জানায় দলটি। 
বিএনপি মহাসচিব জানান, তারা শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়া দশম সংসদ থেকে শুরু করে সব জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা সিইসি ও কমিশনারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে রায় দেয়ায় সাবেক বিচারপতি খায়রুল হককেও বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর দাবি জানানো হয়েছে।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যারা দোসর হয়ে কাজ করেছে, লুটপাট, অত্যাচার ও গুম খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের অনেকেই এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। তাদেরকে অবিলম্বে সরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছি আমরা।’
শেখ হাসিনা ভারতে থেকে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছেন দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ বিষয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি।’

পার্বত্য চট্টগ্রামে যে ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে সে বিষয়ে আরো গভীরভাবে দেখে কারা এ ঘটনাগুলোর সাথে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা বলেছি। সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রী ও আমলারা কীভাবে দেশের বাইরে পালিয়ে গেলেন সেটি নিয়েও সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে বিএনপি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর দলের আমীর ডা. শফিকুর রহমান জানান, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দুটি রোডম্যাপের পাশাপাশি কিছু মৌলিক বিষয়ে সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। কী কী সংস্কার প্রয়োজন সেগুলো আগামী ৯ অক্টোবর জাতির সামনে তা তুলে ধরবে দলটি।


জামায়াতের আমীর বলেন, ‘আমরা আমাদের চিন্তা জাতির সামনে তুলে ধরব কী কী সংস্কার এই মুহূর্তে প্রয়োজন, কী কী সংস্কার পরবর্তী পর্যায়ে আমাদের লাগবে।’
আমরা শুরু থেকে বলে আসছিলাম, সংস্কারের জন্য সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। সেই যৌক্তিক সময়টা কী হবে? এটা নিয়ে অচিরেই আমরা কাজ করব। 

No description available.
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনি দলের বৈঠক। ছবি: সংগৃহীত

দেশের চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে জামায়াত নেতা বলেন, ‘দেশের বর্তমান অবস্থায় জনগণ আর সরকার একসাথে কীভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো উন্নতি করতে পারে এবং সকল ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’


তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ দৃষ্টি থেকে দেশকে একটা ভাল জায়গায় নিয়ে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সক্ষম হবেন। এক্ষেত্রে এটাও আমরা আশা করছি যে এই সময়টা নাতিদীর্ঘ হবে।’

দুর্গাপূজায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার জন্য করণীয় কী হবে তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

গণঅধিকার পরিষদ (নুর)

গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর সংলাপের পর সংবাদমাধ্যমকে জানান, জাতীয় সংসদের মেয়াদ এক বছর কমিয়ে চার বছর নির্ধারণ করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি দ্বিকক্ষ-বিশিষ্ট সংসদের দাবিও জানিয়েছে। এ সময় রাষ্ট্র সংস্কারে ১২ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন তিনি।


দফাগুলো হলো-
১. অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের পরিকল্পনা ও রোডম্যাপ প্রকাশ করা।
২. যেহেতু সংবিধান ও রাষ্ট্র সংস্কার অভ্যুত্থানের একটি মৌলিক ধারণা এবং এই সময়ের অপরিহার্য বিষয় হয়ে উঠেছে, তাই গণহত্যায় জড়িত পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসরদের বিচার এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৩. সরকারের কাজের সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে আলোচনার মাধ্যমে দক্ষ, কর্মঠ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের পরিসর বাড়ানো।
৪. শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের আমলে দুর্নীতি, লুটপাট করে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া মাফিয়া, অর্থপাচারকারী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গত ১৫ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
৫. সরকারি বিভিন্ন দফতরে গত ১৫ বছরে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত দলবাজ, দুর্নীতিবাজদের অপসারণের পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সরকারি-আধা সরকারি চাকরিতে মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগের সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরি ও নিয়োগ কমিশন গঠন করে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সব নিয়োগ দেয়া।
৬. রদবদলের নামে ডিসি-এসপিসহ পুলিশ ও প্রশাসনে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া।
৭. যুগের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মমুখী ও গবেষণানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নে নতুন শিক্ষা কমিশন গঠন।
৮. দুদক পুনর্গঠন করে উপযুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে শক্তিশালী করা।
৯. যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধাসহ ইউরোপ ও অন্যান্য দেশে গার্মেন্টস ও পণ্য রফতানির সুযোগ সৃষ্টিসহ নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান করে জি টু জি পদ্ধতিতে বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানো।
১০. সিটিজেন চার্টার করে দ্রুত সব ধরনের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা।
১১. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও সংসদের মেয়াদ চার বছর করা।
১২. যেসব বাংলাদেশের দূতাবাস নেই, সেখানে দূতাবাস সেবা দেয়া ও আগামী নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।

গণঅধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া)

গণঅধিকার পরিষদের একাংশের উপদেষ্টা ড. রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়। এতে ৮ দফা প্রস্তাব দেন তারা।

৮ দফা প্রস্তাবনা হলো-

১. আওয়ামী লীগ এখন আর কোনো রাজনৈতিক দলের ক্যাটাগরিতে পড়ে না। এ দল একটি গণহত্যাকারী সংগঠন আর গণহত্যাকারী কোনো সংগঠনের রাজনীতি করার এখতিয়ার বিশ্বের কোথাও নেই। সুতরাং আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে।

২. অন্তর্বর্তী সরকারের পরিসর বাড়িয়ে রাজনৈতিকভাবে অভিজ্ঞ ও দেশ পরিচালনায় দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে ৫০ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিগত ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলো থেকে আনুপাতিকহারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. সবগুলো মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩/৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি পলিসি/পরামর্শক (সংসদীয় স্থায়ী কমিটির আদলে) কমিটি করতে হবে। এসব কমিটির প্রতিটিতে স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলো থেকে প্রস্তাবিত সদস্য ১/২ জন, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং বিষয়ভিত্তিক এক্সপার্ট ১ জন থাকবেন।
৪. জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন-ভিত্তিক অভিযোগ বক্স সৃষ্টি করে জনগণের সমস্যা শনাক্ত করতে হবে, এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৫. আওয়ামী লীগের আমলে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ও পদোন্নতিপ্রাপ্ত অফিসারদের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে এসব পদে দেশ-প্রেমিক ছাত্র-জনতাকে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ দিতে হবে।
৬. রকিব কমিশন, হুদা কমিশন এবং আওয়াল কমিশনের আমলে হওয়া নির্বাচনগুলো বাতিল করতে হবে। এ ৩ কমিশনের আমলে নেয়া সকল সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। একইসঙ্গে আগামী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।
৭. প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে বিদেশি হাইকমিশন/ দূতাবাস/মিশনগুলোতে আলাদা হেল্পডেক্স স্থাপন করতে হবে, যাতে প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে সময়ক্ষেপণ না হয়। একইসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারে একজন প্রবাসীদের মধ্য থেকে উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে হবে।
৮.এরই মধ্যে ৬টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে কিন্তু এ কমিশনগুলোতে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নেয়া হয়নি। প্রতিটি কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্য থেকে ২/৩ জন করে প্রতিনিধি নিতে হবে। একইসঙ্গে গ্রহণযোগ্য প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় শিক্ষা সংস্থার কমিশন দ্রুত গঠন করতে হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

সংলাপ শেষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি রেজাউল করীম বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি। স্বৈরাচার যারা নাকি খুনি, ফ্যাসিস্ট, তারা যেন নির্বাচন করার সুযোগ না পায়, সেটা আমরা বলেছি। আমরা নির্বাচন সংস্কারের কথা বলেছি। তাদের সঙ্গে দেশের কল্যাণের ব্যাপারে কথা বলেছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছরে জাতীয় যে নির্বাচনগুলো হয়েছে সেগুলোর বেশির ভাগই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যে ৬টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন তার সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে আরও ৯টি সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব বিবেচনার জন্য পেশ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সেগুলো হলও-
১. আইন বিষয়ক সংস্কার কমিশন।
২. নাগরিক সেবা বিষয়ক সংস্কার কমিশন।
৩. পররাষ্ট্রবিষয়ক সংস্কার কমিশন।
৪. শিক্ষা বিষয়ক সংস্কার কমিশন।
৫. বাকস্বাধীনতা বিষয়ক সংস্কার কমিশন।
৬. স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশন।
৭. শ্রমজীবী বিষয়ক সংস্কার কমিশন।
৮. সংখ্যালঘু ও নৃ-গোষ্ঠী বিষয়ক সংস্কার কমিশন।
৯. নারী ও শিশু বিষয়ক সংস্কার কমিশন।

আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর এবি পার্টির পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৬ দফা পর্যবেক্ষণ ও ১১ দফা প্রস্তাবনা পেশ করার কথা জানানো হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
এবি পার্টির পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবানাগুলো হলো-
পর্যবেক্ষণ:

১. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ২ মাস পূর্ণ হতে চলেছে। এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা একাধিকবার জাতির উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দিয়েছেন। এতে তিনি সরকারের লক্ষ্য, অভিপ্রায়, অঙ্গীকার ও দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করার পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কার্যক্রমের বিবরণ, অগ্রগতি, প্রতিবন্ধকতা এবং বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার স্বপ্ন ও রূপকল্প তুলে ধরেছেন।

২. গত ২ মাস যাবত নানা প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে সরকারের উপদেষ্টাগণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়সহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে সরকারের কাজে গতিশীলতা এবং সাফল্য পরিলক্ষিত হলেও বেশিরভাগ মন্ত্রণালয়ের কাজ বেশ মন্থর ও দুর্বল বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মাণ হয়েছে।
বিশেষ করে জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের কাজে দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভাব এবং সমন্বয়হীনতার কারণে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিচার-ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক অচলাবস্থার বিষয়টি বেশ হতাশাজনক। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এখনও ফ্যাসিবাদ ও গণহত্যার সহযোগী-প্রতিভূরা বসে আছেন। পুলিশ-বাহিনী অকার্যকর, দুর্বল ও নৈতিক মনোবলহারা। সশস্ত্রবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হলেও মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি।
৩. ফ্যাসিবাদের ভয়ঙ্কর দুঃশাসন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছাত্র-জনতার যে রক্তস্নাত গণঐক্য তৈরি হয়েছিল বর্তমানে সে ঐক্যে কিছুটা ক্ষত ও মৃদু ফাটল পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে দেশব্যাপী পাবলিক ইউনিভার্সিটি, প্রাইভেট ইউনিভার্র্সিটি, সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসাছাত্রদের মধ্যে পূর্বেকার প্রেরণা ও দৃঢ় বন্ধন নেই। রাজনৈতিক দলগুলোও নানা কারণে বাকযুদ্ধে লিপ্ত। সরকারের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয় না থাকার বিষয়টিও এক্ষেত্রে দৃশ্যমান। এসকল কিছুর প্রভাব নাগরিকদের মন ও মননে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
৪. অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, তা নিয়ে স্পষ্ট রূপকল্প এখনও প্রকাশ করা হয়নি। ৬টি কমিশন করার কারণে জনমনে যে আগ্রহ ও উৎসাহ তৈরি হয়েছিল কমিশনের কার্যক্রম শুরু করতে দেরি হওয়ায় তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। ৫. শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন, আহতদের সুচিকিৎসা এবং গণহত্যার নির্দেশ ও মদদদাতাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণে সুসংবদ্ধ পদক্ষেপের অভাব লক্ষণীয়। ৬. সরকারের বৈধতা এবং প্রকৃতি নিয়ে ধোঁয়াশা ক্রমশ জটিল হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে সরকার আইন ও সংবিধান মানার কথা বলছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে আইন-সংবিধান মান্য করার চাইতেও প্রয়োজনকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এতে সরকারের দ্বিমুখিতা প্রকাশ পাচ্ছে ও সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

দাবি, পরামর্শ ও প্রস্তাবনা-
১.  আগামী ২ মাসের মধ্যে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো, পুলিশকে পূর্ণভাবে সক্রিয় করার চেষ্টা করা এবং প্রয়োজনে সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাত্মক সহায়তা নিয়ে দেশের সর্বস্তরে শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনগণের আস্থা সুদৃঢ় করা।
২. জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, আইন ও স্বাস্থ্যসহ যে সকল মন্ত্রণালয়ের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক নয়, সেখানে দায়িত্ব রদবদল বা নতুন উপদেষ্টা নিয়োগের মাধ্যমে কার্যকর গতিশীলতা আনয়ন করা। প্রয়োজনে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে সহকারী উপদেষ্টা নিয়োগ করা।
৩. সংবিধান সংশোধন বা পুনর্লিখনের মাধ্যমে সরকারের বৈধতার সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সরকারের বৈধতার প্রশ্নে আপাতত একটি আইনি প্রতিরক্ষা তৈরি করা, যা অর্ডিন্যান্স জারি করেও করা যেতে পারে। সংবিধান সংশোধন বা প্রণয়নের জন্য একটি কন্সটিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি গঠন করা এবং সংবিধান রচনার পর গণভোটে সেটি পাস করানো।

৪. অবিলম্বে গণতদন্ত কমিশন গঠন করে জুলাই-আগস্টে সংগঠিত সকল নৃশংসতার ঘটনা জাতির সামনে তুলে ধরার ব্যবস্থা করা। প্রতিটি শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনে স্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ। আহত ও পঙ্গু ছাত্র-জনতার চিকিৎসা কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। সিভিল প্রশাসন ও সশস্ত্রবাহিনীর কর্মকর্তা ও সিপাহীদের মধ্যে যাদেরকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাদের বিষয়ে একটি পৃথক কমিশন গঠন করা, যারা নিগ্রহ ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তাদেরকে চাকরিতে ফিরিয়ে আনা বা সম্মানজনক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

৫. ফ্যাসিবাদের দোসর, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগী ব্যক্তি, সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের বিচারের জন্য “মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল” এর পাশাপাশি “ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন” গঠন করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচারক নিয়োগ দিয়ে তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম শুরু করা, বিলম্বের কারণে বহু আসামি পালিয়ে যাচ্ছেন, বহু আলামত নষ্ট হচ্ছে। বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার জন্য আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার করা একান্ত আবশ্যক। পিলখানা ও শাপলা চত্বরের গণহত্যার জন্যও পৃথক বিচার কমিশন গঠন করা।

৬. যে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে- এবি পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজ এরইমধ্যে এ প্রসঙ্গে যেসকল সুপারিশ তুলে ধরেছে, তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা, কমিশনগুলো যাতে নির্ধারিত সময়ে তাদের কার্যক্রম শেষ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে, তার জন্য সকল ধরনের রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা প্রদান করা, ৬টি কমিশনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাত নিয়েও একটি জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করার প্রস্তাব করছি। সেনাবাহিনী, বিমান ও নৌ বাহিনীর সংস্কার প্রক্রিয়ার জন্যও পৃথক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

৭. রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-জনতার ঐক্যকে সুসংহত করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে একটি “শক্তিশালী সমন্বয় টিম” গঠন করে দেয়া যাদের মূল দায়িত্ব হবে অভ্যুত্থানে জড়িত সকল পক্ষের মতামত গ্রহণ ও যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে একটি কার্যকর সমন্বয় সংযোগ গড়ে তোলা। এই সমন্বয় টিম একটি জাতীয় সমঝোতা স্মারক তৈরির লক্ষ্য নিয়েও কাজ করতে পারে।

৮. দ্রব্যমূল্য সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসার জন্য নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু রাখা। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, দুর্নীতি বন্ধ করা, ফুটপাত জনগণের চলাচলের জন্য হকারমুক্ত করা, অসহনীয় যানজট নিরসণসহ প্রাত্যহিক জনভোগান্তি দূর করার জন্য প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও পরিবর্তন-প্রত্যাশী ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক কমিউনিটি মনিটরিং টিম গঠনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৯. ফ্যাসিবাদী সরকার বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে দেশবিরোধী যেসব চুক্তি করেছে তা পর্যালোচনা করা দরকার। দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি করে যারা অবৈধ টাকার পাহাড় গড়েছে এবং বিদেশে টাকা পাচার করে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। দেশে ও বিদেশে তাদের সম্পদ জব্দ করার পদক্ষেপ নিতে হবে।

১০. রাজনৈতিক দল ও সকল সামাজিক পক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে যথাশিগগির সম্ভব সংস্কার এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা। দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে যাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দেয়া যায়, সে লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা ও আন্তরিক প্রচেষ্টা চালানো।  

১১. ছাত্র-জনতার অপরিসীম ত্যাগ, রক্তদান ও জীবনের বিনিময়ে যে স্বপ্ন ও অর্জন তাকে কোনভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সে অনুভূতি ও চ্যালেঞ্জ মনে রেখে কাজ করতে হবে। জনগণের কাছে দায়বদ্ধতার জন্য নিজ নিজ সম্পদের হিসাব দেয়ার যে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করতে হবে। দুই মাস পর পর প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কাজের অগ্রগতি জাতির সম্মুখে তুলে ধরার চেষ্টা করতে হবে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এই সংলাপে বিএনপি, জামায়াত এবং ইসলামী আন্দোলনের সাথে আলাদা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া জোটগতভাবে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ করেন।

গণতন্ত্র মঞ্চের জোটগত দল জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় সন্ধ্যায়। বাম গণতান্ত্রিক জোটভুক্ত দল সিপিবি, বাসদ খালেকুজ্জামান, বাসদ (মার্ক্সবাদী), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টিও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে।

সবশেষে গণ অধিকার পরিষদ ও আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি) সংলাপে অংশ নেয়।
তবে এই বৈঠকে ডাকা হয়নি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক ১৪ দলভুক্ত কোনও রাজনৈতিক দলকে।

 

 

কিউটিভি/আয়শা/০৬ অক্টোবর ২০২৪,/বিকাল ৪:১৯

▎সর্বশেষ

ad